নিজ উদ্যোগেই চলাচল বন্ধ রাখছে গণপরিবহন
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বন্ধ করার নির্দেশনা না আসলেও মালিকপক্ষ তাদের নিজ উদ্যোগেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ বা সীমিত আকারে চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের জন্য ঢাকার রাস্তা এখন প্রায় ফাঁকা। কিছু সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করলেও সিট অধিকাংশই খালি থাকছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের জন্য দূরপাল্লার বাসও বন্ধ রেখেছে অধিকাংশ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। রাজধানী থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ পরিবহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের সেন্টমার্টিন পরিবহন কো লিমিটেডের ম্যানেজার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য দেশের অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না। গতকাল থেকেই আমাদের পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া পর্যটন একালায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার কারণে কেউ যাচ্ছে না। যাত্রী নেই বললেই চলে। তাই আমরা বাস বন্ধ রেখেছি।’
পরিবহনটির মালিক অধ্যাপক কবির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশ এখন প্রায় অচল অবস্থায় রয়েছে। তাই আমাদের পরিবহন বন্ধ রেখেছি। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তারপরে সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন নির্দেশনা আসে তাহলে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেবো।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দূরপাল্লার অনেক পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার কিছু সংখ্যক পরিবহন সীমিত আকারে চলাচল করছে। এর মধ্যে শ্যামলী, হানিফ, লন্ডন এক্সপ্রেস, গ্রীনলাইন পরিবহনসহ আর কিছু পরিবহনের বাস চলছে। তবে সেটা চট্টগ্রাম এবং সিলেট পর্যন্ত।
এছাড়া, আজ সকাল থেকে খুব সীমিত আকারে রাজধানীর মধ্যে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। দুপুরে ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য বাসে উঠছিলেন মোহাম্মদ ইলিয়াস হাসান। তিনি বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে আমি ঢাকাতে থাকছি। মার্কেটিংয়ে কাজ করছি। এজন্য আমাকে প্রতিদিনই বাইরে বের হতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন দেশের এমন অবস্থা যে বের হতেই ভয় লাগে। তবু জীবিকার জন্য বাইরে বের হতে হয়। বাইরে বের হয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেখছি, ঢাকায় পর্যাপ্ত বাস আছে কিন্তু যাত্রী নেই। বাস একদম খালি যাচ্ছে। রাস্তাঘাটও অনেক ফাঁকা তাই চলাচল করে আরাম পাচ্ছি।’
কথা হয় রাজধানীর মিরপুর ১ থেকে কাশিমপুর রুটের বাস কিরণমালার বাসের চালক মো. শুভর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে যাত্রী পাচ্ছি না। করোনাভাইরাসের কারণে কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। অনেক অফিস বন্ধ থাকায়ও যাত্রীর পরিমাণ কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসের মালিক বাস নিয়ে বের হতে নিষেধ করেছে কিন্তু বাস বন্ধ থাকলে আমরা খাবো কী? গত পাঁচ দিন বাসায় বসে ছিলাম। তাই আজ বাধ্য হয়ে বাস চালাতে আসছি। কিন্তু যাত্রী কম থাকায় তেল বা গ্যাস খরচই উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন ভাবছি মালিককে কী দেবো বা আমরা কী নেবো।’
প্রতিদিন বাস রাস্তায় বের করলে মালিক কতো টাকা নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দিনে যদি এক টাকা আয় হয় সেটাও মালিক পাবে আর ১০ হাজার টাকা আয় হলে সেটাও মালিক পাবে। আর আমাদের বেতন দেয় ট্রিপ হিসেব করে। প্রতি ট্রিপে বাস চালকরা পাই ৪০০ টাকা আর সহযোগীরা পায় ২৫০ টাকা করে। আর খাওয়া বাবদ পাই ২০০ টাকা।’
কিরণমালা বাসের মালিক মোহাম্মদ বড় মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে কথা বললে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই দিন ধরে আমি আমার বাস চালকদের রাস্তায় বাস নামাতে নিষেধ করেছি। কিন্তু অনেক বাস চালক ও সহযোগীরা আমাকে বলেছে যে বাস না চালাতে ওদের নাকি সংসার চলছে না। তাই কয়েকজনকে বাস চালাতে অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু ঢাকা শহর এখন প্রায় ফাঁকা। কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। তাই বাস রাস্তায় নামালে লোকসান হচ্ছে। হয়তো আগামীকাল থেকে বাস রাস্তায় নামাতে নিষেধ করবো। লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করা যাবে না।’
করোনাভাইরাসের জন্য রাজধানীতে গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকে নিজ নিজ উদ্যোগে বন্ধ করে দিচ্ছে। কারণ যাত্রী পাচ্ছে না। তবে আমরা সতর্ক আছি, পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত রাইজিংবিডিকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। এরই অংশ হিসেবে যানবাহন চলাচল সীমিতকরণের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে এটি ব্যাপক আকারে সংক্রমিত হতে অন্যতম মাধ্যম হতে পারে লোকাল বাস, বাজার ও জনসমাগম। এখনই উপযুক্ত সময় আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন করপোরেট অফিসগুলো তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে পারে। সরকারি অফিসগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি বাস ব্যবস্থা আলাদা চালু রাখতে পারে। বাকি লোকাল বাসগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে।
ঢাকা/হাসিবুল/জেনিস
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন