ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকেই, বিপর্যয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ২৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকেই, বিপর্যয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (তিন ফুট দূরত্ব) বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সেই ‘সামাজিক দূরত্ব’ অনেকেই মানছেন না। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছে না। এরফলে করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে ও দুপুরে রাজধানীর রায়ের বাজার পৌর মার্কেট, জিগাতলা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুরের জনতা মার্কেট ও কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতারা ভিড় করে কেনাকাটা করছেন। তাদের মাঝখানে ১০ ইঞ্চি জায়গাও  ফাঁকা নেই। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি। হাতে গ্লাভসও নেই।  দোকানি ও  ক্রেতার মাঝখানেও তেমন দূরত্ব রক্ষা করা হয়নি।  এছাড়া, ক্রেতা-বিক্রেতাকে যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলতে দেখা গেছে।

কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু  কেনাকাটা করতে এসে পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো সেই দূরত্ব রক্ষা করতে পারেন না বলে দাবি করেছেন তারা।

আর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেও তারা কেউ শোনেন না।  

মাস্ক ও গ্লাভস পরা প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, এগুলো পরলে কাজে অসুবিধা হয়। তাই কম ব্যবহার করেন তারা।

ছবি: শাহীন ভূইয়াসকালে শংকর থেকে রায়ের বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন ফাহিম মোরশেদ। তিনি বলেন, ‘তিন ফুট দূরত্বে থাকার বিষয় জানি। তবে, অনেকেই এই নিয়ম মানছেন না। আমি এসে দাঁড়ানোর পর পাশে আরও একজন দাঁড়ালেন। তাকে তো বলতে পারি না, দূরে দাঁড়ান। এভাবে বললে আমাকে শুচিবায়ুগ্রস্ত ভাবতে পারেন।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফরহাদ নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ঘুরে ‍ঘুরে বাজার করতে হচ্ছে। যে পরিমাণ মানুষ বাজারে এসেছে, তাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন।’

জনতা মার্কেটে বাজার করতে আসা গাজিউর রহমান বলেন, ‘বাসার পাশেই মার্কেট। তাই এলাম। কিন্তু জায়গাটা ছোট। এ কারণে ‍তিন ফুট দূরে দূরে অবস্থান করা কঠিন। তারপরও মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করছি, যেন সংক্রমণ না ছড়ায়।’

জিগাতলা কাঁচা বাজারের বিক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, ‘সবাই নিজের পছন্দমতো কিনতে চায়। এজন্য একই সময়ে কয়েকজন পাশাপাশি দাঁড়ান। আমরা কিছু বলতে পারি না।’

রায়ের বাজারে পাশাপাশি দোকানে দুই জনকে বসে থাকা দেখে জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘আমাদের কিছু হবে না।’

মাস্ক, গ্লাভস না থাকার বিষয়ে কয়েকজন বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এগুলো পরলে অস্বস্তি লাগে। এজন্য ব্যবহার করি  না।’

নিয়ম না ও সচেতনতার অভাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো—সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি  রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।  করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট ও সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব  বজায় রাখা জরুরি।’

লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাজারে যেভাবে ভিড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।’

একই অভিমত জানালেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।  না হলে দ্রুত এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। যা পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ  বিপর্যয় ডেকে আনবে।’

এদিকে, জরুরি প্রয়োজনে খোলা রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।     

এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।’ পাশাপাশি সেনা সদস্যরা করোনার বিষয়ে  সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে।  


ঢাকা/নূর/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়