ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : কাজে একাগ্রতা ধরে রাখা কঠিন, কিন্তু এটি তখন বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে যখন আপনার মন প্রতিনিয়ত কাজ থেকে সরে যায়। আজকের সদা-সংযুক্ত পৃথিবীতে মনোযোগ সরে যাওয়ার প্রবণতা পূর্বের তুলনায় বেশি। এমনকি শান্ত মুহূর্তেও আপনার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে, যেমন- কাজ করতে করতে হঠাৎ করে ফেসবুকে ঢুকে পড়েছেন অথবা কোনো ভিডিও গেমসে শত্রুকে দমন করছেন।

নতুন কিছু শিখতে, লক্ষ্য অর্জন করতে ও বিভিন্ন পরিবেশে ভালো করার জন্য মেন্টাল ফোকাস বা মনোনিবেশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে মানসিক প্রচেষ্টায় ঘাটতি থাকলে চলবে না। কোনো প্রতিবেদন তৈরি করতে অথবা কোনো ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ভালো করতে অথবা অন্য কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে অবশ্যই মেন্টাল ফোকাস বা মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশের গুরুত্ব একটু বেশি- কারণ আর যাই হোক না কেন, বিক্ষিপ্ত মন দিয়ে সৃজনশীলতা হয় না। একজন মানুষের মেন্টাল ফোকাস অথবা মনোনিবেশের ক্ষমতার মাত্রার ওপর সফলতা অথবা ব্যর্থতা বহুলাংশে নির্ভর করে।

ফোকাস হচ্ছে মেন্টাল মাসলের মতো- আপনি এটিকে যত বেশি গঠনের চেষ্টা করবেন, এটি তত বেশি শক্তিশালী হবে। মেন্টাল ফোকাস বাড়ানো যায়, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আপনি খুব দ্রুত বা সহজেই এটা করতে পারবেন। মেন্টাল ফোকাস বা মনোনিবেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কিছু বড় পরিবর্তন আনতে হবে। কাজে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য সাইকোলজি থেকে কিছু পরামর্শ ও কৌশল নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* আপনার মনোযোগ ক্ষমতা মূল্যায়ন করুন

মেন্টাল ফোকাস বা কাজে একাগ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনাকে প্রথমে এটা মূল্যায়ন করতে হবে যে, বর্তমানে আপনার মেন্টাল ফোকাস কতটা শক্তিশালী। কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ফোকাস ভালো অথবা ফোকাসের উন্নয়ন প্রয়োজন?

এ বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আপনার ফোকাসকে ভালো বলা যাবে-

* আপনি সহজে সতর্ক বা সচেতন থাকতে পারেন।

* আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেন ও কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করেন।

* আপনি অল্প বিরতি নেন, তারপর কাজে ফিরে যান।

এ বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আপনার ফোকাসের উন্নয়ন প্রয়োজন হবে-

* আপনি অবাস্তব স্বপ্ন দেখেন (যে স্বপ্ন পূরণ হবার নয়)।

* আপনি ডিসট্র্যাকশন (যা কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলে) দূর করতে পারেন না।

* আপনার কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না।

আপনার লাইফস্টাইলে প্রথম সেটের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আপনার ইতোমধ্যে ভালো মেন্টাল ফোকাস রয়েছে, কিন্তু সামান্য চর্চায় এ দক্ষতা আরো বাড়ানো যেতে পারে। দক্ষতা বাড়লে তো ক্ষতি নেই। কি বলেন?

আপনার লাইফস্টাইলে দ্বিতীয় সেটের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আপনাকে মেন্টাল ফোকাস বাড়াতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে কাজে একাগ্রতা ধরে রাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সময় লাগবে- কিছু ভালো অভ্যাসের চর্চা ও মনোযোগ সরে যাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

* ডিসট্র্যাকশন দূর করুন

যেসব বিষয় কাজে মনোনিবেশ করতে দেয় না অথবা ব্যাঘাত ঘটায় সেগুলোকে ডিসট্র্যাকশন বলে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার নমুনা হলো, ব্যাকগ্রাউন্ডে অডিও চলা অথবা আলাপী সহকর্মী। কিছু ডিসট্র্যাকশন সহজে দূর করা গেলেও কিছু ডিসট্র্যাকশন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে, যেমন- আপনার কাজে অডিও ব্যাঘাত ঘটালে টেলিভিশন বা রেডিও বা স্মার্টফোনের অডিও বন্ধ করে দিতে পারেন অথবা এগুলো অন্যের হলে সাউন্ড কমাতে অনুরোধ করতে পারেন, কিন্তু কাজে ব্যাঘাত ঘটানো সহকর্মী-স্বামী বা স্ত্রী-শিশু-সহকর্মী বা রুমমেটকে সামলানো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

ডিসট্র্যাকশন দূর করার একটি উপায় হলো নির্দিষ্ট সময় ও স্থান ঠিক করা এবং এ নির্দিষ্ট সময়ে একা থাকা অথবা আপনাকে বিরক্ত না করতে অনুরোধ করা। আরেকটি বিকল্প হলো কোলাহলমুক্ত পরিবেশে চলে যাওয়া, যেখানে আপনি কোনো বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারবেন। চেষ্টা করে দেখার জন্য লাইব্রেরি, আপনার ঘরের ব্যক্তিগত কক্ষ অথবা এমনকি শান্ত কফি শপও ভালো স্পট হতে পারে।

সকল ডিসট্র্যাকশন যে বাইরের উৎস থেকে আসে তা নয়। ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, প্রেরণার অভাব ও অন্যান্য মানসিক সমস্যাও কাজে মন বসানোর পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে। এগুলোকে বলে ইন্টারনাল ডিস্ট্র্যাকশন। ইন্টারনাল ডিসট্র্যাকশন কমাতে বা দূর করতে নিশ্চিত হোন যে আপনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করতে ইতিবাচক চিন্তার ওপর থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসক অথবা সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে।

* একটা সময়ে একটি বিষয়ের ওপর ফোকাস করুন

মনে হতে পারে যে মাল্টিটাস্কিংয়ে দ্রুত প্রচুর কাজ করা যাবে, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়। প্রকৃতপক্ষে মাল্টিটাস্কিংয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, কাজের উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিক সময়ে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু মনোযোগের ক্ষমতা সীমিত, তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে করা উচিত। আপনার মনোযোগকে স্পটলাইট হিসেবে বিবেচনা করুন, কারণ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্পটলাইটের আলো পড়লে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন, কিন্তু একই পরিমাণ আলো একটি বড় অন্ধকার কক্ষে ছড়ালে চোখে ঝাপসা ছাড়া কিছুই দেখবেন না। একই সময়ে একাধিক কাজ করতে থাকলে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে ও ভালো ফল পাওয়া যায় না- একারণে মাল্টিটাস্ক নয়, একটা সময়ে একটি কাজের ওপরই সমস্ত মনোযোগ দিন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : ভেরি ওয়েল মাইন্ড


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়