ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রজননের পর গভীর সমুদ্রে ইলিশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ২ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রজননের পর গভীর সমুদ্রে ইলিশ

ফাইল ফটো

অভয়াশ্রমগুলোর ওপর থেকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই উৎসব করেই ইলিশ শিকারে যায় উপকূলের জেলেরা। কিন্তু এবার সেই উৎসবে ভাটা পড়েছে। অনেক জেলে প্রস্তুতি থাকার পরও সাগর বা নদীতে যায়নি। আবার যারা গিয়েছে তারাও অনেকটা খালি হাতে ফিরে এসেছে। মৎস্যজীবীরা বলছেন, যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে ট্রলারের তেলের টাকাও উঠবে না।

জেলে ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সাগরযাত্রা কিছুটা থমকে গেছে। আবার করোনা পরিস্থিতির কারণে ইলিশ ধরে আনা পর চাহিদা বা বিক্রির বিষয়টাও ভাবাচ্ছে তাদের।

গত ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে মাছের অভয়াশ্রয়গুলোর ওপর সরকার অরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়।

শনিবার (২ মে) ভোলার মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আরশাদ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ৩০ এপ্রিল অভয়াশ্রমগুলো থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেই সমুদ্রে ইলিশ ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সমুদ্রের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে, ফলে খুব কম সংখ্যক ট্রলার মাছ ধরতে সমুদ্রে যায়। কিন্তু তারা খুব একটা মাছ ধরতে পারেনি। মাত্র ৩/৪ হাজার ইলিশ ধরতে পেরেছে। সেগুলোও সাইজে খুব একটা বড় নয়।

তিনি বলেন, আমরা ইলিশ ধরতে আমাবস্যা-পূর্ণিমা মেনে চলি। এখন জোয়ারে পানি খুব কম থাকে। ফলে ইলিশ পাওয়া যায় না। জোয়ারে যখন পানি বাড়বে তখন আশা করি ইলিশ পাওয়া যাবে। কারণ প্রতি বছরই সরকারের নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে ইলিশ ধরার হার বাড়ছে। আশা করছি এবারও ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে আরও ১০/১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আরশাদ আলী বলেন, জেলেদের যা খরচ হচ্ছে তা মাছ বিক্রি করে আয় করতে পারছে না। অন্যদিকে যানবাহন বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে আড়ৎদাররা মাছের ন্যায্য দামও দিচ্ছে না। ফলে এসব ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না জেলেরা। পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই আবার সমুদ্রে ইলিশ ধরা পুরোদমে শুরু হবে।

জোড়খাল মাছ আড়তের মালিক মাসুদ রানা বলেন, এখন সমুদ্রে ইলিশ একটু কম পাওয়া যাবে। কারণ প্রজনন শেষে ইলিশ সমুদ্রে চলে যায়। আবার যখন ফিরে আসে তখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। মাত্র দুদিন হলো নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। এখন কিছু কিছু জেলে সমুদ্রে যাচ্ছেন। তবে খুব একটা ইলিশ ধরা পড়ছে না।

ইলিশের সরবরাহ ও দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সরবরাহ তেমন নাই, ফলে দাম কিছুটা বেশি যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ আমাদের আড়তে ১১শ’-১২শ’ টাকা এবং ৫০০ গ্রামের একটি ইলিশ ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ সাইজের ইলিশ খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর সাইজ অনেক ছোট।

আড়ৎদাররা মাছের দাম দিচ্ছে না। জেলেদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কথাটা ঠিক নয়। বাজারে সরবরাহ এবং চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন দাম নির্ধারিত হয়। দাম নিয়ে কোনো আড়ৎদারের পক্ষে এমন কিছু করা সম্ভব নয়।  

ভোলার ট্রলার মালিক তৈয়ব মাঝি বলেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে বেশির ভাগ ট্রলারই সমুদ্রে যেতে পারেনি। এরমধ্যেও কেউ কেউ গিয়েছেন। তারা খুব ভালো মাছ ধরতে পারেনি। খরচ না ওঠার ভয়ে বেশির ভাগ ট্রলার সুমুদ্রে যাচ্ছে না। ইলিশের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ইলিশ মাছ ধরা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। যেহেতু খুব একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেকেই বসেই আছে। আশা করছি ২০ রোজা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপরই প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।  

দেশে ইলিশ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস ইলিশের ৫টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর। যার মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উর্ত্তীর্ণের পর ইলিশ ধরার ওপর নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা গত বছর নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তা আগামী জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।


হাসনাত/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়