ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি বাড়ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি বাড়ছে

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় ক্যাম্প থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া, ক্যাম্পের ভেতরেও তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ জন্য ব্যয় হবে ২১০ কোটি টাকা। তবে, এ কাজ করতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। এ অবস্থায় গতমাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বৈঠকে কাঁটাতারে বেষ্টনী নির্মাণ কাজে যে সব সমস্যা হচ্ছে, তা দ্রুত সমাধান করে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বলেন, ‘‘বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে মারামারি, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে তারা বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে সশস্ত্র বাহিনীকে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের নির্দেশনা দেন।’’  বৈঠকে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান সচিব।

এই প্রসঙ্গে বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পক্ষ থেকে কাঁটাতারের বেষ্টনী নির্মাণের বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক, কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, এসবি, বিজিবি ও পুলিশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেষ্টনী কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে  প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে পরিকল্পিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে বসবাসরত কিংবা চাষাবাদের জমি রয়েছে, এমন বাংলাদেশি নাগরিকদের বা তাদের জমি এবং ওয়াক ওয়ের জমির বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বৈঠকে কাঁটাতারের বেষ্টনীর ভেতরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের চাষাবাদের যে সব জমি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেসব অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে জমি অধিগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়। কমিটির অন‌্য সদস‌্যরা ভূমি মন্ত্রণালয়; শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই ক্যাম্পের বাইরে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়েছে, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে অবস্থিত শ্যামলাপুর ক্যাম্পে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।  তাদের দ্রুত সুবিধাজনক ক্যাম্পে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় অনেক রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের জায়গা প্রাপ্তিসাপেক্ষে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরের ক্যাম্পে আনার ওপরও  গুরুত্ব আরোপ করা হয়

বৈঠকে কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং ওয়াকওয়েতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে ওয়াচ টাওয়ারে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা থাকার জোর দেওয়া হয়। ওয়াচ টাওয়ারের সিসি টিভিতে ধারণ করা ফুটেজ সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন‌্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  এছাড়া কাঁটাতারের বেষ্টনীতে স্থাপিত ওয়াচ টাওয়ার এবং এর চারদিকে নির্মিত ওয়াক ওয়েতে পালাক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর  মধ্যে সমন্বয় করতে স্ট্যান্ডিং অর্ডার প্রসিডিউর (এসওপি)ও প্রস্তুত করে এর খসড়া জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

কাঁটাতারের বেষ্টনীর নকশা প্রয়োজনে সংশোধন করার ক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।


ঢাকা/হাসনাত/সাজেদ/হক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়