ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ব্যয় ৭৬ হাজার কোটি টাকা

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ব্যয় ৭৬ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের যোগাযোগ আরো উন্নত করতে সড়কের পাশাপাশি রেলপথের দিকেও নজর দিয়েছে সরকার। তাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করবে সরকার। সেজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। আর এ প্রকল্পে রয়েছে মোট ৮টি কম্পোনেন্ট। এ ব্যয়ের মধ্যেই সবগুলো কম্পোনেন্টের কাজ শেষ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

চলমান কারিগরি প্রকল্পের মাধ্যমেই সম্ভাব্য ব্যয় বের করা হয়েছে। অধিকাংশ অর্থই এডিবি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এডিবি ঋণের পাশাপাশি সরকারি অর্থায়নেও এ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের বিপরীতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ঠিক করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৩টি নদীর ওপর রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণের লক্ষে ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ক্লাসিফিকেশন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরাবর অনুরোধ করা হয়েছে। নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী প্রস্তাবিত ব্রিজের উচ্চতা বিদ্যমান ব্রিজের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে।

সূত্র আরো জানায়, বিআইডাব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স রেখে ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে এবং ব্যয় বাড়বে।

প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। কক্সবাজার হচ্ছে পর্যটন এলাকা। তাই ওখানে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক যায়। এছাড়া কক্সবাজারে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও হাতে নিয়েছি আমরা। যার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা অবশ্যই উন্নত করা জরুরি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সড়ক অবেক করা হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী এর আগেও নির্দেশনা দিয়েছেন রেলপথ ও পানি পথের দিকে নজর দিতে। তাই আমরা রেলপথ আরও বেশি উন্নত করতে কাজ করছি। এছাড়া রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সুবিধা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে একটি কর্ডলাইন স্থাপন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীরা চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি ও বিলম্ব এড়িয়ে রাজধানী থেকে সরাসরি পৌঁছে যাবে কক্সবাজার। এতে যাত্রার সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথ থাকলেও নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডুয়াল গেজে রূপান্তর করা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে একটি কার্ভ বা কর্ডলাইন নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে যুক্ত করা হবে। ফলে ঢাকা চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হবে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আধুনিক রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর ২০১৭ সালের জুনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়, যা চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে এ কাজ এক বছর বেড়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে মূল ডিপিপি তৈরির মাধ্যমে প্রকল্পের আটটি মূল কাজ শেষ করবে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়,  ঢাকা-সিলেট রেল চলাচলে আখাউড়া জংশন অতিক্রম করতে হতো। প্রায় এক দশক আগে পাঘাচং থেকে আজমপুর পর্যন্ত আট কিলোমিটার কর্ডলাইন নির্মাণের সুবাদে ট্রেনগুলো আগের চেয়ে ১ ঘণ্টা কম সময়ে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন করছে। একইভাবে ফৌজদারহাট থেকে কর্ডলাইন হলে ঢাকা থেকে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে না গিয়ে সরাসরি ষোলশহর স্টেশন হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকেও একই পথে ট্রেনগুলো ঢাকা ও অন্যান্য গন্তব্যে যেতে পারবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনকে চট্টগ্রাম স্টেশনে যেতে হলে সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতির পর লোকোমোটিভ বিচ্ছিন্ন করে ট্রেনের অন্য প্রান্তে সংযুক্ত করতে হবে। এরপর দ্বিগুণ দূরত্ব পেরিয়ে ট্রেনটিকে ষোলশহর স্টেশন পৌঁছাতে হবে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটের পর্যটকরা ভ্রমণকালে এমন বিলম্বে বিরক্ত হবে। গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি সময় লাগবে। এজন্য সময় বাঁচাতে ও যাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে কর্ডলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পযর্ন্ত ৯৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পযর্ন্ত ২৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৭ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনকে ডুয়েল গেজ ট্র্য্যাক নির্মাণ করে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে।

 

ঢাকা/হাসিবুল/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়