ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে দুই ঘণ্টা

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে দুই ঘণ্টা

আহমদ নূর : প্রচণ্ড গরম। সারি সারি দাঁড়িয়ে আছেন যুবকেরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে সাক্ষাৎকার। সবার মাঝেই চিন্তা, আবেগ, তাড়না, চাকরি পাওয়ার প্রত্যাশা।

তাদের ভাবনা, চাকরি পেয়ে শুধু যে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া, তা নয়। উদ্দেশ্য সাধারণ ও অগ্নিদুর্ঘটনায় পড়া মানুষের বিপদে পাশে থাকা। 

রোববার দুপুর ২টা। রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় কাজী আলাউদ্দিন রোডে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে গিয়ে কথা হয় চাকরিপ্রত্যাশী মাহাদীর সঙ্গে। তিনি এসেছেন মৌখিক পরীক্ষা দিতে। ফায়ার সার্ভিসের মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কতটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় জানি না। তবে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা মানুষের বিপদে সবার আগে আসেন। এজন্য এখানে চাকরির জন্য আবেদন করি।’

কথার ফাঁকে বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে নিহত ফায়ারম্যান সোহেল রানার প্রসঙ্গ ‍ওঠে আসে। মাহাদীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওমর নামের একজন। তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে সুপার হিরোর মতো বাঁচব। মরলেও যেন সুপার হিরো থাকি। সোহেল রানা চাইলে নিজেকে বাঁচিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব ও মানবিকতা থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষেকে বাঁচাতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি মারা গিয়েও হিরো।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের ভেতরে একটু গেলেই দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল। তার বিপরীত কক্ষেই কন্ট্রোলরুম। দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে গিয়েও দেখা গেল কর্মতৎপরতা। সে সময় নারায়ণগঞ্জের একটি বহুতল ভবনের পঞ্চম তলায় আগুন লাগার খবর আসে ফায়ার কন্ট্রোলরুমে। তাৎক্ষণিক নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আগুনের সর্বশেষ আপডেট জানতে কন্ট্রোলরুম থেকে তথ্যদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন একজন অফিসার। তিনি জানান, আগুন লাগা ফ্লোরে কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ তথ্য জানার পর ওই অফিসার তাৎক্ষণিক আরো একটি বিশেষ টিম সেখানে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। সম্ভাব্য সব বিপদ এড়াতেই মূলত ফায়ার সার্ভিস এমন কাজ করে।

তবে এর একটু পরই ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম জানায়, বিশেষ টিম পাঠানোর প্রয়োজন নেই। তারাই সামাল দিতে পারবেন।

এক বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন স্টেশন অফিসার মো. রায়হান। ছয় মাস প্রশিক্ষণের পর তাকে মিডিয়া সেলে নিয়োগ করা হয়। এই সময়ে কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছে রায়হানের। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখানে সবাই কাজকে ভালোবাসেন। কোনো ‍দুর্ঘটনার খবর পেলে আমরা উইথইন থার্টি সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। আমাদের এখানে ঘটনা জানার পর কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আমরা তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারি। কারো মধ্যে কোনো জড়তা বা অলসতা কাজ করে না। সবাই ‍উৎসাহ নিয়ে কাজ করেন।’

তিনি বলেন, ‘শুধু বেতন বিবেচনায় কেউ কাজ করেন না; জরুরি প্রয়োজনে কাজ করার মানসিকতা নিয়েই সবাই কাজ করেন। বিচিত্র ঘটনাও ঘটে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমে।’

সোয়া ৩টার দিকে একটি ফোন কলে পেঁচা পাখি উদ্ধারের অনুরোধ আসে। লোকবল সংকট, তারপরও আশ্বাস দেওয়া হলো উদ্ধার করে দেওয়া হবে।

পরে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানবিক বিষয়গুলোতে আমাদের কাজ করতে হয়। কিন্তু মূল সমস্যা হলো জনবল। আমাদের যে জনবল আছে তাতে স্টেশন থেকে লোক পাঠানোর আগে চিন্তা করতে হয়, ওই সময়ে যদি অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটে বা আগুন লাগার ঘটনা ঘটে তাহলে টিম পাঠাতে দেরি হবে না তো?’

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান শিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লাইফ সেভিং ফোর্স হিসেবে সব জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি আমরা। যে কোনো দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ আমাদেরই করতে হয়। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম থাকায় অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়। আমরা চেষ্টা করি যেন কোনো মানুষের ক্ষতি না হয়। যেমন, পুরান ঢাকার কোনো বহুতল ভবনে আগুন লাগলে সেখানে পৌঁছানো, উদ্ধার কাজ করা অনেক কঠিন। কারণ, অপ্রশস্ত সড়ক, ভবনের অপ্রশস্ত সিড়ি ইত্যাদি। আবার বাণিজ্যিক ভবনে অনেকক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সচেতনতার অভাব দেখা যায়, তারা সিড়িতেই মালামাল রাখেন। ফলে জরুরি সময়ে মানুষ সিড়ি সহজে ব্যবহার করতে পারেন না। এমনকি অনেক ভবনে ফায়ার অ্যালার্মও লাগানো থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘এফ আর টাওয়ারে আগুন আট তলায় লাগল। যদি ওই ভবনে ফায়ার অ্যালার্ম থাকত তাহলে যিনি ১২ তলায় ছিলেন তিনি সংকেত পেয়ে যেতেন। তাহলে এতো প্রাণহানি ঘটত না।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/নূর/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়