ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হোম কোয়ারেন্টাইন: তাদের পরামর্শ ও ভাবনা

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৯, ৩১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হোম কোয়ারেন্টাইন: তাদের পরামর্শ ও ভাবনা

বাম থেকে-ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ,ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষ কার্যত স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের নাগরিকরাও এখন হোম কোয়ারেন্টাইন বা ঘরে অবস্থান করছেন।

একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে করোনাভাইরাস রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে কীভাবে দিন পার করছেন, কেমন করে কাটানো উচিত-তা নিয়ে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান। সরকার ও নাগরিকদের পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, বৈশ্বিক এ দুর্যোগে ঘরে না থাকার কোনো বিকল্প নাই। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও আমরা আসলে কাজ থেকে দূরে নেই বা থাকতে পারি না। করপোরেট সেক্টরে যেহেতু আমার বেশি কাজ, এ সময় অনলাইনে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সীমিত আকারে যোগাযোগ রাখছি। ব্যস্ততার কারণে আগে বন্ধু-আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর নিতে পারতাম না। এখন সবার সঙ্গে ফোনে-ফেসবুকে যোগযোগ বৃদ্ধি করেছি।  হাতে তো পর্যাপ্ত সময়। যতটুকু সম্ভব এ সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। বাচ্চাদের সময় দিচ্ছি।

কোর্ট চলাকালীন তো আইনি বই ছাড়া অন্যকোনো বই পড়ার সুযোগ পেতাম না। এখন আতাউর রহমান খানের লেখা ‘ওজারতির দুই বছর, মুখ্য মন্ত্রীত্বের দিনগুলি-১৯৫৬-১৯৫৮  ও বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘ আমার দেখা নয়াচীন’ বইগুলো পড়ছি।

এ সংকটময় মুহূর্তে সবার প্রতি আমার আহবান- প্রত্যেকে নিজের অবস্থানে থেকে মানুষকে সহযোগিতা করুন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। এটা আমি নিজেও করছি। আমি বলবো, এটা এমন এক সময়, আপনি যদি ১০০টাকা ইনকাম করেন,তার মধ্যে ১০ টাকা অসহায়/অসচ্ছল মানুষকে দিন। তাদের হক আদায় করুন।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, দুই সপ্তাহ হলো চেম্বার বন্ধ রেখে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসা থেকে কাজ করছি। স্কাইপি-মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মিটিং করছি। সত্যি বলতে কি দিনগুলো পরিবারের সবার সঙ্গেই কাটছে। শুকরিয়া আদায় করছি আল্লাহর কাছে, আমাদের তো বাড়ি আছে, খাবার আছে, আপাতত সবাই সুস্থ আছি। কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, হতাশ হচ্ছি দেখে যেপর্যাপ্ত সংখ্যক তো দূরের কথা করোনাভাইরাস পরীক্ষা একেবারেই হচ্ছে না।যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার বলছে, প্রতিটি দেশে প্রায়োরিটি বেসিসে করোনা টেস্ট, আইসোলেট করতে হবে। আমরা কোনটাই করছি না। কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশেন হেলথ কেয়ার সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল। তাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাগুলোকে এ সংকট থেকে বের হয়ে আসতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতের দ্রুত সুরক্ষা সামগ্রী দিতে হবে। 

তিনি বলেন, আশা করছি অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধের সময় আরও বাড়ানো হবে, যেন করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে। এটাকে ছুটি বলাটাও উচিত হবে না। দেশের স্বার্থে, প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থে তা করতে হবে।

সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, যদি বের হতেই হয় মাস্ক পরে বের হবেন। নিজেকে ৬ ফুট দূরে রাখবেন। সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুয়ে নেবেন ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। হাত দিয়ে চোখ-মুখ ধরবেন না।

ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। আরও কতদিন থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহই জানেন। এতো সময় তো এমনি এমনি নস্ট করতে পারি না। আমি একটি রুটিনের মধ্যে দিয়ে সময় পার করছি। সন্তানদের সময় দিচ্ছি। রান্নার করার তো সুযোগ-সময় কোনটাই হতো না। এখন মাঝে মধ্যে নিজ হাতে রান্না করছি। নিয়মিত নামাজ আদায় করছি।

আমাদের প্রধান কাজ কোর্টে। ৫ এপ্রিল কোর্ট খোলার কথা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি ভালো না হলে হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। তাই ‍কিছু ক্লায়েন্টের সঙ্গে ইমেইল, হোয়াটসআপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি।

পরামর্শ বিষয়ে জানতে চাইলে আনিতা গাজী বলেন, এ মুহূর্তে কোনভাবেই বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। সময়কে কাজে লাগানোর জন্য সবাই রুটিন করে নিতে পারেন। নিজের অবস্থান থেকে মানুষকে সহযোগিতা করুন।

 

ঢাকা/মেহেদী/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়