ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সরকার কৌশলী, ব্যর্থ নয় : কাদের

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সরকার কৌশলী, ব্যর্থ নয় : কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে সরকার কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়কে কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিআরটিসি শ্রমিক-কর্মচারী লীগ।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ, নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের মতো বিষয়গুলো এখানো সমাধান করতে না পারায় তাদের মধ্যে অবিশ্বাস রয়ে গেছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপসহ আন্তর্জাতিকমহলের সমর্থন আদায়ে শেখ হাসিনা সরকার যতটা কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে, এটা অন্য কোনো দেশে সম্ভব হয়নি। এখানকার সমস্যাটা জটিল। এই জটিলতার মধ্যে ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধের উস্কানির মধ্যে যুদ্ধের পথে না গিয়ে শান্তির মাধ্যেমে আলাপ-আলোচনা করে এর সমাধান করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

‘এখানে ব্যর্থতার কোনো বিষয় নেই। এখানে কৌশলগত বিষয় রয়েছে। অনেক সময় দুই পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে যেতে হয়। এটিকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না। রোহিঙ্গারা কক্সবাজার সীমান্ত অতিক্রম করে আসার পর মিয়ানমার সরকার সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করছে, বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার সেখানে পরিবেশ সৃষ্টি করেনি, নিরাপত্তা দেয়নি, সিটিজেনশিপের মতো বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি। এজন্য তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি রোহিঙ্গারা। তারা অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছে। এর দায় মিয়ানমার সরকারকে নিতে হবে। সেজন্য আমরা যুদ্ধের পথে যাব না, আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখব। সেই কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকের দিনে যুদ্ধের পথে গিয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। শান্তিকে জয় করতে হবে। এই লোকগুলোকে সম্মানের সঙ্গে নিরাপত্তার নিশ্চিত করে ফেরত পাঠাতে হবে। সেজন্য চেষ্টা চলছে। আজকে যারা বলেন, এখানে কূটনৈতিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে, আমি বলব, এটা বিগ মিসটেক। সরকারের কূটনৈতিক প্রয়াস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই ব্যাপারে আমাদের মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারেরও বন্ধু আছে এবং শক্তিশালী বন্ধু আছে।’

‘বাস্তবতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছে বলে তারা বন্ধুহীন, এটা চিন্তা করার কারণ নেই। আজকের পৃথিবীতে ডিপ্লোমেসিটা ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি। এখানে জিও-ফিজিক্যাল কন্ডিশনে মিত্রতা সৃষ্টি হয়। ইকোনোমিক কারণে, ফিন্যান্সিয়াল কারণে মিত্রতা হয়। সবার একটা অংক আছে, হিসাব আছে। সেই হিসাবে মিয়ানমারের বন্ধুরা কম শক্তিশারী নয়। কাজেই আমাদের কৌশলী হয়ে এগোতে হচ্ছে, বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার পর্যটনসহ সব বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের লালন-পালন, আশ্রয় দেয়ায় আমাদের টুরিজম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইকোলজি অ্যাফেক্টটে হচ্ছে। আমাদের ইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, সেই পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের এক নেতা রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেখানে রোহিঙ্গারা ১১ লক্ষ, আমাদের ৪ লাখ। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবাই যে নিরীহ-শান্ত সেটি মনে করার কারণ নেই। তাদের মধ্যে হতাশা আছে, বেপরোয়া মনোভাব আছে। সেটির একটি বিচ্ছিন্ন প্রকাশ ঘটেছে। কাজেই এর জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে, এটা মনে করা সঠিক হবে না। পরিস্থিতি আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।’

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও এ সময় জানান ওবায়দুল কাদের।

বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে, জানিয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত না হলে বিআরটিসি লাভের মুখ দেখতে না। লাভের গুড় এখানে পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। লাভের গুড় যখন পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে তখন লোকসান হবে। যারা ওপরে আছেন ভাগাভাগি তারাই করেন।’

তিনি বলেন, আমি বিআরটিসির ব্যাপারে কঠিন হতে চলেছি। নতুন গাড়িগুলো এসে বহর আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। আপনারা সহযোগিতা করলে বিআরটিসিকে লাভবান করা সম্ভব। বিআরটিসি থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা হবে। আমি এই প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে দেখাব।’

আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুইয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৯/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়