ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সুস্থ পরিবারের যত অভ্যাস (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ২৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুস্থ পরিবারের যত অভ্যাস (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : সুস্থ পরিবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। একটি একটি করে অনেকগুলো ভালো অভ্যাসে গড়ে ওঠে একটি সুস্থ পরিবার। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সমগ্র স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সুস্থ পরিবারের অবদান রয়েছে। আপনার পরিবারকে সুস্থ করতে চান? তাহলে এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুস্থ পরিবারের অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। চার পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

বড় স্বপ্ন দেখুন
দশটি বিষয়ে একটি ইচ্ছে তালিকা তৈরি করুন। শিশুদের বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করুন এবং তারা যে বিষয়ে প্রবল আগ্রহ দেখায় তাতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলুন। সন্তানদের অল্প বয়স থেকেই বড় স্বপ্নের প্রতি উৎসাহিত করলে অথবা পারিবারিক লক্ষ্যকে তাদের কাছে উপস্থাপন করলে তারা পরিবারকে ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পারিবারিক লক্ষ্যার্জনে অবদান রাখতে পারে। কথাগুলো বলেছেন সাইকোনিউরোলজিস্ট বেকি ব্লেন।

সমাজসেবা করুন
সন্তানদের মূল্যবোধ শেখানোর শ্রেষ্ঠ সময় হলো শৈশব এবং এ সময় তাদের সঙ্গে নিয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করলে পারিবারিক একতা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবারবান্ধব কিছু করতে পারেন, যেমন সমুদ্র সৈকত থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা অথবা অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ।

প্রচুর প্রশ্ন করুন
সুস্থ পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি ও তাদের চারপাশের বিশ্ব নিয়ে কৌতূহল দেখায়। তারা একে অপরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি প্রশ্ন হলো, ‘আজ তোমার সবচেয়ে ভালো খবর কী?’ অথবা ‘তোমাকে কি নিয়ে বেশি সংগ্রাম করতে হয়েছে?’ প্রত্যেক সদস্য যেন প্রশ্ন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনার পরিবারে প্রশ্ন করার প্রবণতা না থাকলে তা সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালাতে পারেন।

মতের অমিল হলে কলহ নয়
সুস্থ পরিবার সুস্থ যোগাযোগের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে প্রত্যেক সদস্য অনুভব করে যে, তাদের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে অথবা মূল্যায়ন করা হয়েছে। মতের অমিলে কলহের উৎপত্তি প্রতিরোধে তারা একে অপরের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কলহ বেঁধে গেলেও তারা মীমাংসা করতে জানেন। মতের অমিল হলে তারা উত্তেজিত হন না অথবা রাগে ফেটে পড়েন না। তারা চরম সত্যটা মেনে নেন যে ব্যক্তিভেদে মতের অমিল হতেই পারে, কারণ একজনের পাশ থেকে যা সিক্স তা আরেকজনের পাশ থেকে তাই নাইন।

 

 

সন্তানদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ নয়
সুস্থ পরিবার সন্তানদের আচরণে কড়াকড়ি আরোপ করে না। তারা সন্তানদের প্রত্যেক বিষয়ের সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনা না করে তাদের নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা চাই যে ছেলেমেয়েরা মাদকের ঝুঁকি জেনেই মাদককে না বলুক, কেবলমাত্র আমাদের খুশি করার জন্য নয়। সন্তানের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত করা ও দক্ষতা বাড়ানো উচিত। তাদেরকে ভালো অভ্যাস ও ন্যায়নীতির শিক্ষা দিতে হবে- এর জন্য শৈশবই সবচয়ে উপযুক্ত সময়।

মাঝে মধ্যে ফাস্টফুড খান
সুস্থ পরিবার হতে হলে সবসময় ঘরের খাবার খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি মাঝেমাঝে বাইরে থেকে পিজ্জার মতো কোনো আইটেম কিনে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর খাবার আদর্শ, কিন্তু পরিবারের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে মাঝেমাঝে বাইরের কোনো বিশেষ আইটেম খাওয়া যেতেই পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পরিবারের সবাই একসঙ্গে আগ্রহ সহকারে খাবারটি খায়। গবেষণা বলছে যে, পরিবারের সবাই একত্রে আনন্দচিত্তে খাবার খেলে শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। যেসব পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে খাবার খায় তাদের সন্তানদের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি কম, তারা পরীক্ষায় ভালো গ্রেড পায় ও তাদের শরীর তুলনামূলক সুস্থ থাকে।

দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন
পিতামাতারা, আপনারা এটা প্রত্যাশা করতে পারেন না যে আপনারা যা করেন আপনাদের ছেলেমেয়েরা তার থেকে ভিন্ন কিছু করবে। যদি আপনি ধূমপান করেন, তাহলে আপনার সন্তানকে ‘ধূমপান করবে না’ বলা কঠিন। মদপান বা নেশার বড়ি সেবনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি আপনি অতিভোজন করেন অথবা প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাহলে  আপনার ছেলেমেয়েরা কম খাবে ও হোল ফুডস খাবার খাবে এমনটা আশা না করাই ভালো। সুস্থ পরিবার এ প্রবাদটা ভালোভাবে অনুসরণ করে- লাইক ফাদার, লাইক সান (বাবা যেমন, পুত্র তেমন)।

সন্তানদের সঙ্গে শিশুসুলভ কথা এড়িয়ে চলুন
আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলুন এবং প্রায়সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলুন: জীবন, বিজ্ঞান, আমাদের বিস্ময়কর পৃথিবী এবং এমনকি রাজনীতি। যত দ্রুত সম্ভব শিশুসুলভ কথাবার্তা এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে। আমরা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সঙ্গে দীর্ঘসময় শিশুসুলভ কথা বলি, তাই মেয়েদের মধ্যে শিশুসুলভ কথা বলার প্রবণতা বেশি। ছেলেমেয়ের সাথে আপনার স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে কথা বলুন। তাদের মতামত জানুন অথবা তারা তাদের সমস্যা সম্পর্কে কি ভাবছে তা জেনে নিন। কেবলমাত্র নিয়মনিষ্ঠা ও পরামর্শমূলক কথাবার্তাই নয়, অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা বলুন।

পারিবারিক স্বাস্থ্য ইতিহাস জানুন
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের স্বাস্থ্য ইতিহাস সম্পর্কে জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক সদস্যের ইতিহাস জানা থাকলে এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করলে নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে বোধগম্য হয়ে সচেতন থাকা যায় এবং অন্য সদস্যদের সেবাযত্ন বা সচেতন করা যায়। স্বাস্থ্য দশা বা রোগ বা ইনফেকশন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নিয়ে পরিবারে উন্মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত, এমনকি বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা নিয়েও।

পড়ুন :

*

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়