ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুদকের স্বাধীনতা-নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুদকের স্বাধীনতা-নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ : টিআইবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম ও ক্ষমতার ব্যবহারের কারণে এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ফলোআপ গবেষণা’ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এতে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।

গবেষণাপত্রে উল্লেখিত বিশেষজ্ঞদের মতে, দুদক বিরোধীদলের রাজনীতিকদের হয়রানি এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দুদকের কার্যক্রমে।

এতে আরও বলা হয়, দুদক রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। কারণ দুর্নীতির ঘটনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ আচরণ করতে সমর্থ হয়নি । গবেষণাপত্রে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন যে, কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সকলের বিরুদ্ধে সমানতালে পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। তথ্যদাতাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হচ্ছে, যে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের বেশিরভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত, যদিও কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের সদস্য রয়েছেন।

গবেষণা বলছে, দুদকের কর্ম সম্পাদনের স্বাধীনতাও কিছুটা নিম্ন। কিছুক্ষেত্রে দুদক সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে । কিছু ক্ষেত্রে সরকারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য দুদক নিজস্ব ধারাপ্রসূত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে বিরত থাকে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের সাড়া প্রদানের হার কম হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে দুদকের অভিযোগ বাছাই ব্যবস্থা। দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৮ সালে মোট ৪৭,৫৪৯টি অভিযোগের মধ্যে ৩২০৯টি অভিযোগ (৬.৭৫%) অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এই হার ৬৬ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা। তবে দুদকের মতে অধিকাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে না।

এছাড়া, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২,৩৬৯ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগে পাঠানো হয়। এছাড়া দুদক ২০১৬-২০১৮ সালে ৪,০৩৮ অনুসন্ধানের মধ্য থেকে ৮৪৮ মামলা (২১%) করেছে।

অপরাদকে, গত কয়েক বছরে দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার হার গড়ে ৪০% থেকে বেড়ে ৫৭.৭ হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের থেকে (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ৭৫ শতাংশের বেশি) তা এখনো কম। গত তিন বছরে (২০১৬-১৮) নিস্পত্তি হওয়া ৮৫৭ মামলার মধ্যে মোট ৪৯৫টিতে সাজার রায় হয়েছে। একই ধরনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুদকের নিরপেক্ষতার বিষয়ে মানুষের ধারণা খুব ইতিবাচক নয়। দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দুদকের ওপর আস্থার অভাব রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ, নাগরিক ও সাংবাদিকদের মতে দুদককে দু্নীতি দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও দুনীতির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ নয়। জনগণের ধারণায় দুদক ক্ষুদ্র দুর্নীতির ওপর বেশি মনোযোগী এবং বড় দু্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দুদকের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।

এসময় এক প্রশ্নে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কাগজ কলমে দুদকের স্বাধীন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। দুদক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি নেয়ার যে বিষয় রয়েছে সেটি বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আমরা আশা করি আদালতে এই ধারাটি বাতিল হবে।


ঢাকা/নূর/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়