ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হরতাল-অবরোধে সহিংসতা নিয়ে বিএমবিএসের প্রতিবেদন

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ৩১ মার্চ ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হরতাল-অবরোধে সহিংসতা নিয়ে বিএমবিএসের প্রতিবেদন

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করছেন বিএমবিএস জেলা সমন্ময়কারী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ (ছবি : সিফাত)

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস) জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিএমবিএস জেলা সমন্ময়কারী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবুল বাসার ও কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার শাকিলা সিমকী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক সংঘাত ও হরতাল-অবরোধ সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় সারাদেশে মোট ১৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ককটেল বিষ্ফোরণ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগে প্রায় ৮৮ জন নিরিহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪২ জন। শিশুসহ আহত হয়েছেন এক হাজার ১৬৬ জন। নাশকতাকারীদের যানবাহনে ছোড়া পেট্রোল বোমা, ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩১ জন সাধারণ মানুষ এবং ৩৩৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এ সময়ে প্রায় ২৫০০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩১টি স্থানে রেলওয়েতে নাশকতা ঘটানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনজীবনকে অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত ও স্থবির করে তুলেছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলির লাভ-ক্ষতি যাই হোক না কেন, টানা হরতাল আর অবরোধে কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর, চাকরিজীবীসহ সকল পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণ দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে দুর্বিষহ ও যন্ত্রণাময়।

 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, দেশের এখন সঠিক ভবিষ্যৎ নিয়েও দুঃচিন্তার কারণ সৃষ্টি হয়েছে। এটা যেন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নিঃশেষ করতে চাইছে। একদিকে ক্ষমতাশীন সরকারী দল একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাঁধা সৃষ্টি করছে এবং সরকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনাবিচারে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের কথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করছে।

 

অন্যদিকে বিরোধী দলের হরতাল অবরোধের সুযোগে এবং অবরোধকারীদের প্রশ্রয়ে দুর্বৃত্তরা নিরিহ মানুষের প্রাণহানী ঘটিয়েই চলেছে। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। এই দুই রাজনৈতিক জোটের এ অবার্চিন, অমঙ্গলময় হানাহানি ও জেদ বজায় রাখার মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষকে।

 

সংস্থার মনিটরিং এ পাওয়া তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এ সময় মানবাধিকার লঙ্ঘিত ঘটনার শিকার হয়েছে ১৩ হাজার ২০৫ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলছে এই সহিংসতা।

 

এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সারাদেশে যৌতুকের জন্য জীবন দিতে হয়েছে ১৭ জন নারীকে এবং নির্যাতনে আহত হয়েছেন ৬ জন নারী। চলতি মাসে ১৯ জন শিশু এবং ২৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪ জন নারী। এরমধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৯ জনকে। এ ছাড়াও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৯ জন।

 

গত তিন মাসে ১৯ জন নিখোঁজ হয়েছে। উল্লেখ্য, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহম্মেদকে ১০ মার্চ রাত ৯টার দিকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় কিন্তু তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দায়িত্ব স্বীকার করে না। এসব ক্ষেত্রে অপরাধীদের খুঁজে বের করতেও আন্তরিক নয় বলে  সংস্থা মনে করে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ, ফ্যাসিলিটেটর এহসানুল হক খান শাহীন ও আলম খান উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৩১ মার্চ ২০১৫/শাহরিয়ার সিফাত/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়