আলপনায় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
ছবি : শাহীন ভূঁইয়া
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
প্রথম প্রহর থেকেই শহীদ মিনার বেদীতে ফুল দিয়ে শুরু হয় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। তারপর প্রভাত ফেরিতে শিশু-যুবা আর বৃদ্ধদের ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণ চলছে, চলবে দিনভর।
গতকাল বুধবার বিকাল থেকে শহিদ মিনারের বেদি ও আশেপাশের রাস্তাগুলোতে আলপনা আঁকার কাজ চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রতিবছর এই আলপনা আঁকার কাজটি করে থাকেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
একুশের চেতনাকে ধারণ করতে আলপনা এখন আর কেবল দেয়াল, মেঝে বা রাস্তায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন আলপনা উঠে এসেছে মানুষের দেহেও। মুখে, হাতে আলপনা এঁকে, ‘অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি’ লিখে ঘুরে বেড়ান অনেকেই। শুধু নিজেরাই নন, সন্তানদের মুখে-হাতেও আলপনা আঁকিয়ে নেন অনেকে।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও গৃহবধূদের মুখে আলপনা এঁকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। রঙ-তুলি হাতে পথের মোড়ে মোড়ে, বিভিন্ন পয়েন্টে আঁকিয়ে তরুণ-তরুণীরা অপেক্ষায় রয়েছেন। আগ্রহীদের দেহে আলপনা এঁকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত তারা। আর এর বিনিময়ে আহামরি কিছু পারিশ্রমিক নেন না তারা। ২০/৩০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেকে আবার যে যা দেয় তাতেই খুশি। আবার কেউ কেউ শিশুদের মুখে ফ্রিতেই এঁকে দেন আলপনা।
আলপনা শিল্পী মুজাহিদ। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিবসে মানুষের হাতে-মুখে আলপনা আঁকি। তবে ভাষা আন্দোলনে চিত্র আঁকতে গেলে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়। শ্রদ্ধা সেসব মহান শহীদদের প্রতি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ বাংলা ভাষায় কথা বলছি। বিশ্ব দরবারে আমাদের বাংলা ভাষা সমুন্নত। আমরা এ আলপনা আঁকার মধ্য দিয়ে কিছু অর্থও উপার্জন করছি। যাদের হাতে, মুখে এ আলপনা আঁকি, তারা খুশি মতো কিছু টাকা দেয়। তারাও খুশি থাকে, আমরাও খুশি থাকি।’
আলপনা শিল্পী মামুন বলেন, ‘আলপনা আঁকার মধ্য দিয়ে আমাদের ভাষা শহীদদের স্মরণ করছি। বাংলাভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমা ও দিপ্তী টিএসসি হয়ে শহীদ মিনারে যাচ্ছিলেন। পথে এক শিল্পি তাদের মুখে আলপনা এঁকে দিতে চাইলেন। দুজনেই মুখে শহীদ মিনারের আলপনা এঁকেছেন।
তারা বলেন, ‘সত্যি বলতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের হৃদয় থেকে। চিত্রের মাধ্যমে সেটি কখনো পূরণ করা যায় না। তবুও ভাষার মাস, একুশের মাস। তাই ভালবেসে মুখে শহীদ মিনারের চিত্র আঁকিয়েছি।’
তাই শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, আলপনা এখন হয়ে উঠেছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের ভাষাও।
ঢাকা/ইয়ামিন/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন