ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জে. কাসেম হত্যা ইরানের আধিপত্য থামানোর প্রথম পদক্ষেপ

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জে. কাসেম হত্যা ইরানের আধিপত্য থামানোর প্রথম পদক্ষেপ

যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সহজ, কিন্তু যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন- এই সত্যটা মার্কিন প্রশাসনের বেশি জানা থাকার কথা। যুদ্ধে একবার জড়িয়ে পড়লে জের দীর্ঘ মেয়াদে টানতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের তাই ঘটেছে। সব জেনেই মার্কিন সরকার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর উপক্রম করেছে।

মার্কিন প্রশাসন হয়ত ধারণা করছে, ইরান যত কঠোরতা দেখাক, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়াবে না। তাদের এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে; ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে দেশটির অর্থনীতি মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের মধ্যে সরকারবিরোধী পক্ষও প্রকাশ্যে এসেছে। তারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করছে। এই অবস্থায় যুদ্ধে জড়ালে ইরানের সরকার এবং জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

ইরানকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা হয়ত মার্কিন প্রশাসনের লক্ষ্যও নয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের যে আধিপত্য সৃষ্টির চেষ্টা, সেটা থামানো তাদের উদ্দেশ্য। যার শুরু জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের বলয় সৃষ্টির চেষ্টার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তার কাজের জন্য শুধু ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে রিপোর্ট করতেন। তার নেতৃত্বেই ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডসের অভিজাত শাখা  কুদস ফোর্স পরিচালিত হতো। এই কুদস ফোর্স ইরাকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে ভূমিকা রাখে এবং এখন ইরাকে এই ফোর্সের বড় তৎপরতা রয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদবিরোধীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বদলে দিয়েছে কুদস বাহিনী। লেবানলে কুদস ফোর্সের বড় প্রভাব রয়েছে, লেবালনের হিজবুল্লাহ কুদস ফোর্সের অনুগত বলে ধারণা করা হয়; যেটা ইসরাইলের উদ্বেগের কারণ। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জেনারেল কাসেমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। হুতিদের নিয়ে সৌদি আরবের সব সময় উদ্বেগ রয়েছে। ইরানের শিয়া মতবাদ তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি কাজ করেছেন; বলা চলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের আধিপত্য বলয় তৈরির চেষ্টার কেন্দ্রে ছিলেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। সঙ্গতভাবেই ইরানের আধিপত্যবিরোধীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট হয়ে উঠেছিলেন জেনারেল কাসেম। 

জেনারেল কাসেমের অভাব দেশটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে অনুভব করবে। ইরানে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এই আঘাত সামলে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখা এখন দেশটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের একেবারে নীবর থাকার সুযোগ নেই। সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলা ইরান লাভজনক মনে করলেও সু-সময়ের জন্য তারা অপেক্ষায় থাকবে। ইরানের বদলা নেয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে এবং পৃথিবীজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর হতে পারে। 

জেলারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা নিঃসন্দেহে এটা এক বড় যুদ্ধের শুরু মাত্র। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে থাকা ইরানকে বশে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভব্য সবকিছু করবে। ইরানকে যদি ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়ার পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে আর কেউ থাকে না।

ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র সুবিধাজনক সময়ে ইরানের সঙ্গে একটি ‘বেটার এগ্রিমেন্ট’ করার কথা বলে রেখেছিল। সেই বেটার এগ্রিমেন্টের জন্য ইরানকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করা গেলে, তখন শুধু পরমাণু কর্মসূচি নয়; মিসাইল কর্মসূচি ছাড়তেও বাধ্য করা সম্ভব হবে বলে মার্কিন প্রশাসনের ধারণা। সেটা ট্রাম্প সম্ভব করতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য থাকবে না।

এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে ইরানের বৈরিতা আরো বাড়বে। এটা না বাড়িয়েও ইরানের নেতাদের নীরবে প্রস্তানের সুযোগ নেই। নিজ দেশে নেতৃত্বের বৈধতা দেখানোর জন্যও সেটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক মিত্রদের আগে দুর্বল করে নেয়ার পথে হাঁটবে ইরান। ইয়েমেনের হুতিদের মাধ্যমে সৌদি আরবে আক্রমণ বাড়তে পারে। আরো সক্রিয় হতে উঠতে পারে হিজবুল্লাহ; এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ইসরাইল আক্রান্ত হতে পারে। তখন সৌদি আবর বা ইসরাইল কেউ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শিয়া ও সুন্নি বিভেদ প্রকট এবং তা দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং প্রতিবেশি দেশগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্বেও প্রভাব ফেলে। এমতবস্থায় আঞ্চলিক পরিস্থিতি এমন জটিল হয়ে উঠতে পারে; যেখানে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই যুদ্ধ শেষে মধ্যপ্রাচ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো কোনো সরকার থাকবে না; সব সরকার হবে পশ্চিমাশক্তির আজ্ঞাবহ সরকার।

 

ঢাকা/বকুল/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়