ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সফল হতে যখন যা করবেন (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৩০ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সফল হতে যখন যা করবেন (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : সফল শব্দটি শুনতে যতটা কোমল মনে হয়, আসলে সফলতার পথ ততটা মসৃণ নয়। আজকে যারা সফল, তারা অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সফলতা নামক সোনার হরিণের দেখা পেয়েছেন। আপনিও সফল হতে পারেন, যদি অন্তরে কিছু মন্ত্র পুষে উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার করেন। আপনার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখুন, পিছিয়ে যাবেন না এবং সফলতার মন্ত্রগুলো প্রয়োগ করতে চেষ্টা করুন। নিজের ওপর আস্থা রাখুন- একদিন সফল হবো, হবো, হবো। সফল হওয়ার জন্য ১৪ মন্ত্র নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* যখন বড় স্বপ্ন দেখেন...
যদি আপনি নতুন ব্যবসায় শুরু করেন অথবা নতুন শখে যুক্ত হন, তাহলে ব্যর্থতার ভয় আপনার সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হোন বা বড় স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু ভয় পাবেন না। নিউরোসাইকোলজিস্ট রিক হ্যানসন বলেন, ‘ব্যর্থতার ভয় কাজের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কাজের স্বাভাবিক প্রবাহকে বিঘ্নিত করতে পারে, ফলে সফল হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’ ব্যর্থতার ভয় না থাকলে ঠিকঠাকভাবে কাজ করা যায় এবং মন অস্থির হয় না। কেউই ব্যর্থতা চায় না, কিন্তু মনে ব্যর্থতার ভয় থাকলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। মানসিক চাপ সফলতার অন্তরায় হতে পারে, তাই ভীত না হয়ে আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যান, বাকিটা স্রষ্টার ওপর ছেড়ে দিন।

* যদি কাজ শুরু করতে গড়িমসি করেন...
করণীয় কাজের তালিকা লম্বা হচ্ছে, কিন্তু আপনার গড়িমসি কাটছে না। এভাবে বসে থাকলে কাজের চাপ বা মানসিক চাপ বেড়ে যাবে। আপনাকে প্রথমে এমন কাজ শুরু করতে হবে, যে কাজে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। এ একটি কাজের সূচনাই আপনাকে অন্যান্য কাজ সমাপ্ত করতে সাহায্য করবে, কারণ যার শুরু নেই তার শেষও নেই। কোনো একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছোট-বড় কিংবা সহজ-কঠিন অথবা বিরক্তিকর-স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক অনেক ধরনের কাজ করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনাকে সবচেয়ে বিরক্তিকর বা কঠিন কাজটা আগে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার পছন্দানুযায়ী যে কোনো কাজে হাত দিয়ে গড়িমসির প্রবণতা কাটান। সবচেয়ে ছোট কাজটি দিয়েও যাত্রা শুরু করতে পারেন, কারণ এ কাজের সফলতা আপনাকে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজটি করতেও প্ররোচিত করতে পারে।

* যদি দেরি হওয়ার আশঙ্কা জাগে...
সকল কাজ স্বতঃস্ফূর্ত বা নির্ভুলভাবে করা যায় না। কাজের শুরুতে বা মাঝপথে বা শেষের দিকে কোনো ভুল হতেও পারে- এ ভুলে আপনার মনে শঙ্কা জাগতে পারে যে নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ হবে তো? এ ধরনের দুশ্চিন্তা মানসিক চাপ উচ্চ করে কাজের গতি আরো ধীর করে দেয়, তাই আপনার মনকে আশ্বস্ত করতে হবে যে দেরি হলে তেমন কিছু যায় আসে না, কাজটি করতে পারলেই হলো। এ ধরনের ভাবনা আপনাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। মনের মধ্যে অস্থিরতা না থাকলে কঠিন কাজও সহজে ও কম সময়ে শেষ করা যায়, শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে যে আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করেছেন। সারকথা হলো, দেরি হওয়ার আশঙ্কায় অস্থির হওয়া যাবে না- ঠান্ডা মাথা অসাধ্য সাধন করতে পারে।

