ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গুজব মনিটরিংয়ে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩০ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুজব মনিটরিংয়ে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন

‘ইতালিতে লাশের স্তূপ’- এমন শিরোনামে ফেসবুকে আপলোড হওয়া একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় বাংলাদেশে। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্টিকর্তার কৃপা কামনা করে আপলোড হওয়া ওই ভিডিও ক্লিপ মূলত একটি টিভি সিরিজের। বিনোদন ভিত্তিক আমেরিকান ‘হলমার্ক চ্যানেলে’ ২০০৭ সালে প্রচারিত হয় ওই সিরিজ। সেখান থেকে সারি সারি লাশের একটি দৃশ্য কেটে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার চালালে অনেকে এটি শেয়ার করেন। অনুধাবন করেন, কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা নিয়ে; আতঙ্কিত হন, বিমর্ষ হন মনে মনে।

বিকৃতভাবে জন্ম নেওয়া এক শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে প্রচার করা হচ্ছিল, শিশুটি সিলেটের জকিগঞ্জে জন্ম নিয়েছে। সে ২০ মিনিট বাঁচবে এবং করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক কী সেটাও জানিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভাইরাল হওয়া ওই ছবি বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলের না, কারণ ছবিটি যে হাসপাতালে তোলা হয়েছিল তার পেছনে হিন্দি ভাষায় লেখা ছিল।

এসব গুজবের উৎস বের করে প্রতিদিনিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক তথ্য তুলে ধরছে বিডি ফ্যাক্ট চেক নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। তারপরও গুজবের কমতি নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুঁইফোড় অনলাইন গণমাধ্যমে। এমনকি ভাইরাল হওয়া অনেক মিথ্যা তথ্য চলে আসছে মূলধারার গণমাধ্যমও।

ফ্যাক্ট চেক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে যে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে মানুষ না বুঝে তা গ্রহণ করছে। শেয়ার করে এগুলো সব জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরফলে মানুষ ভুলতথ্য গ্রহণ করছে এবং সঠিক তথ্যগুলোর ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলছে, গুজব প্রতিরোধে তারা সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আবার কখনো কখনো মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

গুজব রটিয়ে আতঙ্ক বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে আইনের আওতায় আনা হবে বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে পুলিশ ।

বিডি ফ্যাক্ট চেকের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির রাইজিংবিডিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতো বেশি গুজব ছড়াচ্ছে আমরা ফ্যাক্ট চেক করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। অনেকে স্বজ্ঞানে সোর্স ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রচার করছেন। মূল বিষয় বাদ দিয়ে ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে দিচ্ছেন। আর অনেকে না বুঝে সেগুলো শেয়ার করে ভাইরাল করে দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, মূলত তিনভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। প্রথমত, সূত্র ছাড়া লেখা তথ্য এবং বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, ক্লিকের আশায় অনির্ভরযোগ্য ওয়েভসাইটে ভুয়া তথ্য প্রচারের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তৃতীয়ত, মূল ধারার গণমাধ্যম স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর তথ্য যাচাই না করে সংবাদ প্রকাশ করছে। বিদেশি সংবাদের ক্ষেত্রে ভুল অনুবাদও করে গুজব ছড়াচ্ছে।

কদরুদ্দীন শিশির বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য মূলধারার গণমাধ্যমকে দায়িত্ব নিতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের ফ্যাক্ট চেকের বিষয়ে পর্যপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মিডিয়া লিটারেসি সম্পর্কে বোঝাতে হবে। তা না হলে গুজব আরো মহামারি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

গুজব প্রতিরোধে সরকারকেও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে সরকার তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এ ধারণা সরকারকেই ভাঙতে হবে। মূল ধারার গণমাধ্যমে আসছে করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে বা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন অথবা আইসোলশনে থেকে মারা যাচ্ছে। এর সংখ্যা প্রায় ২০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সরকার বলছে ৫ জন মারা গেছে। কিন্তু বাকিদের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। ফলে মানুষের ধারণা তৈরি হয়েছে যে সরকার তথ্য গোপন করছে।

তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে গুজব কমে আসবে বলে মনে করেন কদরুদ্দীন শিশির।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার বলেন, গুজব প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোম মাধ্যমে আমারদের নজরদারি অব্যাহত। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে বিভিন্ন সময়ে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। 

এসব বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া বলেন, করোনা যখন শুরু হলো, মাস খানেক আগে তখন গুজব ছড়ানোর দায়ে দু'য়েকজনকে আটক করেছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম তারা না বুঝে শেয়ার করেছে। পরে আন্ডারটেকেন দিয়ে অভিভাবকদের কাছে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ঢাকার বাইরে কয়েকটা জেলার (করোনা সম্পর্কিত রেসপেক্টিভ জেলা) প্রশাসনকে বলায় তারা কয়েকজনকে ডেকে এনে কথাবার্তা বলেছেন। এখন কারা গুজব ছড়াচ্ছে এগুলো বের করার চেষ্টা করছি। শনাক্ত হওয়া কিছু বিষয় আমরা ফেসবুকে রিপোর্ট করছি।

গুজব সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান আ ফ ম আল কিবরিয়া।



ঢাকা/নূর/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়