ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সফল মানুষদের ১৬ অভ্যাস (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সফল মানুষদের ১৬ অভ্যাস (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বেশিরভাগ সফলতার সঙ্গে যে বিষয়টি জড়িত তা হলো নিয়মানুবর্তিতা। সফল হতে হলে সঠিক কোনো কাজ বারবার করতে হয়, তা যতই কঠিন হোক না কেন। আপনার সফলতার সহায়ক হতে পারে কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা শরীর চর্চার কথা বলতে পারি। এ অভ্যাসটি উচ্চ সফল মানুষদেরকে প্রাণবন্ত, সৃজনশীল ও মনোযোগী করেছে বলে তারা স্বীকার করেছেন। নিয়মিত শরীর চর্চা নিয়মানুবর্তিতার পথে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় বা অভ্যাসও সঠিক ট্র্যাকে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সফল মানুষদের ১৬ অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* সব ই-মেইল পড়েন
‘আমার ইনবক্সে কোনো ই-মেইলই অপঠিত থাকে না, অনেক বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। এ বিষয়ে আমি চারটি নীতি মেনে চলি। প্রথমত, কোনো মেইল পড়ে এটির উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে করলে যথা দ্রুত সম্ভব উত্তর পাঠিয়ে দিই। দ্বিতীয়ত, যদি মনে করি যে মেইলটি নিয়ে আরো চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিই অথবা প্রেরককে নিশ্চিত করি যে তার বার্তাটি পেয়েছি। তৃতীয়ত, যদি মেইলটি প্রথম ও দ্বিতীয় নীতির সঙ্গে খাপ না খায়, তাহলে আমি কখনো সাড়া দিই না। চতুর্থত, যেসব বিষয়ে আমি আগ্রহী নই সেসব মেইল অটো-ডিলিট প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখি, যাতে আমার সময় নষ্ট না হয়। এসবকিছু আমাকে শীর্ষে থাকতে ও করিৎকর্মা হতে সহায়তা করে।’
- অ্যানান্ট কেল, ফরচুন ১০০০ কোম্পানিতে এক্সপেন্স রিপোর্টস, ইনভয়েচেস ও কন্ট্রাক্টসের এআই-বেসড স্পেন্ড অডিটিং প্রোভাইডার অ্যাপজেনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও

* অপরিচিত মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন
‘যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে রাস্তায় আপনার দিকে এগিয়ে আসা কারো চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি উপহার দেওয়াটা স্বাভাবিক আচরণ, কিন্তু বোস্টন ও সান ফ্রান্সিসকোর অনেক স্থানে এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। আমি নিজেকে পরিবেশের নীতি অনুযায়ী খাপ খাওয়াই। আমি উপলব্ধি করেছি কাউকে কেবলমাত্র শুভ সকাল বলা কিংবা উবারের ড্রাইভারের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা আমাকে অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতিতে উজ্জীবিত করে, যা দিনের অবশিষ্ট সময় আমার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাউকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পরিমাপ আমাকে কাজে পুনরায় মনোযোগ বসাতে এবং আমার মধ্যে যা ঘটছে তাকে প্রাধান্য দিতে সাহায্য করে।’
- হ্যালি ডেইবার, সিড-স্টেজ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম আনইউজুয়্যাল ভেঞ্চার্সে বিনিয়োগকারী

* খুব সকালে কাজ শুরু করেন
‘আমি খুব সকালে আমার দিন শুরু করি, যা আমার পুরো দিনটাকে অধিক ফলপ্রসূ করে তোলে। আমার সাধারণ সকাল এরকম: কফি পান করতে করতে রিপ্লাই করা হয়নি এমন ই-মেইলের উত্তর পাঠাই, লিংকডইনে কোনোকিছু পোস্টের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক করি, নিউজ পড়ি ও সাম্প্রতিক ঘটনা জেনে নিই, ক্যালেন্ডার চেক করি এবং মাথায় রাতে উদয় হওয়া প্রশ্ন নিয়ে ভাবিএরপর আমি কাজের জন্য প্রস্তুত হই। আমার জানা আছে যে খুব সকালে দিন শুরু করা হলো সফলতার একটি মূলমন্ত্র।’
- টম বুইয়োচ্চি, ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি কোম্পানি সার্ভিসচ্যানেলের (যা আন্ডার আর্মার, চিপটল, লুইস ভুইটন, ডিভিএস হেলথ অথবা ইকুইনক্সের মতো ব্র্যান্ডকে সাপোর্ট দেয়) কার্যনির্বাহী পরিচালক ও সিইও

* মিটিং সীমিত করেন ও ব্রিফিংয়ের অনুমতি দেন না
‘আমি আমার সঙ্গে জড়িত মিটিংয়ের সংখ্যা সীমিত করি এবং ব্রিফিং সমর্থন করি না। ব্রিফিংয়ের অনুমতি না দেওয়ার কারণ হলো- এতে ইতোমধ্যে যা বলা হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি থাকে, অসম্পূর্ণ তথ্য থাকে অথবা এমন তথ্য থাকে যা ইতোমধ্যে সবাই জানে। আসন্ন মিটিংয়ের শিডিউল সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিই, যাতে মিটিংটি তর্ক-বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ফলপ্রসূ হয়। মিটিংয়ে কেবলমাত্র শক্তিশালী দিকগুলোর দিকে তাকাই না, খুঁটিনাটি সম্ভাবনাও যাচাই করি। মিটিং সম্পৃক্ত সবকিছুতে ব্যবসায়কে প্রাধান্য দিই।’
- ব্রায়াম মারফি, সাইবার সিকিউরিটি প্রোভাইডার রেলিয়াকোয়েস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও

