ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে আপনার করণীয়

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে আপনার করণীয়

প্রতীকী ছবি

অনেক সময় কোনো কোনো কোম্পানিতে প্রথম ইন্টারভিউয়ের পর দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের জন্য চাকরি প্রার্থীদের ডাকা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর নিয়োগদাতারা চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগীদের অনেক সময় দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকেন। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইট ভিজিট, অফিস ভিজিট বা প্লান্ট ভিজিট হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের পরই চাকরি নিশ্চিত হয়। নিয়োগদাতা ও চাকরিপ্রার্থী উভয়েরই এ সময় নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য থাকে।

নিয়োগদাতাদের লক্ষ্য: প্রথম ইন্টারভিউতে নিয়োগদাতারা সাধারণত দেখেন একজন প্রার্থীর মাঝে সাধারণ কী কী গুণ আছে, যা ওই পদের জন্য উপযুক্ত। তবে দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে নিয়োগদাতারা দেখেন কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কী কী গুণ ওই প্রতিযোগীর আছে। নিয়োগদাতারা আরো দেখেন দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের সময় নতুন চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাপারে অফিসে কাজ করা অন্যরা কিভাবে সাড়া দেন। আর অফিসের কর্পোরেট কালচারের সাথে ওই প্রার্থী কতটুকু মানানসই সেটাও দেখেন তারা।

চাকরিপ্রার্থীদের লক্ষ্য: চাকরিপ্রার্থীরা অফিসের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কেমন তা দেখেন। অন্য কর্মচারীদের সাথে কথাও বলেন অনেকে। এক্ষেত্রে আপনাকে খুব ভালোভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোম্পানিটা, চাকরিটা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপনার মনের মতো কি না।

দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে যা করা উচিত

প্রথম ইন্টারভিউটা যতটুকু গুরত্বপূর্ণ তার চেয়ে কোনো অংশে কম  গুরুত্বপূর্ণ নয় দ্বিতীয় ইন্টারভিউটা। তাই আপনাকে অবশ্যই খুব সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব কাজ করা উচিত।

তথ্য সংগ্রহ করুন: ইন্টারভিউ যেন ভালো ও আশানুরূপ হয়, সে কারণে কারা ইন্টারভিউ নেবেন, তাদের নাম বা তালিকা সংগ্রহ করতে পারেন। এতে করে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে মানসিকভাবে অনেকটাই নির্ভার হবেন আপনি।

নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছান: প্রথম ইন্টারভিউতে যেমন সময় সচেতন থাকতে হবে আপনাকে, তেমনি দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য পৌঁছান। কমপক্ষে ১০ মিনিট আগে অফিসের সামনে চলে আসুন।

ড্রেস কোড মেনে চলুন: অবশ্যই দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও ড্রেস কোড মেনে চলবেন। প্রথম ইন্টারভিউয়ের মতো এবারো পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুন্দর, মার্জিত পোশাক পরুন। সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলে স্যুট পরে যেতে পারেন।

প্রশ্ন করুন: প্রথম ইন্টারভিউতে সম্ভব না হলেও দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে প্রশ্নকর্তাকে অবশ্যই কিছু প্রশ্ন করুন। এটি আপনার পেশাদারী মনোভাব প্রকাশ করবে। আর চাকরিটা আপনার কাঙ্ক্ষিত কি না তা বুঝতে হলে প্রশ্ন করতেই হবে। এক্ষেত্রে যেসব প্রশ্ন আপনি করতে পারেন।

* জব ডেসক্রিপশন কেমন অর্থাৎ আপনার কাজের পরিধি কেমন হবে তা জানুন।

* কাজের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন।

* প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।

বেতনটা কত: আপনি কত বেতন আশা করছেন, সে বিষয়ে প্রশ্নকর্তা আপনাকে প্রশ্ন করতে পারেন। এ সময় নির্দিষ্ট একটি অংক বলতে হবে আপনাকে। তাই যে পদের জন্য আপনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার জন্য অন্যরা কত বেতন পান, সেটা আগে জেনে নিন। এরপর সে বিষয়ে আপনার প্রত্যাশা জানান।

নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন: অফিস চত্বরে প্রবেশের পর খেয়াল রাখুন আপনার আচরণ যেন মার্জিত হয়। অন্য প্রার্থীদের সাথে, অফিসের কর্মচারীদের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলুন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে মার্জিত ও পরিমিত কথা বলুন। জেনে নিন অফিস, পদ, কাজ, সম্ভব হলে বেতন কাঠামো সম্পর্কে। তবে বিতর্কিত কোনো বিষয়ে কথা বলবেন না। কোম্পানির বিষয়ে আপনি কী কী জানেন, তা নিয়ে কথা বলুন। সব সময় পেশাদারী মানসিকতা বজায় রাখুন। অফিস চত্বরে প্রবেশের পর ধূমপান করবেন না। ইন্টারভিউয়ের সময় নার্ভাসনেস প্রকাশ করবেন না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু দ্বিতীয়বারের মতো আপনার ডাক এসেছে, তাই চাকরিটা আপনি পেয়ে যাচ্ছেন, সে চিন্তা করুন। হেসে কথা বলুন প্রশ্নকর্তা বা নিয়োগদাতাদের সাথে। স্থিরতা, আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন, কোম্পানির লোকেরা কাজের দক্ষতার পাশাপাশি সামাজিক দক্ষতাও আশা করেন।

সবাইকে সমান গুরুত্ব দিন: ইন্টারভিউয়ের সময় সব প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন যেমন মনোযোগ দিয়ে, আগ্রহ নিয়ে শোনা উচিত, তেমনি ইন্টারভিউয়ের পর প্রশ্নকর্তাদের সবার কাছ থেকে বিজনেস কার্ড সংগ্রহ করুন। কারো কাছে বিজনেস কার্ড না থাকলে ছোট একটি নোটপ্যাডে তাদের নাম লিখে রাখুন।

পদ ও কাজের বিস্তারিত জানুন: কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কেমন লোক চান, কী কী গুণ বা যোগ্যতার ব্যাপারে তারা জোর দেন এ বিষয়গুলো জানুন। আর এ পদে কাজ করতে গিয়ে কী কী ইস্যু নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে, কোন কোন সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে সেগুলোও জানুন। মনে রাখতে হবে প্রথম ইন্টারউিয়ের জন্য যেসব গাইডলাইন আপনি মেনে চলেছেন, দ্বিতীয় ইনটারভিউতেও সেগুলো মেনে চলতে হবে আপনাকে। আর কোম্পানিতে যারা কাজ করছেন, তাদের সাথে সব বিষয়ে কথা বললে আপনি বেশি উপকৃত হবেন।

নিজেকে সতেজ রাখুন: প্রথম ইন্টারভিউয়ের মতো দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও আপনাকে পরিপাটি, সতেজ, প্রাণবন্ত থাকতে হবে। এটা আপনার আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। তাই ইন্টারভিউয়ের আগের রাতে ভালো ঘুম জরুরি। খাওয়া দাওয়াও হতে হবে স্বাস্থ্যকর। আর ইন্টারভিউয়ের ১০ মিনিট আগে সম্ভব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এতে আসার পথে রাস্তার ধুলোবালি দূর হওয়ার পাশাপাশি আপনার মুখে সতেজতা ফিরে আসবে।

সহজে মিশুন সবার সাথে: কোম্পানির কালচারের সাথে আপনি কতটুকু মানানসই নিয়োগদাতারা সেটা গুরুত্ব দেন দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে। তাই সবার সাথে সহজে মেশার দক্ষতা দেখাতে হবে আপনাকে।

যেকোনো প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকুন: প্রথম ইন্টারভিউতে যে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন আপনি, দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও সে ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে আপনাকে। তাই বিরক্ত হবেন না। উদ্দীপনার ঘাটতি প্রকাশ করবেন না। হাসি মুখে সব প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার টেকনিক্যাল দক্ষতাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন।

দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে যা করা অনুচিত

পারফরম্যান্স পর্যালোচনা না করা: প্রথম ইন্টারভিউতে আপনি কী কী ভুল করেছেন, ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন কি না, এ নিয়ে আপনার পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করা উচিত দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের আগে। অনেকেই এ কাজটা করতে বা প্রথম ইন্টারভিয়ের বিষয়ে ভাবতে ভুলে যান। যেসব প্রশ্ন প্রথমবার আপনাকে বেকায়দায় ফেলেছে, এবার সেগুলো কিভাবে সহজে মোকাবেলা করা যায়, তা নিয়ে ভাবুন। প্রথম ইন্টারভিউয়ে যেসব আচরণ আপনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছিল, সেগুলো ভুলে যাবেন না।

বিরক্ত হওয়া: দ্বিতীয় ইন্টারভিউটা আপনার জন্য সিরিজ ইন্টারভিউ হতে পারে। তাই আশ্চর্য বা বিরক্ত হবেন না। অনেকেই এতে হাঁপিয়ে উঠেন। ম্যানেজার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, ডিপার্টমেন্ট হেড এবং সম্ভাব্য টিম মেম্বারদের সাথে পৃথক ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা থাকতে পারে। আত্মবিশ্বাস ও সতেজভাব বজায় রাখুন।

শুধুমাত্র প্রশ্নকর্তাকে প্রাধান্য দেয়া: ইন্টারভিউতে সাধারণত একাধিক ব্যক্তি থাকেন। তারা সবাই আপনার যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব যাচাই করার জন্যই সেখানে আসেন। তাই যখন একজন প্রশ্ন করবেন, তখন শুধু তার দিকে তাকিয়ে বাকিদের উপেক্ষা করা উচিত না। ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশ করে সবার সাথে চোখে চোখ রেখে কুশল বিনিময় করুন। তারপর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় সবার চোখের দিকে তাকাতে ভুলবেন না।

ধূমপান করা: এটি খুব বড় দোষ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে আপনার জন্য। তাই ইন্টারভিউ চলাকালে যদি ইন্টারভিউয়ার আপনাকে ধূমপান করতে উৎসাহও দেন, তবু তা থেকে বিরত থাকুন। এটি হয়তো আপনাকে পরীক্ষা করার একটি পথ হতে পারে।

বেশি জাঁকজমক পোশাক পরা: দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও প্রথম ইন্টারভিউয়ের মতো পোশাক সচেতন হতে হবে আপনাকে। দৃষ্টি কটু বা বেশি জাঁকজমক পোশাক পরবেন না। অতিরিক্ত পারফিউম ব্যবহার করবেন না।

বেতন, সুবিধা নিয়ে কথা বলা: দ্বিতীয় ইন্টারভিউতেও বেতন ও অফিসের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে আগে আপনি কোনো প্রশ্ন করবেন না। প্রথমে নিয়োগদাতাকে এ নিয়ে বলতে দিন।

নিয়োগদাতার অফার দ্রুত লুফে নেয়া: যদি নিয়োগদাতা আপনাকে নির্দিষ্ট একটি বেতন কাঠামো জানিয়ে ওই পদের জন্য চূড়ান্তভাবে বেছে নেন আপনাকে। তারপরও তড়িঘড়ি করবেন না। শান্ত থাকুন। হাসি মুখে তার প্রস্তাব গ্রহণ করুন। এরপর এ নিয়ে ভাবতে কয়েক দিনের সময় চেয়ে নিন তার কাছ থেকে।

ধন্যবাদ না দেয়া: ইন্টারভিউ শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুম থেকে বের হবেন। অনেকেই আতঙ্ক ও নার্ভাসনেস থেকে এ কাজটি করতে ভুলে যান। এটি আপনার বড় একটি মাইনাস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়