ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কমাবেন যেভাবে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ৩০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কমাবেন যেভাবে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বয়স্কতার অনিবার্য অংশ হতে পারে, কিন্তু ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ রোগ) বয়স্কতার স্বাভাবিক অংশ নয়। এটা ঠিক যে ডিমেনশিয়া বয়স্কদের মধ্যে বেশি কমন, কিন্তু দেখা গেছে যে বয়স ৯০ পেরিয়ে গেছে এমন লোকদের মধ্যেও ডিমেনশিয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

ডিমেনশিয়া হলো এক ধরনের স্মৃতিভ্রংশতা। ডিমেনশিয়া রোগীদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম এতটা লোপ পায় যে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের চিন্তা করতে, স্মরণ করতে ও যুক্তির সাহায্যে সিদ্ধান্ত নিতে নিদারুণ সমস্যা হয়।

মস্তিষ্কের পরিবর্তনের প্রকৃতি অনুসারে ডিমেনশিয়ার কারণ ভিন্ন হতে পারে। এক প্রকার ডিমেনশিয়া হলো ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিসঅর্ডার, যা মধ্যবয়স্ক লোকদেরকে বেশি আক্রান্ত করে। বয়স্কদের মধ্যে ডিমেনশিয়া বিকাশের সবচেয়ে কমন কারণ হলো অ্যালঝেইমারস রোগ। অন্যান্য ডিমেনশিয়ার মধ্যে লেভি বডি ডিমেনশিয়া ও ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মিশ্র ডিমেনশিয়াও রয়েছে, যেখানে দুই বা ততোধিক ডিমেনশিয়া একত্রিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোকের অ্যালঝেইমারস রোগ ও ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া উভয়টাই থাকে।

ল্যানসেট কমিশনের একটি প্রতিবেদনে ২৪ জন ডিমেনশিয়া গবেষক বলেন যে, ৩৫ শতাংশ ডিমেনশিয়া আসে প্রতিরোধযোগ্য কারণ থেকে। তার মানে হলো আপনার পক্ষে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্বের ৪৭ মিলিয়ন লোক ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। তাদের তালিকায় আপনার নাম তুলতে না চাইলে এ প্রতিবেদনে আলোচিত করণীয়সমূহ মেনে চলতে পারেন।

* জ্ঞানার্জন চলমান রাখুন
যেসব লোক অন্তত মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি, তাদের ডিমেনশিয়া বিকশিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, বলা হয়েছে ল্যানসেট কমিশনের প্রতিবেদনে। অধিক শিক্ষার্জন কেবলমাত্র আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নই করে না, শেখার প্রক্রিয়া মস্তিষ্ককেও সচল রাখে। শিক্ষা ও অন্যান্য বুদ্ধিমত্তার উদ্দীপক দ্বারা প্রাথমিক জীবনে মস্তিষ্ককে সমৃদ্ধ করলে বয়স্ককালে মস্তিষ্কের কার্যক্রমের অবক্ষয় ঠেকানো সম্ভব হতে পারে, বলেন এ গবেষণার লেখকরা।

* শোনার ক্ষমতা পরীক্ষা করুন
৫৫ বছরের পর থেকে শ্রবণশক্তি হ্রাসের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। সম্ভবত শ্রবণশক্তির হ্রাস নিজেই ডিমেনশিয়ার কারণ নয়- সাধারণত বয়স্ক লোকদের ডিমেনশিয়া ও শ্রবণশক্তি হ্রাস উভয়েরই উচ্চ ঝুঁকি থাকে- শ্রবণশক্তির সমস্যা মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে সহজেই ব্যাহত করতে পারে। যেসব লোক কানে শুনেন না বা কম শুনেন তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়া আরো বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বধির লোকেরা সামাজিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলেন, যা মস্তিষ্কের অবক্ষয় দ্রুত করতে পারে, বলেন গবেষকরা। কখনো কখনো শ্রবণশক্তি হ্রাসের সঙ্গে অ্যালঝেইমারস রোগেরও সম্পর্ক থাকতে পারে, যদিও ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝেইমারস রোগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

* রক্তচাপ কমান
সুস্থ হার্ট ব্যতীত শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। এর ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা আপনার স্নায়ুকোষকে ড্যামেজ করতে পারে।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন
ডায়াবেটিসে ভুক্তভোগীদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেশি, যদিও গবেষকরা নিশ্চিত নন যে কেন। একটি তত্ত্ব হলো, যখন আপনি রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তারা বেশি পরিমাণে আপনার মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে। এর ফলে মস্তিষ্কে যে ড্যামেজ হবে তাতে ডিমেনশিয়া বিকশিত হতে পারে।

* ওজন কমান
স্থূলতা আপনার মধ্যে ডিমেনশিয়া বিকাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে- এর কারণ হতে পারে, স্থূলতা আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রাখে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রেখে আপনি তিনটারই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন।

* বাইরে হাঁটুন
বাইরে হাঁটা কেবলমাত্র স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে না, এটি নিজেই ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। যেসব বয়স্ক লোক হাঁটেন বা এক্সারসাইজ করেন তাদের ডিমেনশিয়া বিকাশের ঝুঁকি যারা শরীরচর্চা করেন না তাদের তুলনায় কম।

* ধূমপানকে না বলুন
ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে জেনেও আপনি নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট টেনে চলেন। এখন আমরা কনফিউজড যে নতুন আরেকটি ঝুঁকির কথা জেনে ধূমপানকে না বলবেন কিনা। যাইহোক, ধূমপায়ীরা ডিমেনশিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। গবেষকরা মনে করেন, দুটো বিষয় এতে অবদান রাখতে পারে। প্রথমত, ধূমপান হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর নয় এবং কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যার সঙ্গে ডিমেনশিয়ার সংযোগ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, ধূমপানে যে রাসায়নিক নির্গত হয় তা মস্তিষ্কের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। আপনি শরীরে কি ঢুকাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যায় ভুগতে পারেন, বিশেষ করে বুড়োকালে।

* মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে যান
ডিপ্রেশন ও ডিমেনশিয়ার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে, কিন্তু গবেষকরা নিশ্চিত নন যে কেন একটি আরেকটির সূত্রপাত করে। যাদের ইতোমধ্যে ডিমেনশিয়া আছে, তাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা, কিন্তু এটি পৃথক রিস্ক ফ্যাক্টরও হতে পারে। যেহেতু ডিপ্রেশন স্ট্রেস হরমোন, মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ ও হিপোক্যাম্পাসকে (মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ ও স্মরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত) বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এটি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিছু ডিপ্রেশন-বিরোধী ওষুধ অ্যামিলয়েড নামক প্রোটিনের উৎপাদন হ্রাস করতে পারে। উল্লেখ্য যে এ প্রোটিন জমে প্লেক সৃষ্টি করতে পারে।

* বন্ধুর সঙ্গে দেখা করুন
সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা ও ডিমেনশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। ডিপ্রেশনের মতো এক্ষেত্রেও গবেষকরা নিশ্চিত নন যে, কোনটি প্রথমে আসে। যাহোক, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় ব্যয় হলো মস্তিষ্ককে সচল রাখা ও নিজের উদ্যম বাড়ানোর একটি মজার উপায়- যাদের উভয়টাই মস্তিষ্কের কার্যক্রমের অবক্ষয় থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে। সামাজিক চক্র বড় করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
 
আরো পড়ুন:

* অ্যালঝেইমারস রোগের প্রাথমিক ১০ লক্ষণ​
* কিভাবে বুঝবেন যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা অ্যালঝেইমারস রোগ?​
* ৮ অভ্যাসে স্মৃতিশক্তি লোপ​





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়