ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সবাই আমরা নিরব দর্শক!

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ২৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবাই আমরা নিরব দর্শক!

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুতেই বাঙালি যে বীরের জাতি তার প্রমাণ রেখেছে। আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমরাই একমাত্র জাতি, মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছি। স্বাধীনতার জন্য দিয়েছি জীবন। পুরো বিশ্ব জানে আমাদের বীরত্বের কথা।

কিন্তু এখন কি হয়েছে, সেই বীরের সন্তানেরা আমরা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অনিয়ম, দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড ঘটলেও নিরব দর্শক হিসেবে তাকিয়ে দেখছি বা মুখ লুকিয়ে নিচ্ছি। তাহলে কি বলা চলে যে, ’৭১ সালের পর আমাদের দেশে আর বীর সন্তান জন্ম নেয়নি?

বুধবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। রিফাতকে কুপিয়ে জখম করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দেখা যায় ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে নিরব দর্শকের মত তা দেখছেন। দাঁড়িয়ে থাকা একজনও প্রতিবাদ করা দূরে থাক, রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, কোন সিনিমার শুটিং চলছে আর দর্শকরা দাঁড়িয়ে তা দেখছেন।

দু’জন সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখান থেকে চলে গেল কিন্তু যারা দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিল তারা যদি সবাই প্রতিবাদ করতেন, এগিয়ে আসতেন তাহলে এই ঘটনার চিত্র হয়ত অন্যরকম হতো।

তবে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য তিনি, যিনি এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছেন। তার এই কাজের জন্য খুব সহজেই সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা গেছে। না হলে হয়তো এক সময়ের বীরের জাতির সন্তানদের সাক্ষী হিসেবেই পাওয়া যেত না। আর প্রমাণের অভাবে সন্ত্রাসীরা বেঁচে যেত।

শুধু রিফাত হত্যাকাণ্ড কেন, এর আগে বিগত বছরগুলোতে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া অনেক হত্যাকাণ্ডেই আমরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছি। বইমেলা থেকে ফেরার পথে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা, ঠিক একইভাবে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন লেখক হুমায়ুন আজাদ। মিরপুরে একই কায়দায় খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। বিশ্বজিতের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই রকম ঘটনা। এ সকল হত্যাকাণ্ড ও আরো অনেক ঘটনার নিরব সাক্ষী আমরা।

এ ধরনের আলোচিত ঘটনা বাদ দেই, সামান্য রাস্তায় কারো সাথে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি হলেও সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা ঘটনা কি হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করি এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য ব্যক্তির সাথে কার দোষ, কার দোষ নেই- তা বিচার করতে শুরু করি। কিন্তু একটিবার এগিয়ে গিয়ে তা থামানোর চেষ্টা করি না। তবে হ্যাঁ, দায় চাপানোর অভ্যাসটা আমরা খুব ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছি। একবারের জন্য আমরা কি চিন্তা করে দেখেছি, নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব। দায়িত্বের কথা বাদ দিয়ে মানবিক দিক থেকে চিন্তা করলেও এ সকল ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্য বিবেক কি একটুকুও নাড়া দেয় না?

শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ না করে এগিয়ে আসি সকল অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। কিছু সংখ্যক খারাপ মানুষের সামনে আমরা নিরব দর্শক হয়ে আমাদের বীরের জাতির পরিচয় ম্লান না করে ফেলি।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৯/নাসির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়