ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মিরপুরের ভবনে কোয়ারেন্টিনে থাকাদের ক্ষোভ ও আতঙ্ক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২২ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিরপুরের ভবনে কোয়ারেন্টিনে থাকাদের ক্ষোভ ও আতঙ্ক

মিরপুরের ‘লকডাউন ভবন’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া বাড়িটির আর কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তার পরীক্ষা না হওয়ায় এবং নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কগ্রস্থ সেখানকার বাসিন্দারা।

ভবনের সপ্তম তলার আতঙ্কগ্রস্থ এক বাসিন্দা ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন, যাতে ওই বহুতল ভবনের চিত্র এবং বসবাসকারীদের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে । পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো ওই ভবনের আবেগক্ষুব্ধ বাসিন্দার লেখাটি।

‘আমাদের ৩২ টা পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করেই সরকার তার দায়িত্ব শেষ ভাবছে কি না বুঝতে পারছি না । ভেবেছিলাম ৯ তলা বিল্ডিং হয়তো সরকার ডিসইনফেক্ট করার জন্য লোক পাঠাবে। কিন্তু পাঠায়নি (আমরা আমাদের সাধ্যমত ক্লিন করেছি ) । সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম, আমাদের রক্তের স্যাম্পল নিতে লোক আসবে, কিন্তু আসেনি। বিল্ডিং তালা মেরেই তাদের দায়িত্ব শেষ, মরলে আমরা মরব, কার কি? ব্যাপারটা নিয়ে সারাদিন অনেক জল ঘোলা হলো। আমি বাবা-মা মিলে শখানেক ফোন রিসিভ করে বিরক্ত, ফেসবুকে মানুষের মনগড়া স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে ক্লান্ত। শেষ পর্যন্ত তাই ভাবলাম সরকার আর কিছু বিবেচনাবোধহীন মানুষদের নিয়ে কিছু কথা লিখি। শুক্রবার রাত ১১.৪৫ মিনিট থেকে পুলিশ আমাদের বাসা লকডাউন করে দিয়েছে। কারণ হলো আমাদের বাসার ৭ তলার বাসিন্দা প্রফেসর মুহুম্মদ ইসলাম গনি (সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মাদ্রাসা ই আলিয়া, ঢাকা) গত বৃহস্পতিবার থেকে ডেলটা মেডিক্যালে কোভিড সাস্পেক্ট হিসেবে আইসিউতে ভর্তি ছিলেন। রাতে আইসিডিআর থেকে টেস্টের ফল পাওয়ার পর বোঝা গেল, তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। এর পরেই পুলিশ এসে বাসা লকডাউন করে দিল। ভাবলাম সকালে হয়ত কোন পদক্ষেপ নিবে সরকার। সকাল হল, কিন্তু কোন ভাল খবর তো আসেইনি বরং গনি আঙ্কেলের মৃত্যু সংবাদ আসল। তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পর থেকেই বাসার বাইরে পঙ্গপালের মত উৎসুক জনতার ভীড় শুরু হয়। ভাইরাসটি গনি সাহেবের মাঝে কী করে আসল সেটা এখনো খোলাসা হয়নি। আমার জানা মতে তার বাসায় দেশের বাইর থেকে কোন অতিথিও আসেননি। সম্ভবত তিনি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার। এই শিকার আমিও হতে পারি, আমার ষাটোর্ধ্ব বাবা-মাও হতে পারেন, আপনিও পারেন। সুতরাং প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম এটি মেনে চলুন। বিকেলেই অফিসে একটা মেইল দিয়েছি,  রিকোয়েস্ট ফর ওয়ার্কিং ফ্রম হোম এ বিস্তারিত লিখে। দেখা যাক কি বলে। আমাদের বিন্ডিং এ যত বুয়া আছে, কাউকেই পুলিশ ভেতরে ঢুকতে দেইনি। ভাল উদ্যোগ। আমাদের বাসায় যিনি কাজ করেন, সে ফোন করে বলেছে, সে ও তার স্বামী গ্রামে চলে যাচ্ছে। যেহেতু তার কাজ বন্ধ আর তার স্বামী ঢাকায় মানুষ কমে যাবার কারণে রিকশা চালিয়ে তেমন আয় করতে পারছে না। এই বুয়াও গনি সাহেবের বাসায় কাজ করত। এখন প্রশ্ন হল সে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়ে গ্রামে গিয়ে আরও দশজনকে ইফেক্ট করে, তাহলে? আইইডিসিআর থেকে সময়মত টেস্টের ফলাফল না পাওয়ার কারণে ওই সময়ে যেসব ডাক্তার ও নার্স বা কাছের মানুষজন গনি সাহেবের পাশে ছিলেন, সবাই তো এখন রিস্কের মাঝে পড়ে গেল। এরা সবাই তো এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আওতায় পড়ে।’


ঢাকা/মাকসুদ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়