কেমন ঈদ কাটালেন চিকিৎসকরা
করোনা সঙ্কটে টালমাটাল গোটা জাতি। এরমধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদও কাটছে নিরানন্দে। তারপরও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের প্রথম প্রহর কেটেছে অনেকের। তবে এরমধ্যে ব্যতিক্রম হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে ঈদে তো পরিবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয়নি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সেই সুযোগও নেই।
ঈদের সকালটা ভালো যায়নি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও। অসুস্থতা ও সুস্থ হয়ে কবে ঘরে ফেরা হয় তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে তাদের।
হাসপাতালে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ঈদে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও অর্ধেক ছুটিতে যেতে পারতেন। চিকিৎসকরাও থাকতেন অনকলে। অর্থাৎ রোগী আসলে তাদের ফোন করা হতো। তখন আসতেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার কারোরই ছুটি নেই। এমনকি করোনা ওয়ার্ডে নির্ধারিত সময় দায়িত্ব পালন করে বাসায়ও যেতে পারছেন না তারা। থাকতে হচ্ছে সরকারি নির্ধারিত আবাসনে।
ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সুযোগ নেই তাদের। তবে রোগীদের সেবার দেওয়ার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন বলে জানাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরতরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
কয়েকজন রোগীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে না পারায় কিছুটা কষ্ট হলেও তারা অপেক্ষায় সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা নিয়ে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, করোনার ও ঈদের কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার কমেছে। তবে করোনা ইউনিট ও হাসপাতাল-২ (করোনা রোগীদের জন্য) এ প্রায় চার শতাধিক সন্দেহভাজন ও পজেটিভ কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া ক্যাজুয়ালিটিতে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী আসছেন। অন্যান্য ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি রয়েছে। এসব রোগীদের চিকিৎসায় তিন শিফটে চার শতাধিক তরুণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। তাদের সহযোগী হিসেবে নার্স ও স্বস্থ্যকর্মীরাও রয়েছেন।
করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালেও রোগীদের নিয়ে চিকিৎসকদের দিন কেটেছে। পরিবার ছেড়ে আলাদা থেকে ঈদের দিন রোগীদের সেবা দিতে মন খারাপ থাকলেও কিছুটা আত্মতৃপ্তিও চিকিৎসকদের।
হাসপাতাল কর্মরত এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সবার থেকে দূরে আছি, কিন্তু যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাদের তো পাশে আছি। এটাই আমাদের তৃপ্তি।’
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রোগীদের কীভাবে উন্নত সেবা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তবে অনেক দিন পরিবারের বাইরে থাকা ও ঈদে তাদের সঙ্গে মিলতে না পারায় অনেকে মধ্যে খারাপ লাগছে হয়তো।’
ল্যাব এইডে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেন তৃপ্তি বৈরগী। তিনি বলেন, ‘মন চাইলেও বাড়ি যেতে পারছি না এবার। সকাল থেকে ল্যাবে সময় কেটেছে।’
ঢামেকের ওয়ার্ড বয় নিজাম বলেন, ‘করোনার কারণে ছুটি পাইনি, তবে হাসপাতালে ঈদ খারাপ যাচ্ছে না। যাদের সঙ্গে সারা বছর থাকি তাদের সঙ্গেই আছি।’
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. জাহিদ আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে জেনেই চিকিৎসক হয়েছি। সঙ্কটময় মুহূর্তের কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা যাচ্ছে না। তবে রোগীদের পাশে থেকে ভালোই লাগছে।’
ঢামেক হাসপাতালে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. ওয়াহেদুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘অন্য ঈদগুলোতে ছুটি না থাকলেও নামাজ পড়ে বাসায় যেতাম। পরিবারকে সময় দিতে পারতাম। অনকলে চলে আসতে পারতাম। কিন্তু এবার সে সুযোগ নেই। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকায় পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় না। ভার্চুয়ালি যোগাযোগ হয়। তবে কষ্টের মধ্যে আনন্দ হলো রোগীদের সেবা দিতে পারছি।’
সিলেট থেকে হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা নিতে আসা সৈয়দ দুলাল আহমেদ বলেন, ‘এই প্রথম কোনো ঈদ পরিবারকে ছেড়ে করলাম। এখন দ্রুত যেন সুস্থ হই সেই প্রত্যাশা করছি। বাড়ির জন্য মন কাঁদছে।’
ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘করোনা ইউনিট ও হাসপাতাল-২ মিলিয়ে চার শতাধিক রোগী আছেন। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন আবার নতুন আক্রান্তরা ভর্তি হচ্ছেন। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎক, নার্স ও স্বাস্থকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ঢাকা/নূর/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন