ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সরকারি চাকরি নয়, রাজনীতি বেছে নিয়েছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৮, ১৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সরকারি চাকরি নয়, রাজনীতি বেছে নিয়েছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ

স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। কিন্তু চাকরির সুযোগ ফিরিয়ে দিয়ে জনসেবার লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিকে বেছে নেন তিনি।

সেই রাজনীতির পাশাপাশি কিছুদিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেন শেখ মো. আব্দুল্লাহ। শিক্ষকতা ও আইনপেশায়ও যুক্ত ছিলেন তিনি। শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে আওয়ামী যুবলীগে যোগদানের মধ্যদিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। যুবলীগের রাজনীতি হয়ে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হন আব্দুল্লাহ। শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাদামাটা রাজনীতিক শেখ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজনে পরিণত হন। তারই পুরস্কার হিসেবে সর্বশেষ ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় শনিবার (১৩ জুন) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

শেখ আব্দুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা আলহাজ্ব মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন। তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম এবং  ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষাজীবন শেষে তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই শেখ আব্দুল্লাহ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। গত শতকের ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল। ১৯৬৬ সালের সেই ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন ।

তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন শেখ আব্দুল্লাহ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ মো. আব্দুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শাহাদাতবরণ করলে দেশ এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের জীবনে দুর্দিন নেমে আসে। এ সময় গোপালগঞ্জ আওয়ামীলীগকে সংগঠিত রাখতে শেখ মো. আব্দুল্লাহ লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে অকুতোভয় সৈনিকের ভূমিকা নিয়ে আপোষহীনভাবে দলের প্রতি অনুগত থাকেন এবং দলের নিবেদিতকর্মী সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ আব্দুল্লাহ কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদান করেছেন। এছাড়া তিনি অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন।

শেখ মো. আব্দুল্লাহ দীর্ঘ দিন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ছিলেন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা বোর্ডসমূহের শিক্ষা সনদের যে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তা অর্জনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

 

নঈমুদ্দীন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়