ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হোম কোয়ারেন্টাইন: সচেতন শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হোম কোয়ারেন্টাইন: সচেতন শিক্ষার্থীদের ভাবনা

উপরের সারিতে-রাফিয়া সামিয়া ইসলাম ও নুসরাত জাহান মিমি। নিচের সারিতে- জেরিন আনজুম তানহা ও ইসরাত জাহান তিথি

বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা নেই। ক্লাসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেই পড়াশুনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সব কিছু বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারপরও থেমে নেই জীবন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার  কাছের মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করে তুলছেন।

দেশের নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন চারজন শিক্ষার্থী হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা দিনগুলো নিয়ে অনুভূতি তুলে ধরেছেন রাইজিংবিডির কাছে।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাফিয়া সামিয়া ইসলাম। ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে  রয়েছেন।

হোম কোয়ারেন্টাইনে কেমন কাটছে, কি করছেন- জানতে চাইলে সামিয়া বলেন, এরকম দুর্যোগ পরিস্থিতি আগে কখনো ফেস করিনি। এ পরিস্থিতিতে নিজেকে দায়িত্ব নিয়ে পড়তে হবে। আমি সেটাই করছি। পরিকল্পনা করে সময়কে কাজে লাগাচ্ছি। কিছু সময় পড়ছি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি ক্লাস করেছি। কিছু সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে সচেতন করছি। করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিজেকে সবসময় আপডেট রাখছি। আমি যেহেতু আইনের ছাত্রী তাই মানুষকে সচেতন করা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। শুধু নিজে সচেতন হলে বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলে চলবে না। পরিবারের অন্যদের, আশে-পাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। আমাদের বাসার কাজের মেয়েকে সচেতন করেছি। তাকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে দিয়েছি। আমি মনে করি, এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সবকিছু শুধু সরকারের ওপরে ছেড়ে দিলেই হবে না। যার যার জায়গা থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অচিরেই করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে পারবো, এটা আমি বিশ্বাস করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান মিমি। 

হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো সম্পর্কে মিমি বলেন, বই পড়ে, টিভি দেখে, স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে মূলত সময় কাটছে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের সচেতন করার কাজ করছি। আগে ভাবতাম হাতে সময় নেই। এখন এত সময় যে অনেক সময় বিরক্ত হই। তবে সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মতো শিক্ষিত তরুণদের এ মুহূর্তে শুধু নিজে কোয়ারেন্টাইনে থাকলে চলবে না। আরো ১০ জনকে বুঝিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বা ফোন দিয়ে এ দায়িত্ব আমরা পালন করতে পারি। কারণ আমরা হয়তো সচেতন। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে দেশের অধিকাংশ মানুষে করোনাভাইরাস, হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে ধারণা নেই। আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের তাকে সচেতন করা উচিত।

আমি এর মধ্যে অনলাইনে কোভিড-১৯ এর ওপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি কোর্স করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাসায় বসে এ কোর্স করে মানুষকে সচেতন করতে পারে বলে আমি মনে করি।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তিথি।

হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে তিথি বলেন, ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পরই গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাড়িতে এসে সবাইকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে, হোম কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝিয়েছি। আমার বাবা তো ব্যবসায়ী। প্রথমে বাসায় থাকতে চাইতো না। আমি তাকে বুঝিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে উদ্বদ্ধু করেছি। এখন সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে। পড়াশুনা করে, গান শুনে, গান গেয়ে সময় কাটছে। তবে বন্ধুদের, প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খুব মিস করছি।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আনজুম জেরিন তানহা। তানহা বলেন, সব রুলস ফলো করে ১৭ মার্চ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি। পরিবার ও কাছের মানুষদের উৎসাহিত করছি তারা যেন হোম কোয়ারেন্টাইন সঠিকভাবে মেনে চলে। ফেসবুকে সচেতনামূলক অনেক পোস্ট দিয়েছি।

সময় কাটছে পড়াশুনা করে, ফেসবুকিং করে। ২৯ মার্চ থেকে অনলাইনে ক্লাসে শুরু হবে, তার অপেক্ষায় আছি।

 

ঢাকা/মেহেদী/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়