ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বালিশকাণ্ডে লুটপাটের যে কাহিনি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বালিশকাণ্ডে লুটপাটের যে কাহিনি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে লুটপাট যা বালিশকাণ্ড হিসেবে এরই মধ্যে আলোচিত।

ওই প্রকল্পে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এরই মধ্যে ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে লুটপাটের এই কাহিনীতে আরো চমক যোগ হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের দুই কর্মকর্তা বাদি হয়ে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছে। চারটি মামলায় পাবনা গণপূর্তের ১১ প্রকৌশলী ও ২ ঠিকাদারসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুততম সময়ের মধ‌্যে এই প্রকল্পের দুর্নীতির অনুসন্ধান, মামলা ও চার্জশিটের ব্যবস্থা করেছি। মামলার অনুমোদন দেওয়ার পর অনুসন্ধানী কর্মকর্তারা প্রয়োজনমতো সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু এই প্রকল্প নয়, দেশের সব মেগা প্রকল্পগুলোর উপর দুদকের নজরদারি রয়েছে।’

রূপপুর বালিশ কাণ্ডের মূল হোতা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমানকে কোনো মামলার আসামি করা হয়নি কেন? এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা হয়তো আগত আসামি সম্পর্কে ধারণা রাখেন। কারো নাম এখনো মামলায় আসেনি বলে যে ভবিষ্যতে আসবে না, এমন নয়।’

অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- পাবনা গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবির, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মোস্তফা কামাল, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্তের এস্টিমেট ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী এবং ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও মজিদ এন্ড সন্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ‘গ্রিন সিটি’র আওতায় ১২৫০ বর্গফুটের ৬ ইউনিটের ২০ তলা ভবনের বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর ৩৪টি সিডিউলে ও আটটি ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে ৮ কোটি ১২ লাখ ৬৯ হাজার নয়শত পঞ্চাশ টাকা আত্মসাত হয়েছে। এই প্রজেক্টে ৯২টি সিডিউলে ঠিকাদারকে বিল বাবদ ২৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫৩ টাকার বিল প্রদান করা হয়। অথচ দুদকের অনুসন্ধানেএসব সামগ্রীর প্রকৃত মূল্য বেরিয়েছে ২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এই মামলায় আসামিরা হলেন, পাবনা গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, প্রকৌশলী (সিভিল) পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী এবং ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

অনুরূপভাবে একই প্রকল্পের আওতায় ৭৫০ বর্গফুটের ছয় ইউনিট বিশিষ্ট ২০ তলা ভবনের ৬৩টি সিভিল ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মধ্যে ২৪টি সিভিল ও আটটি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর অধিক মূল্য দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পে পরিবহন খরচ, লিফটিং খরচ, শ্রমিক মজুরিসহ ইত্যাদি কাজে সাজানো দরপত্র তৈরি করে সাত কোটি ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৭১৬ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। যে অভিযোগে মাসুদুল আলম ও ঠিকাদার শাহাদাত হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। এই দুই মামলার বাদী হয়েছে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

একই প্রকল্পে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে একটি চক্র ৮৫০ বর্গফুটের বিশ তলা ভবন নির্মাণের অধীনে ৭৫টি সিডিউল ও নন সিডিউল আসবাবপত্র এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ৪৩টি আইটেমে বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে সাত কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৬৮ টাকা আত্মসাৎ করে। এই মামলায় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আসামিরা হলেন- সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল কবির আহমেদ সাজ্জাদ খান, মোহাম্মদ তারেক মো. আমিনুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল, মো. শফিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার মোহাম্মদ আসিফ হোসেন।

একইভাবে একই প্রকল্পের অধীন আসবাবপত্র, ভবন নির্মাণ সামগ্রী ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ ৭০টি সামগ্রীর অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে সাত কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার চারশত ৩৮ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক অনুসন্ধানী টিম। যে অভিযোগে ওই ৯ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন মামলা দায়ের করেন। এভাবে মোট চারটি মামলায় ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা ৪৭ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

এরই মধ্যে বালিশকাণ্ডে ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে দুদক। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের নির্দেশনায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


ঢাকা/এম এ রহমান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়