খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন শুরু, শিশু নির্যাতন বন্ধের আহ্বান

ছেলেধরা অপবাদে নিরীহ অভিভাবক ও ছোটদের পিটিয়ে হত্যার ভয়াবহতা, ডেঙ্গুসহ নানা ব্যাধির উপদ্রব, শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যা প্রতিরোধের ডাক দিয়ে শুক্রবার রাজধানীর  শিশু একাডেমিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন ২০১৯।

সম্মেলনের শুরুতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকারী কিশোরী মনিকাকে ‘বিজয়িনী যোদ্ধা তুমি’ উপাধীতে ভূষিত করে তাকে খেলাঘরের আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা হয়। তাকে দেয়া হয় উত্তরীয়, মানপত্র ও আর্থিক সম্মাননা। খেলা ঘরের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মরণে ‘শহীদুল্লাহ কায়সার পদক’ পান সম্মেলনের উদ্বোধক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমান, শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক প্রনয় সাহা, আবদুল মতিন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. সাহাবুল ইসলাম বাবু।

উদ্বোধনীতে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পরে খেলাঘরের মতো শিশু সংগঠনে শিশুদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। সবাই লেখাপড়া ও বেশি নম্বর অর্জনের দিক জোর দিচ্ছে। দেশপ্রেম গড়ে তোলা এবং শিশু কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে কিছু নম্বর কম পেলেও অভিভাবকদের প্রতি শিশুদের শিশু সংগঠনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় খেলাঘরের ভাই বোনরা জাতীয় সংগীত, সংগঠনের সংগীত এবং মনমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তারা।

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের মূলনীতির ভিত্তিতে শিশুদের গড়ে তোলাই হচ্ছে আমাদের মূল কাজ। শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে খেলাঘর যা করতে পারে বা করছে, অন্যান্য রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের পক্ষে তা করা অসম্ভব। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই খেলাঘরের ভূমিকার জন্য দেশ আজ গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে খেলাঘরের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন আরো বেগবান করতে হবে।

শিশু অতিথি বরগুনার আমতলীর ১১ বছরের কিশোরী বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকারী মনিকা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বাংলাদেশের কোন শিশু-কিশোরী যেন বাল্যবিবাহের শিকার না হয়। সবার লেখাপড়া নিশ্চিক করতে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।

দুপুরে সারা দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সাংগঠনিক অধিবেশন ও রাতে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সম্মেলনের প্রথম দিনের আয়োজন।

শনিবার দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে খেলাঘর জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন। দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি থাকবেন দৈনিক কালেরকণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক  হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সকাল থেকে সাংগঠনিক ও নির্বাচনী অধিবেশন এবং রাতে শিশু-কিশোরদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।

জেলা, মহানগরী ও অঞ্চলের শাখা আসরগুলোর ৬ শতাধিক প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বন্ধুপ্রতীম সংগঠন ‘সব পেয়েছির আসর ও কিশোর বাগিনী’র পাঁচজন প্রতিনিধি এতে যোগ দেন।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