ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনা: ঘুম যেভাবে জীবন রক্ষাকারী হতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা: ঘুম যেভাবে জীবন রক্ষাকারী হতে পারে

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ তথা করোনা সংক্রমণে ঘুম জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। তারা মনে করেন, পর্যাপ্ত ঘুমালে কোভিড-১৯ জনিত উপসর্গের তীব্রতা অথবা মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধ হবে। কিন্তু সংক্রমণের বিরুদ্ধে ঘুম কিভাবে কাজ করে?

আমরা জানি যে ঘুমের ঘাটতিতে শরীর চাপে পড়ে, ক্লান্ত হয় ও অতিভোজনে অভ্যস্ত হয়। কেবল তা নয়, অল্প ঘুমে সংক্রমণের প্রবণতাও বৃদ্ধি পায় অথবা শরীরে বিদ্যমান সংক্রমণ তীব্রতার দিকে এগিয়ে যায়। কোভিড-১৯ একটি ভাইরাস সংক্রমণ বলে এসময় যথেষ্ট না ঘুমালে মারাত্মক পরিণতিতে ভুগতে হতে পারে।

কোভিড-১৯ এর ওপর ঘুম কতটুকু প্রভাব ফেলে তা নিশ্চিত হতে বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ঘুম অন্যান্য সংক্রমণকে যেভাবে প্রভাবিত করে তার আলোকে আমরা আশাবাদী হতে পারি যে, করোনা সংক্রমণেও পর্যাপ্ত ঘুমালে উপকার পাওয়া যাবে।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ১৬৪ স্বেচ্ছাকর্মীকে রাইনোভাইরাসে (ভাইরাসটি ঠান্ডায় ভুগিয়ে থাকে) সংক্রমিত করেন। এদের মধ্যে একটা গ্রুপকে সাত ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমাতে বলা হয় ও অন্য গ্রুপটি ঘুমায় ছয় ঘণ্টার কম। গবেষকরা দেখেন যে, যারা ছয় ঘণ্টার কম ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে সংক্রমণটির উপসর্গের হার সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমানো গ্রুপের চেয়ে চারগুণ বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সময় শরীর বিশ্রামে থাকে বলে উপসর্গ তীব্র হওয়ার সুযোগ কম পায়। ঘুমের সকল পর্যায়ে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়, মেরামত প্রক্রিয়া চলে ও ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে গভীর ঘুমের সময় ইমিউন সিস্টেম যেভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে তা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াইয়ে অবদান রাখে।

নর্থামব্রিয়া সেন্টার ফর স্লিপ রিসার্চের পরিচালক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ জেসন এলিস বলেন, ‘ঘুমের সময় আমাদের ইমিউন সিস্টেম সাইটোকিন নামক প্রোটিন উৎপাদন ও বণ্টন করে। শুধু তা নয়, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ টি কোষও উৎপাদন করে। টি কোষ হলো একপ্রকার শ্বেত রক্তকণিকা, যা ইমিউন সিস্টেমের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টি কোষগুলো শরীরের সংক্রমিত কোষগুলোকে শনাক্ত ও ধ্বংস করে। এর ফলে সংক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘুমের সময় টি কোষগুলো বেশি তৎপরতা চালায় ও সংক্রমণ প্রতিহত করতে আরো কার্যকর হয়।’

মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে ঘুমের ঘাটতি হলে শাঁখের করাতের মতো অবস্থা হয়। একদিকে সংক্রমণ শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পায়, অন্যদিকে ‘ফ্লাইট অর ফাইট’ রেসপন্সে ইমিউন সিস্টেম অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে চলে যেতে পারে। অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ঘুম থেকে বঞ্চিত হলেও সংক্রমণে শরীর বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

শরীর ভাইরাসে সংক্রমিত হলে ইমিউন রেসপন্স আপনাকে ঘুমাচ্ছন্ন ও ক্লান্ত করবে। ইমিউন সিস্টেম চায় যে আপনি যথেষ্ট বিশ্রাম নেন, যেন এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়তে পারে ও নিরাময় দ্রুত করতে পারে। ইমিউন সিস্টেমের এই চাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করলে অসুস্থতার স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে, উপসর্গগুলো শক্তিশালী হবে ও মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে হতে পারে। তাই করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকলে যথেষ্ট ঘুমাতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমানোর আদর্শ মাত্রা হচ্ছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। শুয়ে থাকার পরও ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে সক্রিয় হোন। এরপর আবার ঘুমাতে গেলে সহজেই ঘুম চলে আসতে পারে।



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়