ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনায় বদলে যাচ্ছে ছিনতাইকারী-মলম পার্টির ধরন

আহমদ নূর ও আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় বদলে যাচ্ছে ছিনতাইকারী-মলম পার্টির ধরন

মহামারি করোনার কারণে দেশে গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ বন্ধ। চলছে না গণপরিবহনও। এমনকি সুপার মার্কেট ও বিনোদনকেন্দ্রের মতো প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাব্য স্থানগুলোও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে  অপরাধের পরিমাণ কমে এসেছে বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে, অপরাধ বিশ্লেষক ও স্থানীয়রা বলছেন, অপরাধীরা তাদের কর্মপন্থা-কৌশল পাল্টে ফেলেছে। অপরাধ বিশ্লেষকদের ধারণা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও মলম-পার্টির সদস্যরা এখন মাস্ক-বিক্রেতা সেজে সাধারণ মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিতে পারে। কেউ কেউ সুযোগ পেলে বাসা-বাড়িতে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার-মোবাইলসেট, টিভিসেটসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরিতে তৎপর হয়ে উঠতে পারে।  এই বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পুলিশ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,  এসব ছোটখাটো অপরাধের পরিমাণ কমেছে।  তবে, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় থেকে ভিন্ন ধরনের অপরাধের কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে ফাঁকা জায়গায় তিন-চার জনের জটলা বেঁধে একা কাউকে ফেলে ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। ভোরের দিকে বাসা-বাড়ি থেকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সামগ্রী। মাস্কের ভেতরে চেনতানাশক দিয়ে সর্বস্ব কেড়ে মতো ঘটনাও ঘটছে।

এই প্রসঙ্গে ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা আলী আযম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকালে আমার বাসার দরজা ভেঙে তিনটি মোবাইল, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ চুরি হয়ে যায়। গত ছয় মাস ধরে এই বাসায় আছি। এতদিন বাসার সদর দরজা খোলা রেখে ঘুমালেও কিছু খোয়া যেতো না।’ 

আলী আযম বলেন, ‘চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ থাকায় আমি থানায় গিয়েও অভিযোগ করতে পারছি না। টেলিফোনে থানায় বিষয়টি জানালে  পরবর্তী সময়ে সশরীরে হাজির হয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেয় পুলিশ।’  

এদিকে, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ফটো এডিটর সাহাদাত পারভেজ গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে  ছিনতাইকারীদের কবলে  পড়েন।  এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে কারওয়ানবাজার থেকে মোটরসাইকেলে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে দেখি স্টার কাবাবের সামনে একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়িভাবে দাঁড় করানো ছিল। মানুষের জটলা ছিল। সেখানে ট্রাক চালকের সঙ্গে তর্ক করছিল কয়েকজন যুবক। এজন্য পুরো রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। আমি ফাঁকা জায়গা দেখে বের হতে চাইলে দুজন যুবক গাড়ি থামাতে বলে। একদিকে জনমানবশূন্য এলাকা, অন্য দিকে কোনো পুলিশও নেই। তখন কৌশলে  বের হয়ে আসি।’

আবু ইউসূফ নামে শান্তিনগর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে মোটরসাইকেলে চড়ে বাংলামোটর থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে মগবাজারে আসছিলাম। ফ্লাইওভারের শেষ অংশে সুতা বাঁধা দেখে সেটি খুলে গাড়ি নামাই। এ সময় তিনটি ছেলেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখি। পরে বুঝতে পারলাম, গাড়ি বেশি স্পিডে  এলে দুর্ঘটনায় পড়তাম। আর ছিনতাইয়ের শিকার হতাম।’

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘এই সময়ে অপরাধীরা তাদের অপরাধের ধরন বদলাবে। বিশেষ করে, যারা ছোট অপরাধ করে জীবিকা নির্বাহ করে, অপরাধের ক্ষেত্র পাবে না। ফলে, বিকল্প পথ খুঁজে নেবে।  অর্থাৎ যারা পকেটমার বা অজ্ঞানপার্টির সদস্য ছিল, তারা এখন বাসাবাড়িতে হানা দেবে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই কয়েকদিনে অপরাধ আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। সরকারি ছুটি থাকায় অনেকে গ্রামে চলে গেছে। আর মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে থাকায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা কম।’ তবুও প্রতিটি থানাকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।


ঢাকা/নূর/ইয়ামিন/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়