ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দেশের একমাত্র পাম তেল কারখানা মেহেরপুরে

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ অক্টোবর ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
দেশের একমাত্র পাম তেল কারখানা মেহেরপুরে

পাম গাছ থেকে পাম ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে

মহাসিন আলী
মেহেরপুর,  ৬ অক্টোবর: তেল উৎপাদনের কোন মাধ্যম না থাকায় চাষিদের গলায় কাটা হয়ে বিধেছিল পাম গাছ। ঠিক সেই মুর্হুতে কয়েকজন যুবক মেহেরপুর বিসিক শিল্প নগরীতে স্থাপন করেছেন দেশের একমাত্র পাম তেল উৎপাদন কারখানা।

শুধু তেল উৎপাদনই নয় পাম চাষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও দিচ্ছেন এই যুবকরা। পাম তেলকে সবুজ গাছের তরল সোনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তারা।  

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের শেষের দিকে একটি এনজিও মেহেরপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাম গাছের চারা বিক্রি করে। লাভজনক ফসল ও চাষের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে চাষিরা পাম বাগান গড়ে তোলে। বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতেও পাম গাছ লাগানো হয়। ২০১১ সালের মার্চ মাসের দিকে ওই এনজিও কর্মকর্তারা হঠাৎ কার্যক্রম গুটিয়ে আত্মগোপন করেন।

বিপাকে পড়েন পাম গাছ চাষিরা। গাছে ফল ধরা শুরু হলেও তা ঝরে পড়ছিল। আবার দুয়েকটি ক্ষেতে ফল আসলেও তা বিক্রি ও তেল তৈরীর কোন উৎস না থাকায় চরম হতাশায় ভুগছিলেন চাষিরা। অনেকেই গাছ কেটে অন্য ফসল করেছেন।

চাষিদের এই দুঃসময়ে কান্ডারি হয়ে হাজির হন ২০০৫ সালে গাজিপুর এগ্রিকালচার ইন্সিটিউট থেকে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করা মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের সুরজ আলী। সুরুজের সাথে যোগ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকজন কৃষি ডিপ্লোমাধারী যুবক ও ব্যবসায়ী। এদের সাথে রয়েছেন অবসারপ্রাপ্ত কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা। বোটানিক এগ্রো লিমিটেড নামে একটি ফার্ম গঠন করেছেন যার প্রধান কার্যালয় মেহেরপুর কলেজ রোডে। এখন পাম গাছ চাষিদের আশার দেখাচ্ছেন তারা।

পাম চাষের প্রয়োজনীয় কীটনাশক, হরমান, সার ও তেল উৎপাদন কারখানা মিলিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বোটানিক এগ্রো লিমিটেড। সময়ের প্রয়োজনে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে জানালেন এর কর্মকর্তারা।

দেশে পাম তেল উৎপাদনের কোন যন্ত্র না থাকায় পাম চাষ সম্প্রসারণ সবচেয়ে চড় চ্যালেঞ্জ ছিল।  বোটানিক এগ্রো লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হলে পাম তেল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়। বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনা সম্ভব হচ্ছিল না।

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ঢাকার সানটেক এজেনসিস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ এর প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন ও ব্রয়লার এক্সপার্ট হাসান আলীর তত্বাবধানে যন্ত্রপাতি তৈরীর কাজ শুরু হয়। জার্মানের একজন প্রকৌশলীর সহযোগিতায় তারা তৈরী করেন পাম তেল উৎপাদন মেশিন।

চলতি বছরের জুলাই মাসে মেহেরপুর বিসিক শিল্প নগরীতে কারখানায় যন্ত্রপাতি স্থাপন শেষ হয়। পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে এখন তেল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

এখানে সয়ংক্রিয় ব্রয়লার মেশিনে বীজ সিদ্ধ করে তা আরেকটি হুইলারে দিয়ে খোসা ও বীজ আলাদা করা হয়। বীজ ও খোসা আলাদা কম্প্রেসার মেশিনে চেপে তেল বের হয়। প্রতি ঘন্টায় এক টন (এক হাজার কেজি) পাম ফল থেকে তেল উৎপাদন করতে সক্ষম একই  কারখানাটি।   

বোটানিক এগ্রোর কর্মকর্তারা জানান, চাষিদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাদের ক্ষেত থেকে ফল সংগ্রহ করে তেল উৎপাদন করে দেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানের চাষিদের ২ টন মত ফল সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো এনে চাষিদের সামনেই তেল তৈরী করা হচ্ছে। ভোজ্য তেল চাষিদের খাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে। এতে চাষিদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে।

তবে কারখানাটি পুর্নাঙ্গরুপে চালু হয়নি পর্যাপ্ত ফল অভাবে। ঝিনাইদহ, যশোর, পাবনা, মাদারীপুর, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিদের ক্ষেত পরিচর্যা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১০/১২ টন ফল পাওয়ার আশা রয়েছে। আগামি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কারখানার চাহিদা অনুযায়ী পাম ফল পাওয়ার আশা করছেন তারা। আর তখনই কারখানাটি পুর্নাঙ্গরুপে চালু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন কর্মকর্তারা।

চাষিরা চাইলে নগদ টাকায় ফল বিক্রি করতে পারেন নয়তো তেল তৈরী করেও নিতে পারবেন।

উদ্যোক্তরা জানান, জেলার ছোট বড় ১২৫ টি বাগান এবং প্রায় ১২ হাজার পাম গাছ রয়েছে। গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের চাষি হাজী ইছহাক আলীর দুই বিঘা জমিতে রয়েছে ৮৫ টি পাম গাছ। তার ক্ষেতের ৫০ কেজি ফল থেকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ওই কারখানায় নিয়ে তেল তৈরী করা হয়েছে। ক্ষেতে যেভাবে ফল এসেছে তাতে অনেক লাভের আশা করছেন ইছহাক আলী।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাম চাষে উদ্বুদ্ধ করছে বলে জানালেন উপ পরিচালক শেখ ইখতেখার হোসেন। তেল উৎপাদন কারখানাটি পুর্ণাঙ্গরুপে চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষকসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা।


রাইজিংবিডি / শামটি


রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়