ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘হরিজন’ তুষারের মুক্তিতে ‘ব্রাহ্মণ’ সুস্মিতার মুখে হাসি

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘হরিজন’ তুষারের মুক্তিতে ‘ব্রাহ্মণ’ সুস্মিতার মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি পেলেন  হিন্দু ধর্মের  হরিজন (মেথর) সম্প্রদায়ের ছেলে তুষার দাস। আর তার মুক্তিতে আনন্দে হাসি ফুটছে ব্রাহ্মণ মেয়ে সুস্মিতার মুখে। ভালবেসে বিয়ের জেরে শাশুড়ির দায়ের করা অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় নিম্ন আদালত ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো তুষারকে। এই সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তুষারের স্ত্রী সুম্মিতা দেবনাথ। হাইকোর্ট ১ আগস্ট তুষার দাসকে জামিন দিয়েছেন। একইসাথে নিম্ন আদালতের দেয়া অর্থদণ্ডও স্থগিত করেন আদালত।

বুধবার কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তুষার। স্বামীর মুক্তির পর উচ্ছ্বসিত কন্ঠে সুম্মিতা রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি অনেক খুশি। আমার ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমার সন্তান ওর বাবাকে ফিরে পেয়েছে। আমি ফিরে পেয়েছি আমার স্বামীকে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালত বলেন, আমাদের সমাজে এ রকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যূত হবার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আইন তো ভিন্ন। একদিকে আইন একদিকে বাস্তবতা। আমাদের সমাজে উচু-নিচু জাতের একটা সমস্যা রয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বামী দলিত সম্প্রদায়ের হলে মেয়ের বাবা যদি মেনে নেয় তবে তার পরিবার সমাজচ্যূত হবার ভয়ে থাকে। এ বাস্তবতাও ভাবতে হবে।

তুষার দাসকে নিম্ন আদালতের দেয়া ১৪ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

তুষার ও সুষ্মিতা ভালবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। তিন মাস আগে সুস্মিতার কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু তুষার দাস নিম্ন বর্ণের হওয়ায় শুরু থেকেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুষ্মিতার বাবা-মা। মেয়ে নাবালিকা- এই অভিযোগ তুলে সুষ্মিতার মা ‍তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। সুম্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তার কথা আমলে নেননি নিম্ন আদালত।

গত ২৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন। স্বামীকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতের শ্মরণাপন্ন হন স্ত্রী সুম্মিতা দেবনাথ। ন্যায় বিচার পাবার পর তিনি বলেন, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আইনের মারপ্যাচে আমাদের জীবন বিপন্ন হতে চলেছিলো। অবশেষে মহামান্য আদালত ন্যায় বিচার করেছেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ আগস্ট ২০১৯/মেহেদী/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়