ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

১৯৭১-এ মূল্যবোধ দেশপ্রেম ঘেঁষা ছিল, এখন অনুপস্থিত : সিপিডি

হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৭১-এ মূল্যবোধ দেশপ্রেম ঘেঁষা ছিল, এখন অনুপস্থিত : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হয়েছে। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যবোধ প্রভৃতি অনেক বেশি দেশপ্রেম ঘেঁষা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

 

মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে শনিবার বিকেলে সিপিডি আয়োজিত ‘স্ট্রাগল ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংলাপে এমন মূল্যায়ন করেন বক্তারা।

 

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহানের প্রকাশিত একটি বইয়ের ভিত্তিতে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্টজনরা।

 

‘আনট্রাঙ্কুইল রিকালেকশনস, দ্য ইয়ার্স অব ফুলফিলমেন্ট’ শিরোনামের ওই বইয়ে রেহমান সোবহানের শৈশব থেকে শুরু করে পেশাগত জীবন, রাজনৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক-অর্থনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে।

 

বইটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ঢাকা ‍বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘১৭টি অধ্যায়ে রচিত বইটিকে দুটো খণ্ডে ভাগ করা যায়। প্রথম ৮ অধ্যায়ে উঠে এসেছে ১৯৩৬ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ব্যক্তি রেহমান সোবহানের জীবন সম্পর্কে। পরের ৯টি অধ্যায়ে ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে রেহমান সোবহানের দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যালোচনা এবং বিচার-বিবেচনা স্থান পেয়েছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘বইটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। সেক্ষেত্রে আমরা যা দেখেছি, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল্যায়ন ছিল সমাজে। কিন্তু শুনতে খারাপ হলেও সত্যি যে, ঢাবি আর আগের অবস্থায় নেই। তেমনই দেশের অবস্থাও সেই ১৯৭১ সাল সময়কালের মতো নেই- রাজনৈতিক ভাবেও নয়, সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়েও নয়।’

 

এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তারা, তখনকার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনা ও পর্যালোচনা তুলে ধরেন। স্বাধীনতার আগের ও পরের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বক্তারা।

 

সংলাপে উঠে আসে ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা। এ ছাড়া দেশের সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যত প্রজন্মের উন্নয়নে নানা প্রস্তাবনা।

 

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে বইটি অবশ্যপাঠ্য। এজন্য ইংরেজিতে রচিত বইটিকে বাংলায় অনুবাদের প্রস্তাব দেন তিনি।

 

এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ‘বইটিতে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সমাজতান্ত্রিক উত্থানসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে খুব প্রয়োজনীয় এবং তথ্যবহুল। সেক্ষেত্রে ইংরেজিতে না হলে বইটি তার মূল্যমান কিছুটা হারাবে।’

 

বইটি প্রসঙ্গে সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সময়কাল বিবেচনা কিংবা প্রেক্ষাপট বা বিষয়বস্তু বিবেচনা, সব দিক থেকে বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘এই বইয়ের পরিধি এত বিশাল, এই ছোট ঘরের মধ্যে আলোচনা না করে বাংলা একাডেমিতে এ বই প্রসঙ্গে আলোচনা করা দরকার। ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়- সবকিছুই আলোচনা করা হয়েছে এতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেছে, সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আমি বলব, এটি শুধু বই নয়, ইতিহাসের উপাদান।’

 

অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘রেহমান সোবহান অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে বিষয়গুলো বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। রেহমান সোবহান সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। এ চিন্তাধারা কেন বিশালভাবে বিকশিত হয়নি, সে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হওয়া দরকার। আমরা মনে করি, তিনি (রেহমান সোবহান) আরো একটি বই লিখবেন এবং এ বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।’

 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ঢাকা ‍বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান, রাজনীতিবিদ শমসের মবিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন সেলিম, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, কমরেড খলিকুজ্জামান, রাশেদা কে চৌধুরী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশে হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদরুল আলম মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৬/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়