ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শাহানার জীবনের একদিন ।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল

মুহম্মদ জাফর ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাহানার জীবনের একদিন ।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১.
মা গাছে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। শাহানা নিচু হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘এখন কেমন লাগছে মা?” মা চোখ খুলে একটু অপরাধীর মত হাসলেন, বললেন, “ভাল। হঠাৎ করে এতোখানি পথ হেঁটে একটু হাপিয়ে গেছি। আর কিছু নয়।”

শাহানা অভিযোগের স্বরে বলল, “আমি এতো করে বললাম তোমার আসার দরকার নেই, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমাকে নিয়ে চলে এলে, এখন যদি শরীর খারাপ হয়?”

মা দুর্বলভাব হাসলেন, বললেন, “তোর বাবা বেঁচে থাকলে তোকে নিয়ে আসতো না? এখন আমি তোকে একা আসতে দিই কেমন করে?”

শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার বাবা হঠাৎ করে দুদিনের জ্বরে মারা গেছেন। ব্যাংকে একটা ছোট চাকরি করতেন। টেনে টুনে কোনোভাবে সংসার চলত। বাবা মারা যাবার পর হঠাৎ করে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। শাহানা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটাও ভাল করে দিতে পারেনি। পরীক্ষার রেজাল্ট মোটামুটি হয়েছে, এখন শুরু হয়েছে ভর্তি যুদ্ধ। ভর্তি পরীক্ষাকে সবাই তামাশা করে ভর্তি যুদ্ধ বলতো, শাহানা আগে বুঝতো না। ভর্তি পরীক্ষা দিতে শুরু করার পর এখন বুঝতে পারছে। আসলেই একটা যুদ্ধের মতো। তার মতো ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে, তারা যুদ্ধে বেঁচে থাকবে কী না তাতে কিছু আসে যায় না। শাহানার মতো ছেলেমেয়েরা যুদ্ধ করছে একা একা, এই দেশের কেউ তাদের পাশে নেই।

শাহানা চোখের কোন দিয়ে একবার তার মায়ের হাতের দিকে তাকালো, খালি হাত দুটো দেখতে কেমন জানি লাগছে। তার ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাড় করার জন্য সোনার চুড়ি দুটো বিক্রি করে দিয়েছেন। সে মাকে নিষেধ করেছিল, বলেছিল কাছাকাছি এক দুইটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলে পাবো না পেলে নাই। মা রাজি হননি, “বলেছেন তোর বাবার খুব সখ ছিল তার মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। একটু চেষ্টা করি।” সে জন্যে শাহানা একটার পর আরেকটা ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়া অনেক খরচের ব্যাপার। সস্তা হোটেলে থাকতেও অনকেগুলো টাকা বের হয়ে যায়। খরচ বাঁচানোর জন্যে স্টেশনেও একবার রাত কাটিয়েছে। এতো কষ্ট করার পরও যদি কোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পায় তখন কী হবে? শাহানা জোর করে তার মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে দেয়।

ভোর বেলা মা আর মেয়ে এই ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। ভেবেছিল ইউনিভার্সিটির কোনো বিল্ডিংয়ের বাথরুম ব্যবহার করবে। হাত মুখ একটু ধুয়ে নেবে। কিন্তু বিল্ডিংয়ের গেটের সামনে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখা, গেটের সামনে একজন দরোয়ান দাঁড়িয়ে আছে তাদের ঢুকতে দেয়নি। তাই মা আর মেয়ে এই গাছের তলায় বসে আছে।

আস্তে আস্তে ছেলে মেয়েরা আসতে শুরু করেছে। সঙ্গে তাদের বাবা মা। সামনের খালি মাঠটাতে গাড়ি এসে পার্ক করছে। বড় লোকের ছেলে মেয়েরা সেই সব গাড়ি থেকে নামছে, তাদের হাসিখুশী ভাবভঙ্গি, বাবা মায়ের সুখী সুখী চেহারা। শাহানা তাদের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

একজন ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। মা তার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনলেন। মা আর মেয়ে সেই ঝালমুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিল। শাহানা তার হাতের বইটা খুলে একটু পড়ার চেষ্টা করল। পড়ে কী হবে? ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আসে গাইড বই থেকে – গাইড বই পড়ার ইচ্ছা করে না।

