ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১২ ১৪৩১

দেশবাসী নতুন করে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা নেতৃত্ব মেনে নেবে না: জামায়াত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৮:৩৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দেশবাসী নতুন করে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা নেতৃত্ব মেনে নেবে না: জামায়াত

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রীতি সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ব‌লে‌ছেন, লাগামহীন দুর্নীতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নির্লজ্জ ষড়যন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেশে একটি সফল বিপ্লব ও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এ দেশের মানুষ নতুন করে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও চরিত্রহীন নেতৃত্ব মেনে নেবে না।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তি‌নি এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুর রব।

দারসুল কোরআন পেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. অধ্যাপক আব্দুস সামাদ। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও জামাল উদ্দীন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ হচ্ছে আল্লাহর বিধান ও রাসুল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লা‌মের নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। মূলত, আমাদের আদর্শ হচ্ছে বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) আদর্শ; তার সংগ্রামই হলো আমাদের সংগ্রাম। আল্লাহ তায়ালা সকল দ্বীনের ওপর দ্বীনে হকের বিজয় দানের জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল রাসুলের (সা.) হাত ধরেই। এ বিজয়ের আগেই আল্লাহ তায়ালা মোমিনদের জন্য সুসংবাদ হিসাবে সুরা নসর নাযিল করেছিলেন। সে সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, দলে দলে মানুষ ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। এখন আমাদের দেশে সে পরিস্থিতি অনুভূত হচ্ছে। মানুষ দলে দলে ইসলামের পথে অগ্রসরমান। তাই, আমরা যদি আমাদের যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা, নিষ্ঠা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। 

তিনি ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ব‌লেন, রুকনিয়াত একটি মানের নাম। মূলত, রুকন হওয়া আমাদের টার্গেট না, জীবনের উদ্দেশ্যও নয়; বরং আমাদের মূল টার্গেট হলো—প্রকৃত মোমিন হওয়া। পবিত্র কালামে হাকিমের সুরা মোমেনুনে আল্লাহ তায়ালা মোমিনদেরকে সফল ঘোষণা করেছেন। মোমিন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনকে সহজ করে দেয় রুকনিয়াত। মূলত, এটি মোমিন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ মাত্র। বস্তুত, ব্যক্তিজীবনে সবকিছু দ্বীনের আদলে পরিবর্তনের নামই রুকনিয়াত। তাই, ব্যক্তির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই একটি সফল বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের দীর্ঘদিনের অপশাসন-দুঃশাসনে এ দেশে সেকুলারিজমের শেকড় অনেক গভীর পৌঁছে গেছে। গণপ্রশাসনে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের প্রতিভূরা এখনো বহাল তবিয়তে। একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। তাই, দেশ-জাতি ও দ্বীনের বৃহত্তর স্বার্থেই রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ করতে হবে। জাতীয় পাঠ্যসূচি থেকে ইসলামবিরোধী সকল অনুসঙ্গ অবিলম্বে অপসারণ করা দরকার। একই সাথে দায়ীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। মূলত, ফ্যাসিবাদের শেকড় এ দেশ থেকে চিরতরে উপড়ে ফেলতে হবে। এজন্য আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য এবং দৃঢ়ভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে যখন যে নির্দেশ আসে, তা হজরত আবু বকরের (রা.) মতো অকুণ্ঠ চিত্তে মেনে নিতে হবে। তিনি মিরাজের ঘটনা নিয়ে যেভাবে সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, আমাদেরকেও একই আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই এ দেশ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হবে। অভ্যুদয় ঘটবে নতুন এক বাংলাদেশের। 

মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, অপশাসন-দুঃশাসন, গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সকল সময়ের সীমা লঙ্ঘন করায় ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম এক অভিনব আঙ্গিকে একটি সফল ও স্বার্থক আন্দোলন করেছে। তারা প্রচলিত হরতালের বিপরীতে বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন এবং অসহযোগ আন্দোলন করে দেখিয়ে দিয়েছেন, এ দেশের মানুষ সব সময় অপরাজেয় ও দুর্জেয়। তাদের সে ডাকেই সারা দিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। এই আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। 

তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়