ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন কখন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন কখন?

অসুস্থতা ভালো কিছু নয়। কেউই অসুস্থ হতে চায় না। তারপরও আমরা অসুস্থ হই বা রোগে ভুগি, কারণ সবসময় ১০০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয় না। অসুস্থতার সঙ্গে জ্বর অব্যাহত থাকলে তা মারাত্মক পরিণতিতে ভোগাতে পারে। তাই জ্বর কমানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।

জ্বরে কেউ ভালো অনুভব না করলেও এটা কিন্তু খারাপ কিছু নয়। মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়। এটা শরীরের সাময়িক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, যা আমাদেরকে জানান দেয় যে শরীরে কোনো রোগ আছে।’ প্রকৃতপক্ষে, জ্বর হচ্ছে রোগের বিরুদ্ধে শরীর যে যুদ্ধ করে তার একটি অংশ। শরীরের প্রাকৃতিক রোগ অনাক্রম্য তন্ত্র (ইমিউন সিস্টেম) আমাদেরকে সুস্থ রাখতে এই যুদ্ধ করে, যার ফলে জ্বর আসে।

ঠান্ডা লাগলে জ্বর আসার প্রবণতা কম; কিন্তু ফ্লু, কোভিড-১৯ ও অন্যান্য সংক্রমণে প্রায়শ জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সময় থার্মোমিটার ব্যবহার করা ভালো। থার্মোমিটারে শারীরিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেখা গেলে জ্বর কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট, কিন্তু ৯৭ অথবা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটও স্বাভাবিকের অন্তর্ভুক্ত। সঠিক তাপমাত্রা দেখার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। রোগীর বয়স ও পছন্দ অনুসারে সহজ পদ্ধতিটাই প্রয়োগ করতে পারেন।

মায়ো ক্লিনিকের মতে, ডিজিটাল থার্মোমিটার মুখ, বগল অথবা পায়ুপথে ব্যবহার করা যায়। টিম্পানিক থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হয় কানে। ডিজিটাল থার্মোমিটার দ্রুত জ্বর মাপতে পারে, সাধারণত ৩০ সেকেন্ডে জানিয়ে দেয়। কিন্তু টিম্পানিক থার্মোমিটার এর চেয়েও দ্রুত কাজ করতে পারে।

বিভিন্ন পদ্ধতির রিডিংয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেমন- পায়ুপথের তাপমাত্রা মুখের তাপমাত্রার চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি হতে পারে। চিকিৎসককে সঠিক তাপমাত্রা বলুন। শরীরের কোন অংশে থার্মোমিটার ব্যবহার করেছেন সেটাও বলুন। ডিগ্রি বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলবেন না।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
জ্বর কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকার সময় কখনো কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনও হতে পারে। জ্বর প্রায়ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর হলেও সবসময় চিকিৎসকের কাছে ছুটে যেতে হবে এমনটা নয়। কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা সম্পর্কে মায়ো ক্লিনিকের বেসিক গাইডলাইনস হচ্ছে:

* ৩ মাসের কম বয়সি শিশুদের পায়ুপথের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছলে অথবা এর উপরে ওঠলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

* ৩ মাসের বেশি বয়সি শিশুদের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। এছাড়া ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের জ্বর একদিনের বেশি এবং বড় শিশুদের জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলেও চিকিৎসককে জানাতে হবে।

* প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠলে অথবা তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

* যে কারো জ্বরের সঙ্গে মারাত্মক উপসর্গ থাকলে সবসময় পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়াই ভালো।

জ্বর নিয়ন্ত্রণ করুন
কলোরাডোর ক্যাসেল রকে অবস্থিত সাগুয়ারো ফ্যামিলি ক্লিনিকের সাবেক নার্স প্র্যাকটিশনার ল্যাডেন ক্রস বলেন, ‘জ্বর কমাতে এখনো পর্যন্ত প্রথম পছন্দ হচ্ছে প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন)। ডোজ দিতে হবে ওজন অনুসারে, বয়স বিবেচনায় নয়।’ আইবুপ্রোফেনও ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ডোজ হবে প্যারাসিটামলের অনুরূপ।

এখন অবধি শক্তসমর্থ প্রমাণ নেই যে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া ওষুধ দুটি একসঙ্গে ব্যবহার করলে ওভারডোজও হতে পারে। তাই যেকোনো একটি বেছে নিন। প্রথমত প্যারাসিটামলের কথা বিবেচনা করেন, কোনো কারণে সেটা না পেলে আইবুপ্রোফেন।

কম মাত্রার জ্বরে ওষুধের প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে, এ সময় ওষুধ ব্যবহারে অসুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে। কারণ অনেক ভাইরাস ও সংক্রমণ ঠান্ডা তাপমাত্রায় তীব্র আক্রমণের সুযোগ পায়। অনেক চিকিৎসক বড় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে না পৌঁছলে ওষুধের ব্যবহার অনুৎসাহিত করেছেন।

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়