ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ান

মহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ান

করোনাভাইরাসের কারণে যাদের কপালে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, তারা হলেন দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের মানুষ। আমাদের অনেকের ঝুঁকিটা স্বাস্থ্যগত। কিন্তু তাদের ঝুঁকি শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, তারচেয়ে অনেক বেশি সংকটাপূর্ণ। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিটাও আমাদের চেয়ে বেশি। তাদের অনেকে থাকেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও পয়ঃনিষ্কাশনের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা নেই। ছোট্ট একটি কামরায় অনেক মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নিম্ন আয়ের এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি উৎকণ্ঠিত খাদ্য নিয়ে। তাদের একটাই কথা- কাম না করলে খামু কেমনে?

বউ বাচ্চারে কী খাওয়ামু? বুড়া বাপ-মারে কেমনে দেখমু! আমগোরে করোনায় মরতে অইবো না। বেশি দিন এমন চললে,আমরা এমনেই না খাইয়া মইরা যামুগা।

বাংলাদেশে এমন নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা কত? বিশ্বব্যাংকের ‘দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের ২ কোটি ৪১ লাখ লোক দৈনিক ৬১ টাকা ৬০ পয়সাও আয় করতে পারেন না। ৮ কোটি ৬২ লাখ লোকের দৈনিক আয় ৩ দশমিক ২ ডলার বা ২৭০ টাকার চেয়ে কম (প্রথম আলো, ২০.০১.২০১৯)।

কী অবাক হচ্ছেন? বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্বাস হচ্ছে না? আমারও হয় নি। কিন্তু, আমাদের সরকরি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০১৯ এর পরিসংখ্যানও তো কাছাকাছি তথ্যই দিচ্ছে। বিবিএস-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান (২০১৯) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪৬ লাখ মানুষের মধ্যে সোয়া তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিবিএস-র আরেকটি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় পৌনে ২০ লাখ এমন পরিবার (ব্যক্তি নয়) রয়েছে, যাদের প্রতি মাসের গড় আয় মাত্র ৭৪৬ টাকা (প্রথম আলো, ১৭.১০.২০১৯)।

এবার নিশ্চয়ই বিশ্বাস হয়েছে। তাই আসুন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি সদয় হই। নিজেদের সাধ্যানুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রতি একটু খেয়াল রাখি, যাতে তারা অভুক্ত না থাকে। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিটা একটু কমানোর চেষ্টা করি। করোনা সম্পর্কে তাদের বুঝাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করি। সম্ভব হলে সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজার, খাবার ও ওষুধ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করি।

ইতোমধ্যে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই মানবিক কাজগুলো শুরু করেছেন। তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এখনো তা সীমিত ও অপ্রতুল। গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ বিপুল নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারবে না। সমাজের উচ্চবিত্ত ও সুবিধাপ্রাপ্ত সবারই উচিত এ ভয়াবহ দুর্যোগে সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো। বাংলাদেশে ধনী মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

বিশ্বব্যাংকের মতে অতিধনী বৃদ্ধির হারের দিকে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ধনী বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে বিশাল একটি উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি রয়েছে। যাদের ক্ষুদ্র সাহায্যও এ অসহায় মানুষগুলোর কষ্ট লাঘবে বড় ভূমিকা রাখবে।
লেখক: প্রভাষক, লোক প্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর


ঢাকা/তারা/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়