হীরা কেনায় সতর্ক হওয়ার আহ্বান 

সারা দেশে হীরার অলঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণা এড়াতে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অলঙ্কার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। 

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুসের কার্যালয়ে সংগঠনটির স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং আয়োজিত ‘অলঙ্ককার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, বাজুসের সদস্য প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড হাউসের নাম ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের একাধিক স্থানে একটি অসাধু চক্র নিত্য নতুন শোরুম খুলেছে। এসব শোরুমের নাম দেওয়া হচ্ছে ডায়মন্ড হাউস, যা প্রকৃত অর্থে প্রতারণা। বাজুস সদস্য প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড হাউসের শোরুম শুধু রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে আছে। তবে, একটি প্রতারক চক্রের দ্বারা পরিচালিত ভুঁইফোর ডায়মন্ড হাউস নামের শোরুম থেকে ক্রেতারা অলঙ্কার কিনে প্রতারিত হলে, তার দায় বাজুস নেবে না। ভুঁইফোর ডায়মন্ড হাউস নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। 

বাজুসের সহসভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন— সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসান, মাসুদুর রহমান ও সমিত ঘোষ অপু, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল প্রমুখ। 

উল্লেখ্য, অলঙ্কার শিল্পের ঐতিহ্য, ব্যবসায়িক সুনাম ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত ২৪ জুন অলঙ্কার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩ প্রণয়ন করেছে বাজুস। এতে হীরা বা ডায়মন্ডের অলঙ্কার ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে বাজুস বলেছে, ১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে কালার ও ক্ল্যারিটির সর্বনিম্ন মানদন্ড হবে আইজে ও এসআই-টু। ৫০ সেন্টের ওপরে সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেট দিতে হবে। ডায়মন্ডের গহনায় স্বর্ণের সর্বনিম্ন মানদণ্ড ১৮ ক্যারেট। অর্থাৎ ডায়মন্ডের গহনায় ১৮ ক্যারেটের নিচের মানের স্বর্ণ ব্যবহার করা যাবে না। ডায়মন্ডের অলঙ্কার বিক্রির সময় বাধ্যতামূলক ক্যাশমেমোতে গুণগত মান নির্দেশক উল্লেখ করতে হবে। ডায়মন্ডের অলঙ্কার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার কাছ থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ বাদ দিতে হবে। ক্রেতা সাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য ডায়মন্ডের অলঙ্কার বিক্রির সময় কোনো প্রকার প্রলোভনমূলক উপহার সামগ্রী বা একটা কিনলে একটা ফ্রি এই ধরনের অফার দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে আসল ডায়মন্ডের নামে নকল ডায়মন্ড (মেসোনাইট, সিভিডি, ল্যাব মেইড, ল্যাব বর্ন ইত্যাদি) বিক্রি করলে ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডায়মন্ডের গহনার মান নিশ্চিত করতে মানসম্পন্ন ডায়মন্ড ল্যাবের সনদ থাকতে হবে। ডায়মন্ড অলঙ্কার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া যাবে। যদি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম অমান্য করে তাহলে ৫ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাসহ বিধি মোতাবেক সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সরকারি আইন ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বাজুস বলেছে, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত ও আইনি ঝামেলা এড়াতে নিজ দায়িত্বে বিএসটিআই থেকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ওজন পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষা করে স্টিকার ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে মূল্যবান ধাতু এবং মূল্যবান পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আখ্যায়িত করেছে। এজন্য কোনো গ্রাহক যদি মূল্যবান ধাতু ও পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ১০ লাখ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ নগদ টাকা লেনদেন করে, তাহলে বিএফআইইউ বরাবর গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কিত রিপোর্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদি কমপক্ষে ৫ পাঁচ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। 

বাজুসের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাজুসের নিয়ম অনুযায়ী সদস্যভুক্ত সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক বাজুসের স্টিকার ও হালনাগাদ সনদপত্র শোরুমের ভিতরে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। বাজুসের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে স্টিকার, সনদপত্র ও আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে মিল রেখে সাদৃশ্যপূর্ণ নাম বা নামের পূর্বে-পরে নিউ, দি বা অন্য কিছু বা বিদেশি ব্রান্ডের বিভিন্ন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নাম সংযুক্ত করে নতুন কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। অলঙ্কার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩ অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করা হবে।