ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সামাজিক দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে কতটুকু?

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১০ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সামাজিক দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে কতটুকু?

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তৎপর রয়েছে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। সরকার এ নিয়ম মানতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবিক পক্ষে তা মানা হচ্ছে কতটুকু?।

যারা 'সামাজিক দূরত্ব’ মানে না তাদের বেশিরভাগই মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ। উচ্চবিত্তের একটা উল্লেখযোগ্য অংশও নানা কৌতূহলে সামাজিক দূরত্ব এড়িয়ে চলছেন। মূলত আত্মসচেতনতার অভাব, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবেই এটি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজবিদ, অর্থনীতিবিদ ও মনোবিদরা।

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলার অন্যতম কারণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়েও বড় সমস্যা অসচেতনতা। নিজেরা যেমন সচেতন না তেমনিভাবে আরেকজনকে বিপদে ফেলছি। সরকারের পক্ষ থেকে যেটি বলা হয় সেটিকে অনেকেই ডিনাই করে। এ গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আমাদের আজকের এই খারাপ অবস্থা। যারা আইন মেনে চলে তাদের আরও বেশি জোরালো ভূমিকা রাখার দরকার ছিল এক্ষেত্রে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। সরকারের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের আরও বেশি তৎপর থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, সাবেক তথ্য কমিশনার সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, এক্ষেত্রে সরকার আন্তরিক হলেও আমরা ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অতোটা সচেতন থাকতে পারছি না। অনেকে বেশ ফুরফুরা মেজাজে বাজার করে বাসায় আসছি। কিন্তু এ সময়ে ঘরে বসেই বিভিন্ন কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। যেটার মাধ্যমে বাসায় পণ্য চলে আসছে। আমরা সেটা করছি না। আমরা বাজারে গিয়ে যে করোনা আক্রান্ত হচ্ছি বা আরেকজনকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছি, সেটি আসলে বুঝতে পারছি না। এবং অনেকে বোঝার চেষ্টাও করছে না। কেনাকাটা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায়, জায়গায় বুথ সিস্টেম করে দেওয়া যেতে পারে। যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জিনিসপত্র নিয়ে আসা যায়। আমাদের যে মিডিয়াগুলো রয়েছে, সামাজিক মাধ্যম রয়েছে, সেগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, প্রথমত- আমাদের বড় একটি অংশ সচেতন নয়। যার কারণে আমরা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছি না। দ্বিতীয়ত, আমরা সচেতন হলেও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছি না। কারণ আমরা বুঝতে পারছি না কে আক্রান্ত। শনাক্ত করার সুযোগ না থাকায় অনেকে দূরত্ব রক্ষা করছে না। তৃতীয়ত, আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার যারা রয়েছেন তারা একে অপরের সঙ্গে অকপটেই মিশে যাচ্ছেন। এবং অনেকেই ভেবে থাকেন যে, একসঙ্গে দুজনে মরবো বা আমাদের ফ্যামিলির একসঙ্গে সবাই মরবো। এমনটা চিন্তা ভাবনা অনেকের ভেতরে থাকে। পরিবারের সদস্যদের ভেতর দূরত্ব রাখা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, যাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই বোঝে না সামাজিক দূরত্ব জিনিসটা কি। এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য তাকে যা যা করা প্রয়োজন সেটি অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে না। একজন মানুষকে ঘরের মধ্যে বসে থাকার জন্য বললেই হবে না অথবা সামাজিক দূরত্ব বিষয়টি বলে দিলেই হবে না, তাকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য যা যা করতে হবে সেই ব্যবস্থাপনা সরকারকেই নিতে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় তো আছেই। ফলে অনেকে বিষয়টি ইচ্ছা অনিচ্ছায় উড়িয়ে দিচ্ছে। এবং সবার জন্য বিপদ বাড়াচ্ছে। সুতারাং, মানুষকে বোঝাতে হবে।

মনোবিদ অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বিষয়। একটা মানুষ ভাবে, সে যদি বেঁচে না থাকে তাহলে তার এ দূরত্ব রক্ষা করে কি লাভ হবে? তারা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হচ্ছে এবং একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আরেকটি শ্রেণি আছে যাদের অর্থনৈতিক সমস্যা নেই। তবুও তারা তাদের কৌতূহলের জায়গা থেকে বের হচ্ছে। আরেকটি অংশ আছে যারা এখনও ভাবতে পারছে না এটি ব্যাপকভাবে আমাদের সারাদেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। সেই ভীতিটা কাজ করছে না বলে অনেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছে না।


ঢাকা/ইয়ামিন/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়