ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুকে তিন তলা থেকে ফেলে হত্যা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুকে তিন তলা থেকে ফেলে হত্যা

ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুই বছরের শিশু আয়েশা মনিকে পরিকল্পিতভাবে তিন তলার বারান্দা থেকে ফেলে হত্যা করে জান্নাতুল ওয়াইশ ওরফে নাহিদ। ধর্ষক নাহিদের মেয়ে ফাতিহা খান বুশরা আদালতে জবানবন্দি দেন তারই  বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি শিশু আয়েশা হত্যা মামলায় জবানবন্দির ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র উপ-পুলিশ পরিদর্শক সাদেকুর রহমান। চার্জশিটে তিনি এমনটাই উল্লেখ করেছেন।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে আয়েশার মা সুলতানা রান্না করার জন্য পাশের বাড়িওয়ালার বাসায় যান। ঘরে তার চার সন্তানকে রেখে যান। সুলতানার বড় মেয়ে ইরা আয়েশা এবং অন্য বোনদের নিয়ে খেলা করছিল। কিছুক্ষণ পরে আয়েশা মনি খাবার খেতে চায়। তখন ইরা ছোট বোন আয়েশাকে নিয়ে তার মায়ের কাছে যায়। তাদের মা পূর্বের রান্না করা খিচুড়ি একটু গরম করে নিয়ে তাদের বাসায় যায়। সেখানে তাদের খিচুড়ি খেতে দিয়ে আবার রান্না ঘরে চলে যায়। আয়েশা মনি বাড়ির উঠানের দিকে বাইরে রাস্তার পাশে মাটিতে বসে খাবার খেতে খেতে খেলা করছিল। এ সময় তার হাতে একটা পুতুল ছিল।

আরো বলা হয়, একপর্যায়ে আয়েশাদের বাসার পাশে অবস্থিত হাবিবের গ্যারেজের কাছে গিয়ে খেলাধুলা করছিল। মাগরিবের নামাজের পূর্বে আসামি নাহিদ তার বিল্ডিং এর নীচ তলার গেইটের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। মাগরিবের নামাজের সময়ে কোন এক ফাঁকে নাহিদ আয়েশাকে গ্যারেজের সামনের রাস্তা থেকে কোলে করে তার বাসার তিন তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। এ সময় বাসায় নাহিদের মেয়ে ফাতিহা খান বুশরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছিল। আয়েশা তার মায়ের কাছে যাবে বলে কান্নাকাটি করা শুরু করলে বুশরা তা শুনতে পায়। পরে বুশরা গিয়ে তার বাবার কাছে জিজ্ঞাসা করে বাচ্চাটি কে? তখন নাহিদ বুশরাকে ধমক দিয়ে বাইরে যেতে বলে। কিছু সময় পর নাহিদ বাচ্চাটিকে নিয়ে বারান্দার দিকে যেতে থাকলে বুশরা তার বাবার পিছু পিছু তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে বারান্দার কোণায় গিয়ে নাহিদ বাচ্চাটিকে কোল থেকে ফেলে দেয়। এ সময় বুশরা তা দেখে ‘না’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

আয়েশার মা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘এই ১৩ ডিসেম্বর আয়েশার তিন বছর হতো। ওইটুকু বাচ্চা কী ই বা বুঝতো। কি অপরাধ ছিল ওর। তাকে এভাবে কেন মেরে ফেললো।’

তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আয়েশার মা আরো বলেন, ‘মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়। ওর (নাহিদ) বিচার দেখে সবাই যেন ভয় পায়। আর কেউ যেন কোন মায়ের কোল এভাবে খালি না করে।’

মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন তিনি।

আয়েশার বাবা মো. ইদ্রিস বলেন, ‘নাহিদ আমার দুধের বাচ্চাটাকে হত্যা করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই, নাহিদের ফাঁসি চাই। মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এ আশা করেন তিনি।’

প্রসঙ্গত, দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চার তলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকত আড়াই বছরের শিশু আয়েশা।  গত ৫ জানুয়ারি বাসায় গ্যাস সংযোগ না থাকায় বিকেলে আয়েশার মা পাশের বাসায় রান্না করতে যান।  তখন আয়েশা রুমেই ছিল। এক পর্যায়ে আয়েশার মা রুমে আসেন। তখন মেয়েকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়েন।  সন্ধ্যার পর আশপাশের মানুষের চেঁচামেচি শুনে ছুটে যান বাসার পাশের গলিতে।  সেখানে গিয়ে দেখেন ময়লার ট্রলির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তার মেয়ে। দ্রুত আয়েশাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিযে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

৭ জানুয়ারি শিশুটির বাবা মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত নাহিদ হোসেন শিশুটিকে ধর্ষণের পর চারতলা বাড়ির তিনতলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মামলা দায়েরের পর নাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে নাহিদ কারাগারেই আছে।

এদিকে নাহিদের মেয়ে ফাতিহা খান বুশরা আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, ‘ঘটনার দিন (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে আমি এবং বাবা বাসায় ছিলাম। বারান্দায় বসে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছিলাম। এমন সময় আব্বুর রুম থেকে একটি বাচ্চার কান্না শুনতে পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি বাচ্চাটা আব্বুর কোলে। বাচ্চাটা কে আব্বুকে জিজ্ঞাসা করলে আব্বু আমাকে ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়। কিছুক্ষণ পর আব্বু বাচ্চাটাকে কোলে করে বারান্দায় যায়। তখন আমি পিছু পিছু যাই এবং আমার সামনেই আব্বু বাচ্চাটাকে বারান্দা থেকে ফেলে দেয়। বাচ্চাটা নীচে পড়ে গেলে অনেক জোরে একটা আওয়াজ হয় এবং আশে-পাশের লোকজন জড়ো হয়। ওই ঘটনার পর আমি রুমে চলে আসি। ওই দিন মাঝ রাতের দিকে আব্বু বাচ্চাটার পায়জামা একটি পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে ভরে বাইরে চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর খালি হাতে বাসায় ফিরে আসে।

 

ঢাকা/মামুন খান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়