এক সময় বিল্ডিংগুলোর গেট খুলে দেওয়া হলো। ছেলে মেয়েরা গেটের সামনে ভীড় করে দাঁড়িয়েছিল। গেট খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড় করে ঢুকতে থাকে, মনে হয় একটু দেরি করলেই বুঝি আর তাদের পরীক্ষা দিতে দেবে না। এক দুইজন অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে ভেতরে ঢুকতে চাইছিল, গেটের দারোয়ান তাদের আটকে দিল। শাহানা ভীড়ের মাঝে মিশে গিয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকে গেল। এডমিট কার্ডের উল্টো পিঠে ক্লাশ রুমের নম্বর লেখা আছে, সেটা দেখে শাহানা রুমটা খুঁজে বের করল। ভেতরে ছেলে মেয়েরা ডেস্কের উপর রোল নম্বর দেখে নিজেদের সিট খুঁজে বের করে বসে পড়ছে।

শাহানা নজেও তার সিটটা খুঁজে বের করে সেখানে বসে পড়ল। ঘরের শেষ মাথায় দেওয়ালের কাছে নিরানন্দ একটা ডেস্ক। শাহানা সেখানে বসে চারদিকে তাকালো। ইউনিভার্সিটি শুনলেই তার চোখের সামনে আলোকোজ্জ্বল ঝকমকে আনন্দময় একটা দৃশ্য ফুটে উঠতো, অথচ কী আশ্চর্য, সে দেখছে কেমন যেন মলিন দীন হীন একেকটি ক্লাশরুম। ময়লা মেঝে, দেওয়ালের কোনায় কোনায় মাকড়শার জাল। শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে তার চার নম্বর ভর্তি পরীক্ষা দেবে। এটি হচ্ছে গ ইউনিটের পরীক্ষা। বিকেলে হবে ঘ ইউনিটের পরীক্ষা। ঘ ইউনিটের পরীক্ষার সেন্টার এখানকার একটা কলেজে, কলেজটা কোথায় কে জানে! খুঁজে বের করতে পারবে তো?

পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েই তাদের ছুটতে হবে বাস স্টেশনে। রাতের বাসে সারারাত জার্নি করে তারা পৌঁছাবে দেশের আরেক মাথায়, সেখানে শাহানা আরো একটা ভর্তি পরীক্ষা দেবে। দুটো ইউনিভার্সিটিতে একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা, তাকে একটা বেছে নিতে হয়েছে। শাহানা বুঝতে পারে না একই দিনে দুইটা ইউনিভার্সিটিতে কেমন করে ভর্তি পরীক্ষা হয় – ছেলেমেয়েরা তাহলে কেমন করে দুটোতে পরীক্ষা দেবে?

ইউনিভার্সিটিতে এতো জ্ঞানী গুনী প্রফেসররা থাকেন, তারা এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না, সেটা কেমন করে হতে পারে?

শাহানা জোর করে তার মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে দিল। মাথা ঠাণ্ডা রেখে তার আজকের পরীক্ষাটা দিতে হবে। তার বাবার খুব সখ ছিল যেন শাহানা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারে। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তার পড়ার ক্ষমতা নেই, কোনোভাবে যদি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে তা হলে দুই একটা টিউশনি করে সে কোনোভাবে হয়তো পড়ার খরচটা চালিয়ে নিতে পারবে। তার বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবে। শাহানা চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে।

২.
বাস স্টেশনে মা আর মেয়ে নিঃশব্দে বসে আছে। ৮টা সময় বাস ছাড়বে, বাসটি এখনো আসেনি। ভালো এসি বাস আছে কিন্তু তার অনেক ভাড়া। একরাতের জন্য এতোগুলো টাকা নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না।

আজকে সে দুটো ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছে। মা’কে বলেনি কিন্তু পরীক্ষা ভালো হয়নি। রাজ্যের আজেবাজে প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা, উত্তরগুলো মুখস্থ করে আসতে হয়, কে এতো মুখস্থ করবে? এই পরীক্ষায় যারা ভালো করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে তারা কী আসলেই ভালো ছাত্রছাত্রী? শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কালকের ভর্তি পরীক্ষাটা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুনেছে এখানে প্রশ্নগুলো নাকী তুলনামূলকভাবে ভালো হয়, মাথা খাটিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। যেখানে মাথা খাটাতে হয় সেখানে শাহানা ভালো করে।

