খালেদার মুক্তি মানবিক চিন্তার প্রতিফলন : আ.লীগ
খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে তাকে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে মানবিক চিন্তাধারার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন জানিয়ে দলটির নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিএনপি নেত্রীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে তাকে শর্ত সাপেক্ষ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর রাইজিংবিডির কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা বাস্তববাদী এবং মানবিক চিন্তা ধারার প্রতিফলন হিসেবে দেখছি। প্রধানমন্ত্রী যে মাদার অব হিউম্যানিটি তা আরেক প্রমাণিত হলো।’
তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে যা আমাদের দেশও আক্রান্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার শারীরিক সুরক্ষার বিষয়টি জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার দিক থেকে মুল্যায়ন করে আইনি পথে তাকে জামিন দিয়েছেন। কারণ এই মুহূর্তে বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়া নিজের বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকলে বেশি সুরক্ষিত থাকবেন। এজন্য বিএনপি নেত্রীর পরিবারের লোকজনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন করেছে এবং মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা তাতে সাড়া দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না বরং মানবিকতাকে সবার উপরে স্থান দেন উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, ‘আমি আশা করি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই যে সুযোগটা পেলেন, এই সময়ে তিনি এমন কিছু করবেন না যাতে দেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির ক্ষতি হয়।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের মানবিক সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ বিষয়টিতে স্বাভাবিকভাবেই দেখছে। তার আত্মীয়, পরিবার-পরিজন আবেদনের পর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবসহ নানা কারণ বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই সংকটকালীন সময়ে সরকার যে মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’
‘প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেত্রীর প্রতি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনা বিশ্ব মানবতার নেত্রী’-বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। এখানে সব কিছুর উর্ধ্বে মানবিকতা স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ আশা-ভরসার জায়গা এখানো আছে, নষ্ট হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনা যে মানবিকতার বাতিঘর, বিশ্ব মানবতার নেত্রী, যেটা জাতিসংঘ থেকে তাকে উপাধী দেওয়া হয়েছে সেটি আবারো উঠে এলো।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের অনুরোধ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাপীই এখন খারাপ সময়। এই সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত দেওয়া সরকারের প্রশংসা করছে দেশের মানুষ। আইনের মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক মূল্যাবোধকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেটাই আবারো প্রমাণিত হলো।’
আগামী ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিএনপি নেত্রীর মুক্তির শর্ত হচ্ছে, এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। ২৫ মাস সাজা ভোগের পর এমন এক সময়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, যখন নভেল করোনাভাইরাসের মহামারিতে পুরো বিশ্বজুড়ে চলেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পারভেজ/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন