ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ২৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরেই চলছে মন্দাভাব, লেনদেনও হচ্ছে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী গত দুই মাসে ডিএসইর গড় লেনদেন ৪০৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বাজারের পরিধির তুলনায় এ লেনদেন অন্তত এক হাজার কোটি টাকা হওয়া দরকার। পুঁজিবাজারে টাকা থাকছে না বলেই এ তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর লভ্যাংশ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো যদি তাদের নগদ লভ্যাংশ দিয়ে দেয় তাহলে এ টাকাও বাজার থেকে বের হয়ে অন্য খাতে চলে যাবে, যা চলমান তারল্য সংকটকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তারল্য ধরে রাখার স্বার্থে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর স্টক ডিভিডেন্ড বা রিটার্ন অন ইউনিটকে (আরআইইউ) উৎসাহিত করতে হবে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন উত্তোলন করে ফান্ড ম্যানেজার একটি ফান্ড গঠন করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন। আর ওই বিনিয়োগের মুনাফা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করেন। এক্ষেত্রে লভ্যাংশ নগদেও দেওয়া যায়। আবার সমপরিমাণ টাকা অনুযায়ী ওই ফান্ডের ইউনিটও দেওয়া যায়, যা পুনরায় বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ফান্ড ম্যানেজার। এ লভ্যাংশকে আরআইইউ বলে।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ৩৮টি মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে যেগুলোর পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৫ হাজার ৫৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। এ ফান্ডগুলো বছরে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। তাতে লভ্যাংশের পরিমাণ হয় প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা।

ফান্ডগুলো যদি এ টাকা নগদ লভ্যাংশ হিসেবে দিয়ে দেয় তাহলে তা পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে ব্যাংকিং খাত বা সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সঞ্চয় মাধ্যমে চলে যাবে। আর যদি এ টাকা আরআইইউ দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের কাছে রেখে দেয় তাতে টাকাটা পুঁজিবাজারেই থাকবে, তারল্যও বাড়বে।

বাজারে তারল্য ধরে রাখার যুক্তিকে সামনে রেখেই ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডলোকে আরআইইউ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তবে আগামীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধনের কথা চলছে। তাতে এ সুযোগ না দেওয়ার জন্য অনেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সুপারিশ করছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা এ ধরনের সুপারিশের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, অনেকেই না বুঝে আরআইইউকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। বরং পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোনো ফান্ড ম্যানেজোর আরআইইউ দিতে চাইলে তা স্বাভাবিক এবং আইনসিদ্ধ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আরআইইউ প্রদান মন্দাবাজারের সহায়ক। কারণ, একটি ফান্ড যদি নগদ অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে প্রদান করতে চায় তাহলে ফান্ড ম্যানেজারকে তার বিনিয়োগকৃত শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়, এতে বাজারে বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়। আর যদি আরআইইউ প্রদান করে সেক্ষেত্রে তাকে শেয়ার বিক্রি করতে হয় না, ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাবও পড়ে না।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বোনাস ইউনিট না দিয়ে নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে বলে কোন কোন পক্ষ দাবি জানালেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে মন্দা বাজারে নগদ লভ্যাংশ দিতে বাধ্য করা হলে শেয়ার বাজারে পরিস্থিতি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আরআইইউ দীর্ঘমেয়াদি ভালো রিটার্ন প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কারণ, আরআইইউ প্রদানের মাধ্যমে ফান্ডের মেয়াদান্তে নেট অ্যাসেট ভ্যালু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যা পরবর্তী সময়ে ভালো রিটার্ন দিতে ভূমিকা রাখে। তাই দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার জন্য আরআইইউ অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৯/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়