* যখন আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়...
সফলতা পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো আত্মবিশ্বাস। সবসময় অন্যের পরামর্শ নিয়ে চলা সফলতার অন্তরায় হতে পারে এবং এটি সফলদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যেও পড়ে না। আপনাকে নিজে নিজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে নিজেকে বলুন- বস হও। দেখবেন যে সত্যি সত্যি একদিন বস হয়ে গেছেন। আপনি সফল হবেন কি হবেন না তা আপনার আত্মবিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপনিই আপনার সফল হওয়ার যাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

* যখন ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে...
রুটিন আমাদেরকে স্বাভাবিকত্বের সেন্স দেয় এবং এটি আমাদেরকে ঝুঁকি নেওয়া ও নতুন কিছু করা থেকে বিরত রাখে। কিন্তু আমাদের কমফোর্ট জোনের বাইরে পদার্পণ ব্যক্তিগত ও পেশাগত সুযোগ বা অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে। নতুন নতুন খাবার খান। নতুন প্রকল্পে নিজেকে জড়ান, যেখানে পূর্বে জড়িত ছিলেন না। নতুন নতুন লোকের সঙ্গে পরিচিত হোন। এর ফলে বিস্ময়কর বা ইতিবাচক কত কি যে ঘটতে পারে তা আপনার ধারণারও বাইরে।

* কাজে ভুল হলে...
নিঃসন্দেহে প্রত্যেকেই সঠিকভাবে কাজ করতে চায়, কিন্তু তারপরও ভুল হয়ে যেতে পারে। দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ভুলের মাত্রা কমায়, কিন্তু এটি এ গ্যারান্টি দিতে পারে না যে ভুল হবেই না। যতই দক্ষ হোন কিংবা সতর্ক থাকুন না কেন, কখনো কখনো ভুল হতে পারে। কিন্তু তাই বলে হতাশায় নুয়ে পড়বেন না, এর পরিবর্তে যতটুকু কাজ সঠিকভাবে করেছেন বা যতটুকু সফলতা অর্জন করেছেন তার জন্য নিজেকে প্রশংসা করুন অথবা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন যে ভুল মানেই সম্পূর্ণ পরাজয় নয়, এ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। হতাশার মাত্রা কমাতে ভুলকে জীবনের অনিয়ন্ত্রণযোগ্য নিয়তি মনে করতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে ভুল এড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে ভুলবেন না। তারপরও ভুল হতেই পারে, যেহেতু আপনি মানুষ।

* যখন মেজাজ উন্নয়নের প্রয়োজন পড়ে...
আপনি যা হতে চেয়েছেন তা নাও হতে পারেন অথবা আপনার প্রত্যাশা পূরণ নাও হতে পারে। এটা ঠিক যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ক্যারিয়ারকে নিয়ে যেতে না পারলে হতাশা কাজ করে। কিন্তু তাই বলে কি হতাশায় নিজেকে শেষ করে দেবেন? না, হতাশায় ডুবে থাকার নাম জীবন নয়। জীবন মানেই সংগ্রাম, জীবন মানেই প্রতিযোগিতার মিছিলে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। এখানে কঠোর পরিশ্রমে সফলতা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি ব্যর্থতাকেও অস্বাভাবিক বলতে পারেন না, কারণ সবাই এক দফায় সফল হয় না। আপনাকে ‘একবারে না পারলে দেখব শতবার'’ কিংবা ‘আসুক যতই ব্যর্থতা, সফল আমি হবোই’ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অথবা আপনার সাধ্যানুযায়ী ভিন্ন লক্ষ্যের দিকে নিজেকে পরিচালিত করতে হবে, কারণ আকাশকুসুম কল্পনারও কোনো যৌক্তিকতা নেই, যদি আপনি অন্য দশজনের মতো সফল হয়ে ঘর সংসার করতে চান অথবা একটা সুন্দর জীবন পেতে চান। কাজের চাপ কিংবা হতাশায় মেজাজের নিম্নমুখী প্রবণতা ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, যেমন- যোগব্যায়াম বা প্রার্থনা বা ধ্যান করতে পারেন, সবুজের সান্নিধ্যে যেতে পারেন, খুব সকালে বাইরে হাঁটতে পারেন ও ধর্মের আলোকে জীবনের মর্মবাণী আত্মস্থ করতে পারেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়