ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের দাবি, বিজিএমইএ’র প্রতিবাদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের দাবি, বিজিএমইএ’র প্রতিবাদ

তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত হয়েছে- শ্রমিক সংগঠনগুলোর এমন দাবিকে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উস্কানীমূলক আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তৈরী পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। বরং ছুটি ঘোষণার পর শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ার সময় শ্রমিক নেতারা কেন চুপ ছিল, সে প্রশ্নও তুলেছে মালিকদের সংগঠন।

করোনাভাইরাসের মতো মহামারিতে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারাখানায় এমন ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে গত ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) দাবি করে।

এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ’র সচিব কমডোর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক (অবঃ) সই করা চিঠিতে এর প্রতিবাদ জানায় বিজিএমইএ। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, ২৬ মার্চ হতে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানার সমূহ বন্ধ রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর কথা উল্লেখ দায়ভার চাপানোর চেষ্টা হয়েছে।

বিজিএমইএ জানায়, শ্রমিক সংগঠনগুলো অন্যায়ভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ এনেছে। করোনাভাইরাসের কারণে কোন কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করুক, বিজিএমইএ তা চায় না।  সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যাতে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই না করে।  বে-আইনিভাবে কোন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে অবহিত করার অনুরোধ রয়েছে।

বিজিএমইএ’র ব্যখ্যায় বলা হয়েছে, বিজিএমইএ কোন অবস্থাতেই বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদানের আইনগত কর্তৃত্ব রাখে না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরী রপ্তানি কাজে নিয়োজিত কারখানা ও পিপিই তৈরিকারী কারখানা ব্যতীত অন্যান্য সকল কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে আহ্বান জানায় সংগঠনটি।

করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেতে থাকলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও শ্রমিক প্রতিনিধিবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন যে, পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়।   তাই কোন প্রকার সমন্বয়হীনতার দায় বিজিএমইএ নিবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মার্চের জাতীয় ভাষনে ২৬ মার্চ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেন। যা পরবর্তীতে ১২ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। প্রয়োজনে ঔষধ শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা, আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি অপরিহার্য পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প কল-কারখানা চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

তাছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবে ৫ এপ্রিল খোলার নোটিশ দিয়ে পোশাক কারখানা ছুটি দেয়ার শর্তে শ্রমিকদের ঢাকায় যার যার বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ছুটি শেষে শ্রমিকদের দলবেঁধে ঢাকায় ফেরার দৃশ্য আমাদের নজরে আসলে আমরা সকলের সাথে পরামর্শক্রমে পুনরায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো শ্রমিকরা যখন ঢাকা থেকে বের হল, শ্রমিক সংগঠনগুলো কেন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দোষ চাপানো ও উস্কানিমূলক বিবৃতি প্রদান করে দায় এড়াতে পারেন না শ্রমিক নেতারা।

এছাড়া আছে স্ব-বিরোধী মন্তব্য। এর মধ্যে রয়েছে, ৫ এপ্রিল কাজে যোগদান না করলে চাকরি চলে যাওয়া, বেতন স্থগিত বা বিলম্বে পরিশোধ করা, লে-অফ, শ্রমিকের মজুরি কর্তন, শ্রমিক ছাঁটাই ইত্যাদি। এসব বিষয়ের সঙ্গে বিজিএমইএ একমত নন এবং কারাখানা মালিকদের যে কোনো বেআইনী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ।

গত ১২ এপ্রিল শ্রমিকসংগঠনগুলো ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরিতে বহাল করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানায়।  শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কারখানা বন্ধের অনুরোধ করলেও অনেকেই তা না মেনে উৎপাদন চালিয়ে যান।  তখন কিছু কারখানা সাধারণ ছুটি দিলেও বেশির ভাগই লে-অফ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলে কারখানা লে-অফ করার প্রবণতা বাড়ে। লে-অফ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন পূর্ণ মজুরি পাবেন না। এমনকি যাঁদের চাকরির বয়স ১ বছরের কম, তাঁরা কোনো মজুরি বা ভাতা পাবেন না। লে-অফ ঘোষণা করা কারখানাগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নতুন শ্রমিক (চাকরির বয়স ১ বছরের নিচে)। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ১৬ এপ্রিলের মধ্যে যেসব কারখানা মজুরি দেবেন, তাঁরাও শ্রমিকদের কম দিতে পারে। সেটি হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা জীবন–জীবিকার প্রশ্নে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে সংক্রমণ সারাদেশ ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিদিন, মৃত্যুও বাড়ছে। এর মধ্যে গেল কয়েকদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছে হাজার হাজার শ্রমিক।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়