বাস স্টেশনের সামনে একটা বাস এসে দাঁড়াল। এটা তাদের বাস। মা’কে নিয়ে শাহানা বাসের দিকে এগিয়ে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর মা’ অনেক কাহিল হয়ে গেছেন। পরপর বাসে করে এক শহর থেকে আরেক শহরে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আরো কাহিল হয়ে গেছেন। শাহানা নিজেও খুব ক্লান্ত হয়ে আছে কিন্তু মা’কে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না, মা তাহলে দুশ্চিন্তা করবে।

বাসের মাঝামাঝি পাশাপাশি দুটো সিটে মা আর মেয়ে বসে পড়ল। মা বললেন, “শাহানা তুই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়িস। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমাতে হয়।”

শাহানা হাসার চেষ্টা করল, বলল, “মা তোমার ধারনা এই বাসে সত্যি ঘুমানো সম্ভব?”

মা বললেন, “দরকার হলে সব করতে হয়।” শাহানা আর কথা বাড়ালো না, বলল, “ঠিক আছে মা, যদি ঘুম পায় আমি তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাব।”

বাস ছাড়তে বেশ দেরী করল। শাহানা মনে মনে একটা দুর্ভাবনায় পড়ে যায় যদি বাসটা সময়মতো পৌঁছাতে না পারে তাহলে কী হবে? দুর্ভাবনাটা সরিয়ে দেয়, খুব ভোরে পৌঁছে যাওয়ার কথা, একটু দেরী হলেও হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে।

বাসটা শহরের ট্রাফিক জ্যামের ভেতর দিয়ে চলতে চলতে এবং থামতে থামতে এগুতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত শহরের ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে বাসটা হাইওয়েতে উঠে যায়। শাহানা তখন একটু নিশ্চিন্ত হলো। রাতের অন্ধকারে বাসটা ছুটতে থাকে। উল্টো দিক থেকে দৈত্যের মতো বাস ট্রাক আসছে, তাদের হেডলাইটের তীব্র আলোতে চোখ ঝলসে উঠছে, তার মাঝে তাদের বাস ড্রাইভার রীতিমত পাগলের মতো বাস চালিয়ে নেয়। মাঝে মাঝেই বাসটা বাম দিকে আবার ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে, বাসের ভেতর প্যাসেঞ্জাররাও একবার ডান দিকে আবার আরেকবার বাম দিকে কাত হয়ে যাচ্ছে। ঠিক সে রকম অবস্থাতেই মা ফিসফিস করে শাহানাকে বললেন, “মা, তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।”

শাহানা বলল, “করছি মা।” তারপর সে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল। সে ভেবেছিল তার চোখে বুঝি ঘুম আসবেই না। কিন্তু বাসের ঝাঁকুনি এবং ডানে বামে কাত হয়ে যেতে যেতে এক সময় সত্যি সত্যি সে ঘুমিয়ে পড়লো।

তবে ঘুমটা হলো ছাড়া ছাড়া, বাসটা যখনই থামছিলো তখনই তার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। বাসটা আবার যখন চলতে শুরু করে তখন আবার সে একটুখানি ঘুমিয়ে পড়ে। আধা আধা জাগা অবস্থায় সে বাস ড্রাইভারের গলার স্বর, হেল্পারের চেচামেচি, প্যাসেঞ্জারদের ঝগড়া শুনতে পায়। এক সময় মনে হল বাসটা বুঝি অনেকক্ষণ থেকে থেমে আছে। শাহানা ভয় পাওয়া গলায় মা’কে জিজ্ঞেস করলো, “কী হয়েছে মা?”

মা বললেন, “বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে বাসটা নষ্ট হয়ে গেছে।”

শাহানা রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠল। বলল, “নষ্ট হয়ে গেছে? এখন কী হবে?”

মা কোনো উত্তর দিলেন না। কী উত্তর দেবেন বুঝতে পারলেন না। শাহানা জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করল। প্যাসেঞ্জারদের কথা শুনে বুঝতে পারল, আরেকটা বাস এসে তাদেরকে নিয়ে যাবে। ততক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হবে। শুধু তাই না, জায়গাটা নাকি ভালো না। মাত্র কয়দিন আগে এখানে নাকি বাস থামিয়ে ডাকাতি হয়েছে।

দুশ্চিন্তায় শাহানার শরীর খারাপ হয়ে যায়। যদি সময়মতো পৌঁছাতে না পারে তাহলে কী হবে?

