ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আনন্দে নেচেছিল কাজল

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আনন্দে নেচেছিল কাজল

জাহিদ সাদেক: ‘টিপ টিপ বরষা পানি’ গানটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? গানের সঙ্গে নাচের ছন্দে যেখানে দর্শকমহলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন নব্বই দশকের হট ডিভা রাভিনা ট্যান্ডান। কিংবা ‘নাচ ময়ূরী নাচ রে রুম ঝুমা ঝুম নাচ রে/ ওই এলো আকাশ ছেয়েও বর্ষা রানি সাজ রে’ গানটি সবাই শুনেছি। বর্ষার সঙ্গে রোমান্টিসিজমের গভীর সম্পর্ক আছে তা আরো একবার প্রমাণিত হলো গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার রাজপথে। ঝুম বৃষ্টিতে দেখা যায়, এক যুবকের ময়ূরপঙ্খী নাচ। রাজধানীর জোনাকী সিনেমা হলের ঠিক উল্টো দিকে যুবকটি বৃষ্টিতে মনের মতো করে নেচে যাচ্ছেন। যুবকের সে নাচ সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। নাচের সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

অবিরত বৃষ্টির মাঝে রাজধানীর সিগন্যালে আটকে থাকা একটি বিআরটিসি লাল রঙের বাস, আর সেই বাসের সামনে যুবকটির উন্মাতাল নৃত্য। এই নাচের ভিডিও অনেকেই মুঠোফোনে ধারণ করেন। এরপর প্রকাশ করেন ফেসবুকে। ভিডিওটি বিভিন্ন পেইজ, অ্যাকাউন্ট থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। সেই যুবকের নাম কাজল। একজন উদ্যমী যুবক ও জীবন সংগ্রামে সততার সঙ্গে লড়াই করা মুখ হিসেবে কাজলের পরিচিতি আছে এলাকায়। প্রাণ-প্রাচুর্যে এই যুবকের মুখে যেন কোনো মলিনতার ছাপ নেই। হাসি ঠাট্টা আর দুষ্টামিতে মেতে থাকেন সবসময়।

গত বৃহস্পতিবার সকালে তারই ফাস্ট ফুডের দোকানে কফি খেতে খেতে কথা হয় কাজলের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘পুরানা পল্টন এলাকায় ২৮ বছর ধরে বসবাস করছি। এখানকার প্রতিটি মানুষ আমাকে চেনে। সবার সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। মানুষ আমার কাছ থেকে মজা পায়। আর আমিও মানুষকে আনন্দ দিতে নাচি। নাচ আমার ছোট থেকেই ভালো লাগে। আর আমার নাচ দেখে মানুষ আনন্দ পায়, এটাই আমার ভালো লাগে।’

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কাজলসহ তিন ভাই থাকেন ঢাকায়। দুই ভাই ও তার মা বসবাস করেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িতে। কাজল একটু একটু করে লড়াই করে রাজধানীর পল্টন এলাকায় গড়ে তুলেছেন ছোট দুটি দোকান। এটাই তার আয়ের উৎস। নিজের একটি হোম সার্ভিস লন্ড্রির দোকান ও রেস্টুরেন্ট আছে। পুরানা পল্টন লাইনের এক চাচির বাড়িতে থাকেন তিনি।

কাজলের সঙ্গে কথা বলার সময়ও এলাকার ৫/৭ জন লোক এসে কাজলকে হাসিমুখে অভিনন্দন জানান। কাজল বলেন, ‘অনেকে আমাকে পাগল ভাবতে পারেন। আমিও বলি আমি পাগল, তবে আপনাদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি পাগল। এলাকার সবাই আমাদের ভালোবাসে এটাই আমার পাওয়া।’

বৃষ্টির মধ্যে নাচের বিষয়ে কাজল বলেন, ‘আকাশে কালো মেঘ দেখলেই ময়ূর পেখম মেলে নেচে ওঠে প্রেমের আকাঙ্ক্ষায়। বর্ষা মানেই প্রেমের জোয়ার। আকাশে মেঘের আনাগোনা, মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানিতে রোমান্স আসে। আমিও বৃষ্টি আসলেই নাচি। তবে এর আগে এমন ভাইরাল হয়নি। তাছাড়া সেদিন বৃষ্টিতে অনেক যাত্রী আটকা পড়েছিল, জোনাকী সিনেমা হলের উল্টো দিকে নয়া পল্টন মসজিদের সামনে। আর বাসে নটরডেম কলেজের বেশ কিছু ছাত্রও ছিল, তাদের উৎসাহে বেশি করে নেচেছি। আমি আসলে এমনই, আমার মন চাইলে আমি নাচি। আমি পড়াশোনা করিনি। ছোটবেলা থেকে একা একাই নাচ শিখেছি। বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানে নাচতে বলে। আমিও কোনো দ্বিধা করি না। নাচ আমার ভালো লাগে।’

 

 

তিনি আরো বলেন, ‘সেদিন আসলে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মন চাইল, তাই নাচতে নেমে পড়লাম। নাচতে আমার ভালো লাগে, কে কী মনে করল তাতে আমার যায় আসে না। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা আমার নেই। পড়াশোনাও বেশি দূর করিনি তবে নটরডেম কলেজের নাইট স্কুলে প্রায় ৭ বছর পড়েছি। কিন্তু ইংরেজি ভালো না পাড়ায় বাদ দিয়েছি। এখনো নটরডেম কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে নাচার জন্য ডাকে।’

নাচের তালে মানুষের মন দোলালেও নাচের কোনো প্রতিযোগিতায় কখনো অংশ নেননি কাজল। তবে একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলেও জানান তিনি।

ফেসবুকে তাকে নিয়ে হইচই পড়ে যাওয়ার বিষয়ে কাজল বলেন, ‘অনেকের প্রশংসা পেয়েছি। শুনে আনন্দিত হয়েছি। ফেসবুকে কমেন্টস পড়েছি। সব কমেন্টস তো পড়তে পারি না। যারা বাংলা লিখেছেন তাদেরটা পড়তে পারি। সবাই ভালো বলছে এইটুকু বুঝতে পারছি।’

কাজলের এ. কে. ফুড রেস্টুরেন্টে কাজ করেন টাংগাইলের অপু। তিনি বলেন, ‘কাজল ভাই অনেক পপুলার এই এলাকায়। শুধু এলাকার না পাশের কয়েকটি জায়গায়ও তার ব্যাপক পরিচিতি। মানুষের সাথে ভালো মিশতে পারে। শুধু সমবয়সি না এলাকার সিনিয়র ও জুনিয়রদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেন তিনি।’

শফিক নামে কাজলের দোকানের এক ক্রেতা বলেন, ‘খুবই মজার মানুষ কাজল ভাই। সবার সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব। তার কিছু হলে এলাকার সবাই সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। সবার সঙ্গেই সে মজা করে। সে রীতিমতো আমাদের তরুণদের জন্য প্রেরণা বলতে পারেন। বাবা নেই অথচ নিজের চেষ্টাতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কাজল বলেন, ‘দুটি দোকানে ভালো ব্যবসা করছি। সবার দোয়ায় ভালো আছি। দোয়া করবেন যাতে সবাইকে আনন্দ দিয়ে ভালো থাকতে পারি।’


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়