ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘সুষ্ঠু তদন্তে আসামিরা দোষী নয় বরং ভিকটিম হবে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সুষ্ঠু তদন্তে আসামিরা দোষী নয় বরং ভিকটিম হবে’

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কাজ শেষে তিন ভাই অপু, আলী ও ইদ্রিস দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ ছোট ভাই ইদ্রিস বন্ধুর ফোন পেয়ে দোকানের চাবি বড় ভাইদের বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। পাশেই খেলা করছিল বড় ভাইয়ের তিন বছরের ছেলে আরাফাত। এমন সময় ঘটে বিস্ফোরণ, ছড়িয়ে পড়ে আগুন। রাতেই ধ্বংসস্তুপ থেকে একে অপরকে জড়িয়ে থাকা দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে পাঠানোর পর দেখা যায়, দুই ভাইয়ের মরদেহের মাঝে রয়েছে শিশু আরাফাতের মরদেহ।

এমনই অনেক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায় গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে। এতে ৭২ জন নিহত হন। আহত হন আরো অনেক।

সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক বছর হলেও মামলার তদন্তের তেমন অগ্রগতি নেই। কবে নাগাদ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে পারবেন তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মামলাটিতে ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মামলাটিতে জামিনে আছেন।

তাদের আইনজীবী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তারাও ভুক্তভোগী। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত হলে তারা দোষী না বরং ভুক্তভোগী হবেন।’

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত নয় বার সময় নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য ঢাকার অতিরিক্ত মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলাম আগামি ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক কবীর হোসেন বলেন, ৭২ মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত শেষ হয়নি। ৫/৬ জনের বতর্মান বা স্থায়ী কোনো ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না। যে ঠিকানা অনুসন্ধানে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে গিয়ে দেখি তারা সেখানে থাকেন না। সেটি তাদের সঠিক ঠিকানাও নয়। আশপাশের কেউ ঠিকানা দিতেও পারছে না।

তিনি বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো রেডি হয়নি। তবে চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক বলেন, ‘কেউ কি ইচ্ছে করে আগুন লাগাতে চায়? এতে তো আসামিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা সবকিছু হারিয়ে অসহায়, নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারাও ভুক্তভোগী। বাড়িওয়ালা হওয়াটাই অপরাধ হয়েছে তাদের। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলতো। সেই বাড়িটাও নষ্ট হয়ে গেছে। মামলা চালানোর টাকা পর্যন্ত তাদের নেই। তার আম্মাও সেই আগুনে আহত হন। কোনোমতে তারা প্রাণ নিয়ে সেদিন বাড়ি থেকে বের হতে পারেন। আত্মীয়ও মারা গেছে। কিছু নাই তাদের।’

তিনি আরো বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। আসামিরা গত বছর ৮ আগষ্ট হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিনে ছিলেন। জামিন বৃদ্ধির আবেদন করলে ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালত আরো এক বছরের জামিন বৃদ্ধি করেন।’

মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসামিরা দোষী না বরং ভিকটিম হবে বলে জানান এ আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় আসিফ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা তাদের চতুর্থ তলার ফ্যামিলি বাসাগুলো ফ্যামিলি ভাড়া না দিয়ে দাহ্যপদার্থ ক্রয় - বিক্রয়কারীদের নিকট হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ভাড়া দেন। আগুন লেগে মানুষের জীবন এবং জানমাল ধ্বংস হতে পারে জেনেও অবৈধ দাহ্য পদার্থ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেন।

মামলাটিতে গত বছর ২ এপ্রিল সোহেল শহীদ ও হাসান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ৮ এপ্রিল এ দুই আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৬ এপ্রিল রিমান্ড শেষে এ দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত বছর ৮ আগষ্ট হাইকোর্ট থেকে তারা ছয় মাসের জামিন দেন। ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা জামিন বৃদ্ধির আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাদের এক বছর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।

 

ঢাকা/মামুন খান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়