৩.
শাহানা সময়মতো পৌঁছাতে পারল না, তিন ঘণ্টা দেরী হয়ে গেল। পরীক্ষা শুরু হতে আধা ঘণ্টা বাকী। এর মাঝে তারা অনেক কষ্টে একটা সি.এন.জি স্কুটারকে রাজী করিয়ে সেটা নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসেছে। সি.এন.জি স্কুটার থেকে নেমে সে যখন তার পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে পৌঁছেছে ততক্ষণে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দরজায় ভারী কলাপসিবল গেটটা টেনে রাখা আছে। সেখানে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। শাহানা ছুটতে ছুটতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “গেটটা খুলেন, আমি ঢুকব।”

দারোয়ান নিরাসক্ত গলায় বলল, “পনেরো মিনিট আগে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এখন ঢোকা যাবে না।” শাহানা কাতর গলায় বলল, “প্লিজ! আমি অনেক দূর থেকে এসেছি! আমাদের বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গেটটা খুলেন, আমাকে ঢুকতে দেন।”

দারোয়ান মাথা নাড়ল, বলল, “উহুঁ। এখন আর ঢুকতে দেওয়া যাবে না। নিয়ম নাই।”

শাহানা চোখের পানি আটকে রেখে বলল, “প্লিজ! প্লিজ! আমাকে ঢুকতে দেন।”

দরোয়ান রাজী হলো না, উল্টো ধমক দিয়ে বলল, “এখানে গোলমাল করো না। যাও।”

ঠিক তখন গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে থামল এবং গাড়ির ভেতর থেকে স্যুট টাই পরা একজন মানুষ নামল। তার সাথে আরো কয়েকজন।

দারোয়ান ব্যস্ত হয়ে শাহানাকে বলল, “সর, সর সামনে থেকে, ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এসেছেন।”

দারোয়ান গেট খুলে দিল এবং তখন স্যুট টাই পরা ত্যালত্যালে চেহারার একজন মানুষ এগিয়ে এল। মানুষটার মাথার চুল মাঝখানে সিথি করে দুই দিকে ভাগ করে রাখা, পকেট থেকে সবুজ রংয়ের একটা চিরুনী বের করে তার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে হেঁটে হেঁটে আসতে থাকে। তার পেছনে পেছনে আরো কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসে।

শাহানা তখন স্যুট টাই পরা মানুষটার কাছে এগিয়ে যায়, কাতর গলায় বলে, “প্লিজ আমাতে ভিতরে ঢুকতে দেন। পরীক্ষা দিতে দেন।”

ত্যালত্যালে চেহারার ভাইস চ্যান্সেলর বলল, “ননসেন্স। যত্ত সব যন্ত্রণা। সরে যাও এখান থেকে। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে জান না? সময় মতো আসতে পারো না?”

শাহানাকে ঠেলে সরিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর এগিয়ে গেল। ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে ভাইস চ্যান্সেলরের মুখটা আবার হাসি হাসি হয়ে উঠল। ভর্তি পরীক্ষায় তার কোনো কাজ নেই, কোনো দায়িত্ব নেই। তিনি শুধু পরীক্ষার হলগুলো ঘুরে দেখেন। এই জন্যে তাকে আশি হাজার টাকা দেওয়া হয়।

শাহানার কী হল কে জানে, সে হঠাৎ ছুটে এসে ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে দাঁড়াল। অবরুদ্ধ অশ্রু আটকে রেখে বলল, “না না, না। আপনারা আমার জীবনটা নষ্ট করতে পারেন না – পারেন না-”

দারোয়ান ছুটে এসে শাহানাকে ধরে টেনে সরিয়ে নিল।

৪.
এটা একটা কাল্পনিক গল্প। কিন্তু এরকম ঘটনা অসংখ্যবার ঘটছে। বাংলাদেশের অসংখ্য পাবলিক ইউনিভার্সিটির গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চ্যান্সেলর আর প্রফেসররা কী জানেন, এই দেশের হাজার হাজার শাহানা তাদেরকে তাদের সর্বগ্রাসী লোভের জন্য অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে? মাননীয় রাষ্ট্রপতির অনুরোধ রক্ষা করে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া কী এতোই অগ্রহণযোগ্য একটা প্রস্তাব?

লেখক : শিক্ষাজীবী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৭/শাহনেওয়াজ   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়