ঢাকা     শনিবার   ৩১ আগস্ট ২০২৪ ||  ভাদ্র ১৬ ১৪৩১

ঢাবির সব হল কোটা আন্দোলনকারীদের দখলে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ১৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৭, ১৭ জুলাই ২০২৪
ঢাবির সব হল কোটা আন্দোলনকারীদের দখলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব হল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দখলে। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সব হল তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা যায়।

সরেজমিনে জানা যায়, মঙ্গলবার দিনভর ঢাবি এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাতে আন্দোলনকারীরা হলে ফিরে যায়। পরে গভীর রাত থেকে ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত করার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টকে হলটিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লিখিত দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে একে একে ফজলুল হক মুসলিম হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয়। মূলত এর মধ্য দিয়ে হলগুলোর দখল নেয় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, গত ১৫ জুলাই কোটা আন্দোলন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল, এসএম হল এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ পাঁচটি হল কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাসের সব হল নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, হল দখল করার সময়ে কোটা আন্দোলনকারীরা হলের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় হলে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোটা আন্দোলনকারীরা পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণে আছে।

এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এ বিষয়টি হল প্রশাসন নিশ্চিত করবে বলে জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাবি ক্যাম্পাসে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ১০টা থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ভিসির বাসভবনের সামনে এবং কলাভবনের অপরাজেয় বাংলার সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাদের অনেকের হাতেই বাঁশ এবং লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা ছিল।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছাত্ররা বলে, কোটা সংস্কার নিয়ে আমাদের অহিংস আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও তাদের ভাড়া করা গুণ্ডা-টোকাই দিয়ে যে নৃশংস হামলা চালিয়েছে, তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমাদের সতীর্থদের খুন করেছে। এখন ঢাবি প্রশাসন বলছে, হল ছেড়ে দিতে। ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা হল ছাড়বো না। হল ছাড়লে আমাদের এই আন্দোলন, জীবন দেওয়ার কী হবে?

শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগ, তাদের ভাড়াটিয়া গুণ্ডাসহ দায়ী পুলিশের বিচার এবং কোটা সংস্কার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সময় তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘পুলিশ, গো ব্যাক’, ‘বিজিবি, সীমান্তে যাও’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ এমন অসংখ্য স্লোগান দিতে থাকেন।

তারা বলেন, বিজিবি নিজেরা সীমান্ত রক্ষা করতে পারছে না। সীমান্তে একের পর এক লাশ পড়ছে, আর তারা এখানে কেন? দেশের বর্ডার শাহবাগ নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা থাকবো, কোনও পুলিশ বা বিজিবি নয়।

এদিকে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’র ব্যানারে কলাভবনের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাবি শিক্ষকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। সমাবেশ শুরুর পূর্বে শিক্ষকরা কলাভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মৌন মিছিল করে আবার কলাভবনে এসে সমাবেশ শুরু করেন।

ঢাবি শিক্ষকরা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, সহিংসতা আর ছাত্র হত্যা থামান। ছাত্রলীগকে থামান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসুন, ওদের কথা শুনুন। ওরা আমাদেরই সন্তান। ওদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দেবেন না। 

অপরদিকে, শাহবাগ জাদুঘরের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা পড়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ ছাড়া ক্যাম্পাসের কোথাও সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এমএ/এনএইচ

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়