‘করোনার কারণে বিদেশি অতিথিদের আগমন স্থগিত করা হয়েছে’
মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সীমিত করার ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিদেশি অতিথিদের আগমন স্থগিত করার হয়েছে।’ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাতে জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উপলক্ষে ঘোষিত মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
ভাষণটি জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত ‘মুক্তির মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মাধ্যমে মুক্তির মহানায়ক অনুষ্ঠানটির শুরু হয়। এরপর শত শিশু-কিশোরের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা, জাতীয় সঙ্গীতের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুজিব বর্ষের বছরব্যাপী মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের কারণে তা বাতিল করে মুক্তির মহানায়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ করে তা সম্প্রচার করা হয়।’
ভূটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টিনিও গুতেরাস এবং ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন-সহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাক্সক্ষী ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতা স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে আগামী প্রজন্মের প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের শিশু-কিশোর, তরুণ সমাজের কাছে আমার আবেদন, তোমরা দেশও দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। ’
বক্তব্যের শুরুতে দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিক এবং বিশ্ববাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু এ জাতিকে বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা। ’
ত্যাগ আর অবদানের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হয়ে ওঠার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন ‘মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। তাই তিনি বঙ্গবন্ধু।’
ছোট বেলা থেকেই শেখ মুজিব অন্যের সাহায্যে এগিয়ে যেতেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন জাতির পিতা। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তার জামাকাপড়, বই, ছাতা। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন।’
ব্যক্তি জীবনের বঙ্গবন্ধু চাওয়া পাওয়া কিছু ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের জীবনের কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি।’
বিগত বছরগুলোতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার (বঙ্গবন্ধু) সে ত্যাগ বৃথা যায়নি। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নিজের বাবাকে উদ্দেশে বলেন, ‘পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। ’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয় তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতা মাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জেগে রইবো তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এদেশের মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মম ভাবে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের বাইরে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
ঢাকা/এসএম/হক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন