ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সুন্দরবনের ক্ষতিতে অপরাজনীতি-উদাসীনতা দায়ী : হাফিজ

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দরবনের ক্ষতিতে অপরাজনীতি-উদাসীনতা দায়ী : হাফিজ

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনায় জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি দাবি করে এজন্য সরকারের উদাসীনতা ও অপরাজনীতিকে দায়ী করেছে বিএনপি।

দলটির বলছে, নৌ-পথ ও অভয়ারণ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সমন্বিত নীতিমালা নেই। জাহাজডুবির পর বনবিভাগ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের বিপরীথমুখী বক্তব্যের ফলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের চরম অদক্ষমতা ও পারস্পরিক অসহযোগিতা দৃশ্যমান হয়েছে।

সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনের পর শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় ফার্নেস অয়েল বহনকারী একটি ট্যাংকার। এতে ঘটনায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই এলাকার জীববেচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

দুর্ঘটনার পর গত ২২ ডিসেম্বর সরেজমিনে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন পানি সম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি সুন্দরবনে যায়। সঙ্গে ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি প্রাক্তন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুজ্জামান, পরিবেশবিদ ড. ফরিদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম, খুলনা জেলা বিএনপি সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনা ও পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের নেতা কামরুল ইসলাম।

বুধবার রাতেই প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেয় তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ট্যাংকারডুবির ৪৮ ঘণ্টার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্ধার কার্যক্রম ও জরুরিভিত্তিতে তেল অপসারনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনের ওপর নেমে আসে মহাবিপর্যয়।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার ৬ দিন পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে সুন্দরবনে তেল দূষণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।’

দুর্ঘটনার পরপরই নৌবাহিনী কিংবা কোস্টগার্ডকে তেল অপসারনের কাজে নিয়োগ করা হলে ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি।  

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সুন্দরবনের শ্বাসমূলের এক থেকে দেড় মিলিমিটার তেলের আস্তরণ গাছের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। তেলে বনসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, জীববৈচিত্র্য এবং সেখানকার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১শ’ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা হলেও এটি ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’

হাফিজ দাবি করেন, স্থানীয়ভাবে যারা নিজ উদ্যোগে খালি হাতে তেল অপসারন করেছেন তাদের এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হয়েছে। এটি ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন।

তদন্ত কমিটির এই প্রধান জানান, ডুবে যাওয়া ‘ওটি সাইদার্ন ষ্টার-৭’ জাহাজটি তেল বহনকারী নয়, সেটি বালু ও পাথর টানার জীর্ণ কার্গো ছিলো। এটি তেল বহনের অনুপযুক্ত। এর কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না এবং এটি অবৈধ রুটে বেআইনিভাবে তেল পরিবহনে নিয়োজিত ছিল। এক্ষেত্রে সরকারের নিস্ক্রিয়তা অমার্জনীয়।

ওই দুর্ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এই জাহাজের মালিক সরকারের এক মন্ত্রীর শ্যালক। জাহাজের মাস্টারের নিখোঁজ হওয়া এবং মৃত্যু রহস্যজনক। এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

বর্তমান ‘অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও দুঃশাসন’ বন্ধ না হলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন।

সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৬ দফা সুপারিশ পেশ করেন তদন্ত কমিটির প্রধান। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য এর মধ্য দিয়ে সকল ধরনের নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা; অবিলম্বে ঘষিয়া-মংলা চ্যানেল চালু করতে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, সেজন্য অবৈধ বাঁধ অপসারন; সুন্দরবনের ২৫ কি.মি. এলাকার মধ্যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পসহ লাল শ্রেণির শিল্পস্থাপন বন্ধ করা; নৌপথে টহল জোরদার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে নিরাপত্তা জোরাদার; সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাসমূহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ, এ লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা; ট্যাংকারডুবির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনা, খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামন মনি, বাগেরহাট জেলা সভাপতি আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৪/রেজা/দিলারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়