* সিদ্ধান্ত ক্লান্তি এড়ানোর উপায় মেনে চলেন
‘ডিসিশন ফ্যাটিগ বা সিদ্ধান্ত ক্লান্তি (সিদ্ধান্ত নিতে প্রচুর ভাবনায় দীর্ঘসময় অতিবাহিত করে নিজের অজান্তে খারাপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা, এর কারণ হলো মস্তিষ্কের ক্লান্তিকর অবস্থা) শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে মানুষ বিস্ময়করভাবে ব্যর্থ হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে আমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মিটিংগুলো মধ্যসকালে করি, কারণ এসময় আমি সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকি এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংখ্যা সীমিত করি। আমার রুটিন থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাতিলের চেষ্টা করি, যেন প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি অপশন না থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমি প্রতিদিন কর্মস্থলে যাই নির্দিষ্ট কয়েকটি পথ দিয়ে। আমার প্রিয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হলো বারাক ওবামা, যিনি পরেরদিনের কাপড় রাতেই ঠিক করে নেন এবং তিনি সিদ্ধান্তের সংখ্যা কমাতে আট বছর ধরে শুধুমাত্র নীল ও ধূসর সুট পরেছেন। আপনার সকল শক্তি কাজে ব্যয় করতে চাইলে মস্তিষ্কের সীমিত ক্ষমতাকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যবহার করবেন না।’
- জেরেমি কফম্যান, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম স্কেল ভেঞ্চার পার্টনারসের (যা ডকুসাইন, বক্স ও হাবস্পটের মতো আর্লি-ইন-রেভিনিউ এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে) প্রধান

* নিজের জগৎ ও কোম্পানির বাইরের খবর রাখেন
‘আমার লক্ষ্য হলো প্রতিদিন বাহ্যিক অনুষঙ্গ তৈরি করা। ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আমি এটা করে থাকি। আমার নিজের জগতের বাইরে কি ঘটছে তা বুঝতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় ব্যয় করি। যদি আপনি শুধুমাত্র আপনার কোম্পানি বা ইন্ডাস্ট্রির ওপর ফোকাস করেন, তাহলে জগতের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবেন না, যা আপনার কাজের ওপর প্রভাব ফেলবে। আমি বিভিন্ন নিউজ সোর্স থেকে খবরাখবর জেনে নিই, যেমন- বিবিসি, ওয়ার্ল্ড নিউজ, সিএনবিসি ও এনপিআর। এছাড়া আমাদের টাচপয়েন্টে আসা গ্রাহকদের মতামতকে মূল্যায়ন করি, এর ফলে ব্যবসাকে আরো সমৃদ্ধ করা সম্ভব হয়।’
- ক্রিস্টিন হেকার্ট, লগ ম্যানেজমেন্ট ও অবজারভেবিলিটি কোম্পানি স্কেলিয়ারের সিইও

* পরিবারের সঙ্গে রাতে খাবার খান
‘আমি পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়াকে অগ্রাধিকার দিই। প্রতিরাতে পরিবারের সবাই মুখোমুখি বসি এবং এসময় ইলেক্ট্রনিকসের (যেমন- স্মার্টফোন অথবা টেলিভিশন) ব্যবহার নিষিদ্ধ। কর্মস্থলে যাই ঘটুক না কেন, আমি ঘরে ডিনারটাইম কাটাতে বদ্ধপরিকর ও পরিবারকে সময় দিতে সবসময় ঘরে ফিরি। আমি অনুভব করি যে প্রতিদিন পরিবারকে এক ঘণ্টা সময় দিলে কর্মস্থলে পূর্ণ মনোযোগ সহকারে কাজ করা যায়।’
- কিম টাবাক, ডিজিটাল হেলথ বিনেফিট এক্সপেরিয়েন্স লিগের (যা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শত শত কর্পোরেট গ্রাহকদেরকে সেবা দেয়) চিফ পিপল অফিসার

* রাতে কিচেন কাউন্টারে ফোন রেখে দেন
‘ডিজিটাল কানেকশনের এ যুগে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় আমার মস্তিষ্ককে ফোন থেকে বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন মনে করি। সবসময় ফোনের ব্যবহার অন্যান্য কাজ সম্পাদনের সময় নষ্ট করতে পারে, যেমন- কোনো নতুন ই-মেইল পড়া ও উত্তর দেওয়া, কোনো বিবাদ মীমাংসা করা অথবা কোনো আইডিয়া নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। ডিজিটালি বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে আমি কখনো বেডরুমে ফোন আনি না। জীবন কাজের চেয়েও বেশি কিছু এবং জীবনকে অর্থবহ করতে পরিবারকে সময় দিয়ে থাকি। স্বামীর সঙ্গে কথা বলি, রাতের প্রক্রিয়া করি, পরেরদিনের করণীয় ঠিক করি ও পত্রিকার ক্রসওয়ার্ড পাজল খেলি। সঙ্গে ফোন না থাকলে প্রতিনিয়ত কাজ করার প্রবণতা কমে এবং আমি প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে পারি।’
- লরা গোল্ডবার্গ, গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, টেকনোলজি ও ডাটা প্ল্যাটফর্ম সার্ভিং স্মল বিজনেস ক্যাবেজের চিফ রেভিনিউ অফিসার।

তথ্যসূত্র : আইএনসি

পড়ুন : *
*  

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়