ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনলাইন মিডিয়া ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান || সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনলাইন মিডিয়া ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান || সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

 

বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে অভিযোগ অনেক। যে কোনো আড্ডায় সাংবাদিকতা প্রসঙ্গ উঠলেই অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বলা হয়, হাজার হাজার অনলাইন, সব ‘ভূঁইফোড় অনলাইন’। একটি ল্যাপটপ বা পিসি নিয়ে একজন ব্যক্তি একটি নাম দিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতা করছেন।
কিন্তু অনলাইন মানেই এমন পোর্টাল? মোটেও তা নয়, এমন সাংবাদিকতা তো নয়-ই। প্রাতিষ্ঠানিকতায় সমৃদ্ধ অনলাইন আছে বেশ কিছু, যার একটি রাইজিংবিডি ডটকম। এই অনলাইনগুলো মোটেও অফিস-সাংবাদিকতা নয়। এই সাইটগুলো অনেক বেশি মাঠ-সাংবাদিকতা, সেকথা হয়তো অনেকেই বুঝবেন না। এই অনলাইনের সংবাদকর্মীদের অনেক বেশি সময় কাটে বার্তাকক্ষে এবং একইসঙ্গে তারা ছুটে চলেন মাঠে ময়দানে, তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক সংবাদটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।

মজার ব্যাপার হলো, যারা নিজেদের মূল ধারার বলে দাবি করেন, সেই সব টেলিভিশন ও পত্রিকার সাংবাদিকদের এখন সারাদিন চোখ থাকে এই অনলাইনের উপর। এরাই তাদের সংবাদের প্রাথমিক সোর্স। এখান থেকেই তথ্য নিয়ে ব্রেকিং নিউজ পর্ব সমাপ্ত করেন। সব নয়, তবে ভালো অনলাইনের সাংবাদিকরাই এখন মাঠে বেশি ছোটাছুটি করেন। একটি সংবাদ সংগ্রহ করে ছোটেন আরেকটি সংবাদের খোঁজে। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনই এই সাংবাদিকের অন্যতম হাতিয়ার। ফোনেই নিউজ বার্তাকক্ষে থ্রো করা যায়। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবি এমএমএস হয়ে পৌঁছে যায় বার্তাকক্ষে। ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সচিত্র খবর ভেসে ওঠে ওয়েব পোর্টালে। কখনো কখনো মাঠ থেকেই আপলোড হয়ে যায় খবর, ছবি। যা দেখতে পারেন বিশ্বের যে কোনো অবস্থানে থাকা পাঠক। শুধু একটাই প্রয়োজন-যিনি খবরটি দিচ্ছেন এবং যিনি পড়ছেন দু’জনই হবেন নেটিজেন।
অনলাইনে খবর প্রকাশ মানেই তা কোটি পাঠকের চোখের সামনে চলে যাওয়া। অনলাইনে অভ্যস্ত পাঠক কম্পিউটার খুলে রাখেন অফিসে। মোবাইল ফোনের জয়জয়কারে হ্যান্ড সেটেই থাকে কোনো একটি অনলাইন মিডিয়ার হোমপেজ। হাতের মুঠোয় বিশ্বকে ধরে রেখে খবরপিয়াসী মানুষের সময় কাটে। তারা নিশ্চিত থাকেন, এই জেনে যে, ঘটনা কোথাও কিছু ঘটলে তা চটজলদি হাতের মুঠোয় ধরা দেবেই।
এই যে চাহিদা, যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে, তা মেটাতে অনলাইন সাংবাদিকতাই ভরসা। এ কথা সত্য ইদানীং অনলাইন মিডিয়ার মাশরুম গ্রোথ হচ্ছে। ‘হুজুগে বাঙালি’র বেলায় এটি অস্বাভাবিক কোনো আচরণ নয়। তবে এই থেকে একটি প্রচলিত ধারণা তৈরি হয়েছে যে, স্বল্পসংখ্যক কর্মী দিয়েই একটি অনলাইন মিডিয়া চালানো সম্ভব। তবে ভালো সাংবাদিকতা মানে বার্তা কক্ষের প্রাতিষ্ঠানিকতা।



অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চা বাংলাদেশে শুরু হয়েছে দেড় দশক ধরে। ২০০৪ সালে বিডিনিউজ ২৪ডটকম দিয়ে এই আধুনিকমনস্ক যাত্রা শুরু  হয়। একটি রিপোর্টিং টিম, একটি নিউজরুম টিমের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগের কর্মীদের নিয়ে সংবাদ, ফিচার, খেলা, বিনোদন, তথ্য প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, শিশু এমন সব পৃথক বিভাগ রয়েছে এইসব প্রাতিষ্ঠানিক অনলাইনে। পাশাপাশি সারাদেশের ৬৪ জেলায় জেলা প্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাগুলোতে সংবাদদাতা, বিভাগীয় শহরগুলোতে ব্যুরো অফিস, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতে নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করে এই সাইটগুলো পূর্ণাঙ্গ সংবাদমাধ্যম।
প্রিন্ট মিডিয়ার জয়জয়কার দেখে কথা উঠেছিল যে, সাংবাদিকতা হলো ‘literature in hurry’। এখনকার অনলাইনগুলো তার চেয়েও দ্রুত। অনলাইন সাংবাদিকতা মানে real-time generation of new content. এক্ষেত্রে তথ্য পাওয়া, তথ্য দেওয়া আর তা নেওয়া দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করতে হয়। আর যেহেতু এটিও সাংবাদিকতা, তাই এটিও সাহিত্যগুণের বাইরে যেতে পারে না। খবর পাঠযোগ্য না হলে পাঠক বর্জন করবেই। সুতরাং অনলাইন সাংবাদিকতাকে ‘রিয়েল টাইম লিটারেচার’ বলা চলে।
মূল ধারার মতো এখানে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান আছে, গেট কিপিং প্রক্রিয়াও আছে। অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চা শুরুর পর থেকেই সহকর্মী ও পরিচিতদের একটি কথা বলার চেষ্টা করি, বিশ্বজুড়ে সামাজিক মিডিয়াগুলোর এখন যে জয়জয়কার, এ অবস্থায় এই মিডিয়াগুলোর প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই মেইনস্ট্রিম সাংবাদিকতার চর্চা করতে হবে। আর অনলাইনে মেইনস্ট্রিম সাংবাদিকতার চর্চায় তাই সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানটিও খুব দ্রুততার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।

অনলাইনের কারণে কনটেন্ট এখন আর কাগজে বন্দি নেই। যে কোনো ইস্যুতে বক্তব্য-বিশ্লেষণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিছু দিন আগেও আমাদের ধারণা ছিলো কোনো বিষয়ে তারাই লিখবেন যারা এরই মধ্যে লিখে হাত পাকিয়েছেন। নাম কুড়িয়েছেন। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন। কিন্তু সামাজিক মিডিয়ার বিস্তারে সেই ধারণাকে বলা যেতে পারে অনেকটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দারুণ সব বিশ্লেষণ উঠে আসছে।
প্রিন্ট মিডিয়াসহ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কোনো ধারাই এত দ্রুত এত পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারে না। অনলাইনভিত্তিক মিডিয়ায় এই সুযোগটি রয়েছে। এ অবস্থায় প্রচলিত ধারণার বৃত্ত ভেঙে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে তার কাজের ধরন বদলাতে হচ্ছে। সব কনটেন্টই একটি যোগ্য সম্পাদকীয় প্যানেলের হাতে সম্পাদিত হয়ে অনলাইনে যায়।



প্রচলিত মিডিয়ার চেয়ে অনলাইনে মানুষের অংশীদারিত্ব অনেক বেশি। এখানে পাঠক নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে পাঠ করেন ও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। যোগাযোগের তত্ত্ব বলে, টু-ওয়ে কমিউনিকেশন সবচেয়ে কার্যকর। প্রচলতি সংবাদমাধ্যমগুলো গণ যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় চলে। একটি সংবাদপত্র তথ্য দিয়ে যায়। একইভাবে টেলিভিশন-রেডিও সংবাদমাধ্যম হিসেবে ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশনের চর্চা করে। ফলে তারা জানতে পারে না, পাঠক দর্শকের প্রতিক্রিয়া কী? এ কারণেই হয়তো এসব মিডিয়াকে কনটেন্ট প্রকাশে প্রচারে অনেক বেশি হিসেব-নিকেশ কষতে হয়। ভুল হলে, কোনো পক্ষ বা গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলে রাজপথে পোড়ানো হয় সংবাদপত্র। সংবাদ মাধ্যমে হামলার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু অনলাইনে বা নিউ মিডিয়ায় সুযোগ রয়েছে দ্রুত পাঠক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার। এমনকি পাঠকের প্রতিক্রিয়া দ্রুত প্রকাশ করে তার মধ্যে জাগ্রত ভালোলাগা-মন্দলাগা তুলে ধরা যায়। যদি কোনো কারণে পাঠকের মনে ক্ষোভ তৈরি হয় তবে তা-ও প্রশমিত হয় দ্রুত। ফলে অনলাইন ক্রমেই হয়ে উঠছে পাঠকের প্রিয় মাধ্যম।

 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, সারাবাংলা.নেট ও জিটিভি



 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়