গণপরিবহনে ‘বকশিস বিড়ম্বনা’

রাত পোহালেই ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে সামনে রেখে দুই দিন আগে থেকেই রাজধানীতে ঈদ বকশিসের নামে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদের আগের দিন বুধবারও (১০ এপ্রিল) অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহনে ১০ টাকার স্থলে ২০, ২০ টাকার স্থলে ৩০, ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ করে আদায় করা হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, শাহবাগ, সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, মিরপুর, গাবতলী— যেখান থেকেই যাত্রীরা উঠুক না কেন, দিতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি।

বুধবার একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাসচালক ও সহকারীদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে এ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটা ‘ঈদ বোনাস’ বলে দাবি করছেন তারা।

সময় পরিবহনের বাসের যাত্রী রুহুল আমিন এ বলেন, ঈদের দুই দিন আগ থেকে (৯ এপ্রিল) থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আজও জোর করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কাজলা থেকে গুলিস্তান রুটে ১০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান ২০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। সবার বোনাস দেওয়ার শক্তি নেই। সবাই কি বড় চাকরি করে? এগুলো দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেক্টরে জিম্মি হচ্ছে। অভিযোগ করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সময় পরিবহনের সুপারভাইজার জাহিদ হোসেন বলেন, বাসমালিক তো আমাদের বোনাস দেয় না। কী আর করব, যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বোনাস নিচ্ছি। সোমবার থেকে ঈদ বোনাস নেব না।

চিটাগাংরোড থেকে মালিবাগ এসেছেন ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি অল্প আয়ের মানুষ। আমি কোনও বোনাস পাইনি। কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বোনাসের নামে বাড়তি টাকা দিতে দিতেই শেষ।

আকাশ নামের আরেক যাত্রী বলেন, বাসে উঠলে আর নামলেই ১০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ টাকা।

আব্দুর রহিম নামের আরেক যাত্রী বলেন, পরিবহনশ্রমিকরা ঈদের সময় জোট বাঁধে। ঈদ বোনাসের নামে বাড়তি টাকা না দিলে কেউ যেতে পারব না। প্রতিবাদ করলে নাজেহাল করে। বাধ্য হয়েই ঈদ বোনাসের নামে বাড়তি ভাড়া দিচ্ছি।

কাঁটাবন থেকে বংশাল সিএনজি অটোরিকশায় আসা যাত্রী বশির হোসেন বলেন, অন্য সময় এখন যে দূরত্বে এসেছি এখানকার ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তবে আজ ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হলো।  

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে চলাচল করা রিকশাচালকরাও ভাড়ার সঙ্গে বকশিস হিসেবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক যাত্রী।

ফুলবাড়িয়া কন্ট্রোল রুম এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাত্তার বলেন, গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করার বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ঈদের আগে-পরে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা কোনভাবেই আদায় করা যাবে না। শ্রমিকরা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না।