ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী : সংখ্যায় বেশি পুরুষ

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২২ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রতিবন্ধী : সংখ্যায় বেশি পুরুষ

আসাদ আল মাহমুদ : মাত্র এক বছরে দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ সাত হাজার সাতশত পঁচিশ জন। আর মোট প্রতিবন্ধীদের তালিকায় দেখা যায় নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ একাত্তর হাজার বেশি। শিগরিই প্রতিবন্ধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

প্রতিবন্ধীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে কর্মমুখী শিক্ষাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রতিবছর প্রতিবন্ধীদের শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি পরিচালনা করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে গত ১৪ আগস্ট প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ শেষ হয়। জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন।

গত বছর (২০১৮ সাল) দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ছিলো ১৫ লাখ ৫৮ হাজার। মাত্র এক বছরে বেড়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৭২৫ জন। মোট প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১০ লাখ ১৭ হাজার ১৩২ জন এবং মহিলা ৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৩ জন। অর্থাৎ দেশে নারীর চেয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৯ জন পুরুষ প্রতিবন্ধী বেশি।

প্রতিবন্ধী পুরুষদের মধ্যে অটিজম তালিকায় রয়েছে ২৯ হাজার ৩১১ জন, শারীরিক ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৩৫, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগী ৩৩ হাজার ৫৭ জন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৪৪ জন, বাকপ্রতিবন্ধী ৬৮ হাজার ৯৮৮ জন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর তালিকায় রয়েছে ৭৩ হাজার ৯৯৭ জন, শ্রবণ ২৭ হাজার ৮৯৫ জন, শ্রবণদৃষ্টি ৩ হাজার ৮৪৪, সেরিব্রাল পালসি ৪৭ হাজার ১৩৭ জন, বহুমাত্রিক ১ লাখ ৯ হাজার ২৭৫ জন, ডাইন সিনড্রম ২ হাজার ৮০ জন এবং অন্যান্য ৭ হাজার ৭৬৯ জন।

একই ধারায় মহিলা প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অটিজম ১৮ হাজার ৭৮৩ জন, শারীরিক ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৯ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগী ২৩ হাজার ৪৩৭, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৯৫ হাজার ৮০৪ জন, বাকপ্রতিবন্ধী ৫২ হাজার ৫৩ জন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ৫৬ হাজার ৫৮৮ জন, শ্রবণপ্রতিবন্ধী ২১ হাজার ৮৯ জন, শ্রবণদৃষ্টি ৩ হাজার ২০ জন, সেরিব্রাল পালসি ২৯ হাজার ৮৯০ জন, বহুমাত্রিক ৭৯ হাজার ৩৭৪ জন, ডাইন সিনড্রম ১ হাজার ৬২৫ জন এবং অন্যান্য তালিকায় রয়েছে ৫ হাজার ৬১১ জনের নাম।

এ ছাড়া প্রতিবন্ধী হিজড়াদের সংখ্যা পাওয়া গেছে ২ হাজার ৪৪৩ জন। এদের মধ্যে অটিজম ৬৩ জন, শারীরিক ১ হাজার ৮৯ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগী ৭৭ জন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ১০২ জন, বাকপ্রতিবন্ধী ১০০ জন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ২৩২ জন, শ্রবণপ্রতিবন্ধী ৫১ জন, শ্রবণদৃষ্টি ২ জন, সেরিব্রাল পালসি ২৯ জন, বহুমাত্রিক ১২২ জন, ডাইন সিনড্রম ৫ জন এবং অন্যান্য ৫৭১ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মানোর ক্ষেত্রে মা-বাবা কারোরই কিছু করার থাকে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যতই উন্নতি হোক না কেন, দেশ থেকে প্রতিবন্ধী কখনো সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব না।

এ কারণেই প্রতিবন্ধীদের মৌলিক সুবিধাগুলো দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুরা সুস্থ পরিচর্যা পেলে স্বাভাবিক জীবনে সবার সঙ্গে মিলে চলতে পারে এবং এ ধরনের শিশুরা কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়। একারণে প্রতিবছর প্রতিবন্ধীদের শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।

এক সময় প্রতিবন্ধীরা সমাজ ও পরিবারে বোঝা হিসেবে প্রতিয়মান হতো। আগে তাদের যেভাবে বাঁকা চোখে দেখা হতো এবং নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো সেই মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন করে দেশের মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। 

প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির উদ্দেশ্য

প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নির্ধারণ, দেশে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিবন্ধকতা শনাক্তকরণ ও পরিচয়পত্র প্রদান। প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

বিষয়টি নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বাইরের কেউ নয়। প্রতিবন্ধীরা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি। ১০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক সাত শত টাকা করে ভাতা দিচ্ছে সরকার। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে এখন সাড়ে ১৬ লাখের কিছু বেশি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী রয়েছে। তারা সবাই কর্মমুখী শিক্ষাসহ ভাতার আওতায় আসবে।

তিনি বলেন, মুক্তা পানি (মিনারেল ওয়াটার) প্রতিবন্ধীরাই তৈরি করছে। কার্যকর প্রশিক্ষণ দেওয়ায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা প্লাস্টিক ও বেত দিয়ে মোড়া তৈরি করছে, বিভিন্ন সাংসারিক উপকরণও তৈরি করছে। সুতরাং প্রতিবন্ধীদের বোঝা না মনে করে তাদের উপযোগী কাজে পারদর্শি করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২আগস্ট ২০১৯/আসাদ/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়