ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী!

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী!

খাদ্যে বিষক্রিয়া এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। বাজারে বিষমুক্ত খাদ্য আর অবশিষ্ট নেই। সব ধরনের খাবারে এখন বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশব্যাপী বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে আজ।

দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’। কিন্তু কোথায় সে পুষ্টিকর খাদ্য। পুষ্টির কথা শুধু বিজ্ঞাপনে আর প্রচারণায়। বাজারে শত খুঁজেও তার অস্তিত্ব পাওয়া দায়।

আগে খাবার ভেজালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সে অবস্থায় নেই। কেমিক্যাল মিশিয়ে খাবার বিষক্রিয়ায় পরিণত করা হচ্ছে। এক সময় দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করা হলেও এখন দুধের মধ্যে দুধই পাওয়া যায় না। স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।

এক সেমিনারে একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘মেথি, তিলের তেল আর গোলমরিচ ছাড়া কোন খাবার বিষমুক্ত নয়। খাবারে বিষাক্ততা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।’

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফল-মূল, মাছ, মাংস ও তৈরি খাবার সবকিছুতেই কম বেশি ভেজাল, যা প্রকৃত পক্ষে কেমিক্যাল নামের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ। যেমন ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (বিষ), মাছ, মাংস, দুধে ফরমালিন (যা মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষনে ব্যবহার হয়ে থাকে) সালফিউরিক এসিড গুড়াদুধে, ডিডিটি পাউডার শুঁটকি মাছে, কলা ও পেঁপে পাকানোর জন্য ইথাইলিন অক্সাইড, ইউরিয়া (সার) চাউলের সৌন্দর্য বাড়াতে, আলকাতরা মিষ্টি ও কাপড়ের রঙে, ইটের গুড়া শুকনা মরিচ ও হলুদের সঙ্গে, কাঠের গুড়া খোলা চায়ের সঙ্গে এবং ডালডা ঘিতে ভেজাল দেওয়া হয়। এমনকি গুড়, মুডি চকলেট, মিষ্টি, আইসক্রীম ও ফলের জুস, প্যাকেটজাত ফলের রস ইত্যাদিতে বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত করে আকর্ষনীয় করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়।

তবু আশার ব্যাপার, এবার কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও এফএও এর উদ্যোগে বাংলাদেশে যথাযথ গুরুত্বসহকারে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে । দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বাণীতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আরো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে সকাল ১০টায় নির্ধারিত প্রতিপাদ্যের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। দিবসটিকে সামনে রেখে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবাদিপ্রাণীর খাদ্যে স্বল্পমাত্রায় এন্টিবায়োটিক, হরমোন ও কীটনাশক মেশানো হয়। পরোক্ষভাবে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এসব মাংস দীর্ঘদিন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাবে, শিশুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিষাক্ত খাবারের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৬ শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যাত্ব এবং ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধীত্বের শিকার। খাদ্য ও ফলমূলে ব্যবহৃত বিষের প্রভাবে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনী রোগ, লিভার সিরোসিস হৃদরোগ প্রভৃতি মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান জীবন। শুধু তাই নয় বন্ধ্যাত্ব ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মহার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে বিদেশি ফল ও ফাস্টফুডে অভ্যস্তরা।

‘পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ যখন প্রতিপাদ্য, তখন খাদ্যে বিষাক্ততার দিকটি নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে।


ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়